‘মেঘের নৌকা তুমি, তোমায় ভাসাব আকাশে...’ এমন চমৎকার কণ্ঠের গান শুনে শ্রোতারা চকিত চমকিত হয়ে উঠলেন, হবেনই বা না কেন, এ যে এই প্রজন্মের আকাশছোঁয়া শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী কোনালের জাদুকরী কণ্ঠ। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ‘প্রহেলিকা’ চলচ্চিত্রের রোমান্টিক গান মেঘের নৌকা। কোনালের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
শুরুতেই মেঘের নৌকা প্রসঙ্গ। গানটি প্রকাশের পর থেকে সর্বস্তরে প্রশংসা কুড়াচ্ছে, অনুভূতি কেমন?
এই ভালো লাগার কোনো সীমা নেই। মানে আনন্দের ভেলায় ভাসছি আমি। কারণ একটি ভালো গান পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। সারা জীবনে যদি একটি গানও শ্রোতারা সাদরে হৃদয়ে ঠাঁই দেয়, তাহলে এর চেয়ে বেশি সৌভাগ্য আর কী হতে পারে। দৃষ্টিনন্দন লোকেশন, আসিফ ইকবালের হৃদয়ছোঁয়া লিরিক, ইমরানের চমৎকার সুর ও কণ্ঠ আর অভিনেতা মাহফুজ ও বুবলীর অনবদ্য এক্সপ্রেশন গানটিকে হিমালয়ের চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। এমন একটি গানে কণ্ঠ দিতে পেরে আমি ধন্য। ধন্যবাদ জানাই ছবির নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীকে।
মেঘের নৌকা আপনার সংগীত ক্যারিয়ারের জন্য কতটা ইতিবাচক?
গানটি আমার সংগীত ক্যারিয়ারে নতুন পালক যোগ করে দিয়েছে। যে কোনো হৃদয় স্পর্শ করা গান একজন শিল্পীর ক্যারিয়ারের জন্য সত্যি খুবই ইতিবাচক। এমন প্রাপ্তিতে আমি পুলকিত। সারা জীবন যেন এমন গান দিয়ে শ্রোতাদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিতে পারি শয়নে-স্বপনে আমি সেই প্রত্যাশা নিয়েই এগোচ্ছি।
চলচ্চিত্র ও সাধারণ গান এখন আর আগের মতো জনপ্রিয় হচ্ছে না, সংখ্যাও কম, এ কথার সঙ্গে আপনি কী একমত?
অবশ্যই, বিষয়টি দিবালোকের মতো সত্য। কয়েক বছর আগেও যখন গান করতাম তখন দেখা যেত শ্রুতি রেকর্ডিং স্টুডিওতে একটি গান শেষ করে ছুটতে হতো কাকরাইলের স্টুডিওতে। মানে দিনে কমপক্ষে ২/৩টি গানে কণ্ঠ দিতে হতো। দুঃখজনক হলো, গত ২/৩ বছর ধরে এই গান তৈরি হতাশাজনকভাবে কমে গেছে। বিশেষ করে চলচ্চিত্র নির্মাণে ভাটা পড়ার কারণে চলচ্চিত্রের গানে উদ্বেগজনক হারে কমেছে। একই সঙ্গে বেশির ভাগ চলচ্চিত্রের গানের মান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। আসলে চলচ্চিত্রের গানই একজন শিল্পীর উত্থানের জন্য বড় প্ল্যাটফরম। কারণ চলচ্চিত্রের গান দ্রুত মানুষের মুখে ফেরে। তাই এই অঙ্গনের এমন খরা মনে হতাশাই বয়ে আনে। চলচ্চিত্র ছাড়া অন্য গানের অঙ্গনের অবস্থা ভালোই বলা চলে। কারণ অন্য গান প্রচুর হচ্ছে, শিল্পীরা সেগুলো নিজেদের মতো করে নানা মাধ্যমে প্রকাশ করছে। নিজেদের সেরাটা দেওয়ার মাধ্যমে শ্রোতাদের মনে বেঁচে থাকছে।
চলচ্চিত্র ও নাটকের গানে সমান ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেমন লাগছে?
