বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
রিভিউ

চমকিত ঝলকিত আলোকিত ছিল ঈদ ইত্যাদি

শোবিজ প্রতিবেদক

চমকিত ঝলকিত আলোকিত ছিল ঈদ ইত্যাদি

প্রতিবারের মতো এবারও হাজার হাজার অনুষ্ঠানের ভিড়ে ঈদে ‘সেরার আসনটি ছিল ইত্যাদির দখলে’। দর্শক পছন্দের শীর্ষে। আর এ জন্যই  ইত্যাদি পরিণত হয়েছে ঈদের ঐতিহ্যে। এবারের ইত্যাদিতে ছিল চমকের পর চমক, নান্দনিক সব পর্বের সঙ্গে ছিল শিক্ষণীয় বার্তা। হানিফ সংকেত দর্শকদের প্রতীক্ষার মূল্যায়ন করে বিচিত্র বিষয়ে সাজিয়েছেন অনুষ্ঠান। যা ছুঁয়ে গেছে কোটি মানুষের হৃদয়। ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে’ এবারের ইত্যাদিতে এই গানটি পরিবেশন করা হয় অর্ধশতাধিক শারীরিক প্রতিবন্ধী অদম্য মানুষের হুইলচেয়ার নৃত্যের মাধ্যমে। দর্শকরা অবাক বিস্ময়ে দেখেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর তাক লাগানো অসাধারণ নৃত্য। শিবলী-নিপা জুটি অনেক নৃত্য করেছেন কিন্তু এবারের ইত্যাদির নাচটি ছিল বেশ বর্ণাঢ্য ও ভিন্নরকম। বিশাল আয়োজনের এই নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছেন দেড় শতাধিক নৃত্যশিল্পী। টেলিভিশন অনুষ্ঠানের নাচে এটাও সম্ভবত একটি রেকর্ড।  সেলিম, হাকিম, সাব্বির ও জয়ের স্বকণ্ঠে গাওয়া মোবাইল আতঙ্ক নিয়ে সুর-ছন্দের আড্ডাটি ছিল বেশ উপভোগ্য। ভালো লেগেছে সময়োপযোগী তিনটি সামাজিক ব্যাধি- মাদকাসক্ততা, যৌতুক প্রথা ও ইভ টিজিংয়ের মতো সিরিয়াস বিষয় উপস্থাপন করে তার মাধ্যমে দর্শকদের সচেতন করার প্রচেষ্টা। তিন জনপ্রিয় নায়িকা আজমেরী হক বাঁধন, সাবিলা নূর ও নাজিফা তুষির সঙ্গে দর্শকদের তাৎক্ষণিক অভিনয় ছিল অত্যন্ত উপভোগ্য ও সময়োপযোগী। ইত্যাদি মিউজিক্যাল ড্রামায় উপস্থাপিত তিনটি হৃদয়স্পর্শী বিষয় অনেকের মনকেই নাড়া দিয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে কর্মরত এসব ভারবাহী মানুষের কথা আমরা কজন চিন্তা করি? এই পর্বটি অনেকের চোখে পানি এনে দিয়েছে। দীর্ঘদিন পর রিচি সোলায়মান আর রবি চৌধুরীকেও দেখা গেল অভিনয়ে। শুরুতেই দেশে পোস্টার উৎপাতের ওপর সময়োপযোগী নাট্যাংশটি ছিল প্রশংসনীয়। যেখানে দোয়াপ্রার্থীকে দোয়ার পরবর্তে বদদোয়া করতে দেখা যায়। নানা রঙ্গসহ একডজনেরও বেশি তির্যক নাট্যাংশ আমাদের সমাজের নানা অসংগতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এবারের ইত্যাদি। আমাদের সমাজের মুখোশধারী মানুষের প্রতীক হিসেবে মুখোশ দিয়ে নির্বাচিত চারজন দর্শকের সঙ্গে একাই অভিনয় করলেন জাহিদ হাসান। একই মানুষের নানা রূপ তুলে ধরা হয়েছে এই পর্বটিতে। ইত্যাদিতে দর্শকদের প্রতীক্ষার একটি বিশেষ পর্ব হচ্ছে বিদেশি নাগরিকদের অংশগ্রহণে অভিনয় ও নৃত্য। এবারও ছিল বিদেশিদের নিয়ে বিশাল আয়োজন। বিদেশিরা তাদের চমৎকার অভিনয় নৈপুণ্যে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে মোবাইলের ব্যবহার ও অপব্যবহার সম্পর্কে চমৎকার একটি নাট্যাংশে অভিনয় করেছেন। সঙ্গে ছিল বিদেশিদের দৃষ্টিনন্দন নাচ। হানিফ সংকেতের পরিচালনায় বিদেশিদের অভিনয় নৈপুণ্য ও নৃত্যছন্দ দর্শকদের যেমন বিনোদন দিয়েছে তেমনি তাদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের সংস্কৃতিও। ঈদ ইত্যাদির শেষ আয়োজনে ছিল সাবিনা ইয়াসমিনের পরিবেশনায় একটি দেশাত্মবোধক গান। যেখানে প্রথমবারের মতো পারফর্মেন্স করেছেন আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের গৌরব নারী ফুটবল ও নারী ক্রিকেট দল। মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের লেখা ‘পতাকার লাল সূর্যটা মাগো, প্রতিটি হৃদয়ে জ্বেলে দাও’ গানটিতে খেলোয়াড়দের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন শতাধিক নৃত্যশিল্পী। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে জাগরণের এই গানটি দিয়ে শেষ হলো ইত্যাদি। প্রতিটি পর্বের শুরুতে হানিফ সংকেতের বুদ্ধিদীপ্ত অনুপ্রাস ও ছন্দের ব্যবহার ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ। বুঝে উঠার আগেই দ্রুত শেষ হয়ে গেল ৭৫টি মিনিট। আর এটুকু সময়ে ইত্যাদি আমাদের হাসাল-কাঁদাল-শিখাল অনেক কিছু। ঈদে চমৎকার একটি অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য হানিফ সংকেতকে ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর