দেশীয় চলচ্চিত্রের বর্তমান দৈন্যদশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোজিনা। তিনি আক্ষেপের সুরে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নব্বই দশকে অভিনয় ছেড়ে যাওয়ার সময় চলচ্চিত্রকে যে অবস্থানে রেখে গিয়েছিলাম প্রত্যাশা ছিল তা আরও উচ্চতায় অবস্থান করে নেবে। কিন্তু উচ্চতা তো দূরে থাক আগের অবস্থার চেয়েও অবনতি ঘটেছে। এ অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
অভিনেত্রী রোজিনার প্রকৃত নাম রওশন আরা রেনু। তার জন্ম রাজবাড়ীতে। ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক ছিল তার। ছাত্র অবস্থাতেই ঢাকায় মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সত্তরের দশকে প্রথম একটি জন্মনিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞাপনে মডেল হন। এতে তার কাজ প্রশংসিত হয়। ১৯৭৬ সালে কালিদাসের 'জানোয়ার' শিরোনামের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চিত্রজগতে অভিষেক ঘটে তার। একটানা ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেন তিনি। এর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন এই অভিনেত্রী। অর্জন করেছেন দুবার জাতীয় পুরস্কারসহ বেশ কয়বার বাচসাস, প্রযোজক সমিতি ও পাকিস্তানের নিগার অ্যাওয়ার্ড। বাংলাদেশে 'জীবনধারা' ও আমজাদ হোসেনের 'কসাই' চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় এবং ১৯৮৬ সালে 'হামসে হ্যায় জামানা'র জন্য পাকিস্তানের নিগার পুরস্কার পান তিনি। আশির দশকে প্রযোজক ফজলুর রশিদ ঢালীর সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন রোজিনা। কিন্তু স্বামীর অকালমৃত্যুর পর নব্বই দশকের শুরুতে লন্ডনপ্রবাসী এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে ১৯৯৩ সাল থেকে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। প্রতিবছরই দেশে আসেন। মাঝেমধ্যে টিভিনাটক নির্মাণ ও অভিনয় করলেও মতিন রহমানের পরিচালনায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গল্পে নির্মিত 'রাক্ষুসী' ছাড়া আর কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি রোজিনা। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দেশে এসেছেন তিনি, ফিরে যাবেন ৯ মার্চ।
রোজিনা বলেন, দীর্ঘদিন একটানা কাজ করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই নব্বই দশকে এসে সিদ্ধান্ত নিলাম 'আর সেলিব্রেটি নয়, এবার থেকে পাবলিক লাইফ লিড করব। তাই অভিনয় ছেড়ে পুরোদমে গৃহিণী হয়ে গেলাম।' তার কথায় গতানুগতিক ধারার চলচ্চিত্র থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি এদেশের চলচ্চিত্র। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বড়পর্দায় আর অভিনয় করা হয়ে উঠেনি। তিনি বলেন, বিশ্বের চলচ্চিত্র এখন গল্প, নির্মাণ, অভিনয় এবং কারিগরি দিক দিয়ে অনেক এগিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পিছিয়ে রয়েছি আমরা। তার কথায় চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি দেশের সবচেয়ে বড় গণমাধ্যম। একে অবহেলা করার উপায় নেই। ভালো ছবি নির্মাণ হয় না বলে দর্শক হলে যায় না এবং এর মালিকরা লোকসান গুনতে গুনতে বেশির ভাগ হল বন্ধ করে দিয়েছেন। যেগুলো আছে তাতে যাওয়ার পরিবেশ নেই। তবে তিনি গর্বিত বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল নিয়ে। কারণ এগুলো এখন বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে পেঁৗছে গেছে এবং বিদেশিরা আমাদের অনুষ্ঠান দেখে বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারছে। রোজিনার কথায় ভারতীয় টিভি চ্যানেলের জন্য আমাদের ছবি দর্শক দেখছে না এ কথা অযৌক্তিক। মানসম্মত চলচ্চিত্র পেলে দর্শক অবশ্যই হলে যায়। এদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রদর্শন সমর্থন করেন না রোজিনা। তার কথায় তাদের বাজেটের চলচ্চিত্রের সঙ্গে আমাদের চলচ্চিত্রের প্রতিযোগিতা চলে না। রোজিনা বলেন, আমি পোশাকি ও পারিবারিক দুই ধরনের চলচ্চিত্রেই অভিনয় করেছি এবং সব কাজ দর্শক সমানভাবে গ্রহণ করেছে। মানে এগুলো মানসম্মত ছিল বলেই দর্শক গ্রহণযোগ্যতা লাভ সম্ভব হয়েছে। তার কথায় উন্নত চলচ্চিত্র নির্মাণে এফডিসিকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহকেও সময়োপযোগী করতে হবে।
রোজিনা বলেন, চলচ্চিত্র আমার রক্তে মিশে আছে, আমার আজীবনের ভালোবাসা হচ্ছে চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের কারণেই আজ আমি অভিনেত্রী রোজিনা এবং আমার অর্থবিত্ত লাভ। অতীতে অনেক চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছি। এবার দীর্ঘদিনের লালিত একটি স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। সেটি হচ্ছে চলচ্চিত্র পরিচালনা। আমার প্রিয় দর্শক-ভক্তদের এমন একটি চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে যেতে চাই যাতে আমার মৃত্যুর পরও আমাকে তারা মনে রাখে।