ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পার্নো মিত্র। তিন বছর আগে মোশাররফ করিম-জর্জসহ বেশ কিছু শিল্পীর সঙ্গে তিনি ফজলুল তুহিনের ‘বিলডাকিনী’র শুটিং করেছেন; যা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ২৪ জানুয়ারি। এ সিনেমা নিয়ে পার্নোর সঙ্গে কথোপকথনে - পান্থ আফজাল
‘বিলডাকিনী’ বাংলাদেশে অভিনীত আপনার দ্বিতীয় সিনেমা। শুটিং অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রথম সিনেমা ‘ডুব’-এর পরিচালক ছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তখন শহুরে গল্পে কাজ করেছিলাম। তবে বিলডাকিনী সিনেমাটি একটু ভিন্ন ধাঁচের। সুন্দর একটি গ্রামে শুটিং করেছি। সেখানকার মানুষগুলো খুবই ভালো ও আতিথেয়তাপরায়ণ। আমাদের সহযোগিতাসহ খুব আদর করেছেন। রাতে আত্রাই নদীতে বেশির ভাগ শুট হয়েছে। শুটিং আশপাশের বাড়ির মানুষই আমাদের প্রচুর যত্ন করেছেন, খেয়াল রেখেছেন। বহু জায়গায় শুটিং করেছি কিন্তু এমন ভালোবাসা কোথাও পাইনি। অভিজ্ঞতা আসলেই চমৎকার ছিল।
কনকনে ঠান্ডার মধ্যে আত্রাই নদীতে শুটিং...
ওই এলাকা প্রচণ্ড ঠান্ডা! যেহেতু আত্রাই নদীতে নৌকায় অনেকক্ষণ ধরে শট দিতে হয়েছে তাই একটু কষ্ট তো হয়েছেই। তারপরও গল্প এবং সংলাপ বুঝে নিজের মতো করে অভিনয় করেছি। আর টিমের সবাই অনেক ভালো। সবার কাছ থেকে ভালো সাপোর্ট পেয়েছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশের অনেক বিষয় জানতে পেরেছি।
সিনেমাটির গল্প ও নির্মাণ নিয়ে একটু ধারণা দেওয়া যাবে?
কেন নয়! এটিতে নারীশক্তি ও মাতৃত্বের স্বাধীনতার গল্প তুলে ধরা হয়েছে। আজকের দিনে ভূমি দখলদারের অত্যাচার থেকে মানুষ রক্ষা পাচ্ছে না, একালের নারীরা এখনো নির্যাতনের শিকার, সহায়হীন মানুষের আহাজারি চারদিকে। তবু এ অসমতল পৃথিবীতে মানুষ আশায় বুক বেঁধে নতুন স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে ভালোবাসার শক্তিতে বাঁচতে চায়। এ ছবির মাধ্যমে দর্শকরা সেই বাস্তবতার মুখোমুখি হবে। এটি সরকারি অনুদানের সিনেমা। নূরুদ্দীন জাহাঙ্গীরের উপন্যাস অবলম্বনে ‘বিলডাকিনী’ বানিয়েছেন ফজলুল কবীর তুহিন। সিনেমাটোগ্রাফার ছিলেন সাহিল রনি।
আপনার চরিত্রটি কেমন ধরনের? আর মোশাররফ করিমের?
আমার চরিত্রের নাম হানুফা, যে কি না গল্পের প্রধান চরিত্র। খুনের দায়ে আমার স্বামীকে জেলে পাঠায় স্থানীয় চেয়ারম্যান। একসময় ধর্ষণের শিকার হয়ে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়লে সমাজে একঘরে করে রাখা হয় আমাকে। সেই দুঃসময়ে হানুফার পাশে দাঁড়ায় মানিক মাঝি মানে মোশাররফ করিম। এরপর কী হয়, তা হলে গিয়ে দেখতে হবে।
সহশিল্পী হিসেবে মোশাররফ করিমের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করতে কেমন লেগেছে?
তাঁর কিছু কাজ দেখেছি। নাটক, চলচ্চিত্র দেখেছি। ফারুকী ভাইয়ের ‘টেলিভিশন’ সিনেমাটাও দেখা। অসাধারণ! তিনি খুবই ব্রিলিয়ান্ট অ্যাক্টর! দারুণ মানুষও। আর যখন শুনেছি বিলডাকিনীতে তিনি অভিনয় করছেন, আমি খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। শুটিং সেটে এসে বুঝেছি, তিনি ভীষণ হেল্পফুল। অ্যাক্টিংটা দারুণ বোঝেন। এপার বাংলায় তাঁর অনেক ভক্ত রয়েছে। আমি কিন্তু তাঁর অভিনয়ের পুরনো ভক্ত। সিনেমায় বেশ কিছু দৃশ্য তাঁর সঙ্গে। আরেকজনের কথা বলতেই হবে। তিনি জর্জ ভাই। তাঁর সঙ্গে অনেক দৃশ্য করেছি। তিনি সত্যিই দারুণ অভিনয় করেন।
এ দেশের নাটক, চলচ্চিত্র, ওটিটি কি দেখা হয়?
দেখেছি অনেক। ওটিটি ও ইউটিউবের কল্যাণে আমরা ওখানে বসেই বাংলাদেশের অনেক শিল্পীর ভালো ভালো কাজ দেখতে পাই। আমাদের ওখানে তো মোশাররফ, চঞ্চল, খুশি খুবই জনপ্রিয়। জয়া আপা, বাঁধন, নওশাবা, অপূর্ব, শাকিব, পরী, মিথিলারাও তো অনেক কাজ করছেন। টেলিভিশন, তাকদীর, মহানগরসহ বেশ কিছু ওয়েব দেখেছি। শুনেছি ওয়েবে এ দেশের তারকারা দারুণ করছে। দেখব এক এক করে।
এ দেশে আপনাদের চ্যানেলের রয়েছে অবাধ বিচরণ। অথচ আমাদের চ্যানেল উপেক্ষিত, অভিমত কী?
এটা আসলেই ভাববার বিষয় সবার। অনেক আগে থেকেই সবার দাবি ছিল যেন দুই দেশের সংস্কৃতি বিনিময় সমানে সমান হয়। সেটা সিনেমার ক্ষেত্রে যতটা সহজ হয়েছে, নাটকের ক্ষেত্রে জটিলতা থাকছেই। তবে ওটিটির কারণে কিন্তু এখন সারা বিশ্বের বিনোদন দুনিয়া এক কাতারে চলে এসেছে। তাই যে দেশ যাই করুক না কেন, যে নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ বানাক-সেটা কিন্তু একসময় মানুষ দেখবেই; আটকে রাখার সুযোগ নেই।
শুনেছি বাঙালি খাবার আপনার খুবই পছন্দ?
খুব! যেবার এসেছি, সুস্বাদু অনেক কিছুই খেয়েছি। ইলিশ, পাঙাশ, আইড় ও ছোট মাছ থেকে শুরু করে হাঁসের মাংসও খেয়েছি। রান্না করে খাইয়েছে। সেগুলো খুবই ভালো, মজাদার ছিল। বিলডাকিনীর শুটিংয়ের সময় সেটের একজন খুব ভোরে সেখানকার খেজুর গাছে উঠে সরেস রস এনে খাইয়েছিল আমাকে।