অভিনেত্রী চম্পা। দুই বাংলার চলচ্চিত্র এবং ছোট পর্দায় দক্ষ অভিনয় দিয়ে সহজেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। পাঁচবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ভারতে জ্যোতি বসু পুরস্কার, বেঙ্গল জার্নালিস্ট অ্যাওয়ার্ড এবং টেলিসিনে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ‘তিন কন্যা’-খ্যাত এ অভিনেত্রী। তাঁর বলা কথা তুলে ধরা হলো-
অনেক ধরেই অভিনয়ে নেই আপনি, কেন?
এখনতো আর আগের মতো গল্পপ্রধান ছবি তেমন হয় না। আর সিনিয়রদের নিয়ে কেউ গল্পও তেমনভাবে লিখেন না। এমন সব ছবিতে অভিনয়ের আগ্রহ নেই আমার। বলতে পারেন তাই বাধ্য হয়েই অভিনয় থেকে দূরে আছি। তবে মনের মতো গল্প ও চরিত্র পেলে অবশ্যই অভিনয়ে ফিরতে চাই।
এফডিসিকে ঘিরে আপনার স্মৃতি কেমন?
আমার স্মৃতিতে ভাসে আলো ঝলমলে এফডিসি। কী চমৎকার পরিবেশ। তখন অনেক কালারফুল ছিল এফডিসি, কখনো কখনো সারা রাত শুটিং করতেন আমার দুই বোন। আমি সারা রাত জেগে শুটিং দেখতাম। ওই দৃশ্য কখনো ভুলবার নয়।
নিজে অভিনয়ের জন্য এফডিসিতে গেলেন কখন?
আমি সিনেমা করতে এফডিসিতে যাই আরও পরে। আমার প্রথম সিনেমা ‘তিন কন্যা’। সেটির জন্য যখন এফডিসিতে ঢুকলাম, সে অনুভূতি ছিল ভিন্ন। বাসা থেকে একটি মাত্র সিনেমা করার অনুমতি পেয়েছিলাম। প্রথম দৃশ্যটার কথা মনে পড়ে। প্রথম দৃশ্যে কোনো সংলাপ ছিল না। কেবল হেঁটে হেঁটে আসার একটি দৃশ্য ছিল। এক টেকেই ওকে হয়েছিল।
তখন সিনেমা জগতের পরিবেশ কেমন ছিল?
ওই সময় সিনিয়রদের দেখতাম সবার সঙ্গে কী সুন্দর সুসম্পর্ক বজায় রাখছেন। শুটিংয়ের ফাঁকে তাঁরা কথা বলতেন। ওটাকে আড্ডা বলব না। গল্পগুলোও ছিল অভিনয় নিয়ে। পরের দৃশ্য কী হবে তা নিয়ে কথা হতো। একটি সিনেমা কী করে ভালো করা যায় তা নিয়ে সবাই কথা বলতেন। সিনিয়ররা একজন আরেকজনকে সম্মান করতেন খুব।
অভিনয়জীবনের মজার স্মৃতি নিয়ে কিছু বলুন-
অভিনয়জীবনে কত স্মৃতি আছে। ‘ভেজা চোখ’ সিনেমার কথা মনে পড়ছে। ওই সময়ে ‘ভেজা চোখ’ খুব হিট হয়েছিল। এ সিনেমার শুটিং করেছিলাম ভারতে তাজমহলের সামনে, মশৌরীতে এবং আমাদের দেশে। তাজমহলের সামনে শুটিং করতে গিয়ে খুব সমস্যা হতো। প্রচণ্ড গরম ছিল তখন। ডাক্তার সঙ্গেই থাকতেন। একটি দৃশ্য করে এসে প্রেসার মাপা হতো। স্যালাইন খাওয়া হতো। অনেক কষ্ট করে ‘ভেজা চোখ’ সিনেমার শুটিং করি। এ সিনেমার কিছু দৃশ্য ছিল আমাদের দেশের হিমছড়িতে। আমি নিচে আর ইলিয়াস কাঞ্চন পাহাড়ের ওপরে। হঠাৎ ইলিয়াস কাঞ্চন পাহাড় থেকে পড়ে যান। আমরা ভেবেই নিয়েছিলাম তিনি আর বেঁচে নেই। কিন্তু ওপরওয়ালার রহমতে তিনি বেঁচে যান। এসব কথাও মনে পড়ে।
সেসব দিনের কথা ভাবতে কেমন লাগে?
মনে আছে, সেসময় ঢাকার বাইরে শুটিং করতে গেলেই অসম্ভব ভিড় হতো। গ্রামের পর গ্রাম থেকে মানুষ দেখতে আসতেন। অনেকবার এমন হয়েছে- ভিড়ের কারণে শুটিং স্পটে পুলিশ আনতে হয়েছে। পুলিশ আনার পরও কাজ হয়নি। শেষে শুটিং বন্ধ করে চলে আসতে হয়েছে। এসব ঘটনা এখনো চোখে ভাসে অবসর সময়ে।
প্রথম নায়িকা হওয়ার অনুভূতি কেমন ছিল?
খুবই মনে পড়ে প্রথম নায়িকা হওয়ার সিনেমাটির কথা। ‘নিষ্পাপ’ সিনেমায় প্রথম নায়িকা হই আমি। এটি মুক্তির পর শুরু হয়ে যায় খুশির খবর। এত এত মানুষ সিনেমাটি দেখেছেন, কী আর বলব। নায়িকা হিসেবে আমার জার্নিটা ছিল আনন্দের। নায়ক আলমগীর বলতেন, ‘নিষ্পাপ’ সিনেমাটি হচ্ছে তাঁর প্রোডাকশনের সোনার হাঁস, যে শুধু সোনার ডিম দেয়। আসলে ‘নিষ্পাপ’ করার পর সিনেমার সঙ্গে লতার মতো জড়িয়ে গেলাম।