কণ্ঠশিল্পী হিসেবে গানের মাধ্যমে দর্শকের হৃদয়ের কাছাকাছি যেতে পারাটা খুবই সৌভাগ্যের। যে পরম পাওয়াটা আমার ক্ষেত্রে ঘটছে। নাটকের গান নিয়েও আমি এখন বেশ ভালো সময় পার করছি। এখন নতুন ট্রেন্ড হিসেবে নাটকের জন্য প্রচুর গান হচ্ছে। তাই এ ক্ষেত্রে আমার ব্যস্ততাও বেড়েছে। ভ্যালেন্টাইন ডে তে আমার তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে। গানগুলো দর্শক অনাবিল ভালোবাসায় ভাসিয়েছে। শ্রোতাদের অগণিত প্রশংসা কুড়িয়েছি ও ইউটিউবে অসংখ্য ভিউ হয়েছে। বলতে পারেন, ব্যস্ততা আর সাফল্য আমার জীবনে ভাগ্যদেবী হয়ে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে।
জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে ইউটিউব ভিউকে কতটা যথাযথ মনে করেন?
ভিউ খারাপ কিছু নয়। কিন্তু ভিউ কখনই কোয়ালিটি বা জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হতে পারে না। কারণ সবাই জানে টাকা দিয়ে ভিউ বাড়ানো যায়, কিন্তু টাকার বিনিময়ে কোনো শিল্পীকে বা প্রশংসা কেনা যায় না। তাই মানুষের মুখের প্রশংসাই একজন শিল্পীর জনপ্রিয়তার প্রধান মাপকাঠি বলে আমি মনে করি।
স্টেজে সরাসরি গান শোনানোর ব্যাপারটা কেমন লাগে?
শ্রোতাদের সরাসরি গান শোনানোর মাধ্যমেই নিজের শিল্পী সত্তার পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায়। কারণ স্টেজে ওঠার পর শ্রোতাদের রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে শিল্পী ও শ্রোতার হৃদয়ে একটি মেলবন্ধন তৈরি হয়। যেটি প্রকৃত শিল্পী হয়ে ওঠার প্রধান নিয়ামক বলে আমি মনে করি। কারণ এতে শিল্পীর উৎসাহের পারদটা সপ্তমে চড়ে যায়।
কুয়েত ছেড়ে যখন গাওয়ার জন্য দেশে এলেন, তখন কি মনে হয়েছিল খ্যাতি পাবেন? নিজের আলাদা একটা অবস্থান হবে?
এক্ষেত্রে একটা মজার ঘটনা বলি, আমি যখন একদম ছোট, মানে ৩/৪ বছরের বাচ্চা তখন এক জ্যোতিষী আমার হাত দেখে মাকে বলেছিলেন, এই মেয়ে একদিন অনেক নাম কুড়াবে। আসলে আমার এই অবস্থানের জন্য আমি কখনই প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু কাজের প্রতি ডেডিকেশন ও দেশের প্রতি ভালোবাসা আজ আমাকে এই অবস্থানে এনে দিয়েছে, জাতীয় সম্মানও অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। শুধু মাতৃভাষায় গান গাওয়ার জন্য কুয়েত ছেড়ে দেশে এসেছি।
আপনি সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডেও যুক্ত। সুযোগ পেলে ইউনিসেফের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করবেন?
উফ, ইউনেসেফের হয়ে কাজ করা তো আমার ড্রিম। আমি পড়াশোনা করেছি শিশুর আর্লি ডেভেলপমেন্ট নিয়ে। গান নিয়ে তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের মানসিক বিকাশে কাজ করতে চাই। এ বিষয়ে থিসিস করতে চাই। আমি মনে করি, শিশুর জীবন-মান উন্নয়নে সংগীত হচ্ছে অপরিহার্য উপাদান।