বাঙালি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য হিসেবে মঞ্চস্থ হয়ে আসছে যাত্রা। যাত্রা থেকেই বাঙালি সংস্কৃতিতে এসেছে নাটক, থিয়েটার ও সিনেমা। কিন্তু এই আদি সংস্কৃতি যথার্থ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ চরম অবহেলিত। শীতকালে যাত্রাপালার ভরা মৌসুম হলেও এবার অনিবার্য কারণে ক্ষতির মুখে যাত্রাশিল্প সংশ্লিষ্টরা।
'যাত্রাশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০১২' বাস্তবায়ন ও যাত্রা দল নিবন্ধনের ধারাবাহিকতায় এ শিল্পের অবক্ষয়রোধে সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি উদ্যোগ নেয়। ২০১৩ সালে একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্রবিষয়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে বিচারকদের উপস্থিতিতে ১৩টি যাত্রা দলকে নিবন্ধিত করা হয়।
যাত্রা সংশ্লিষ্টদের কথায়- যাত্রার বর্তমান চালচিত্র খুবই উদ্বেগজনক। বেশির ভাগ যাত্রা দলেই অভিনয় নেই, অনুশীলন নেই, সাহিত্য নেই, আছে শুধু এক দল নারীর নাচ। এ অবস্থা রোধে সরকারি ও প্রশাসনিক পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
প্রখ্যাত যাত্রা সংগঠক মিলন কান্তি দে বলেন, বর্তমান সরকার যাত্রাশিল্পকে নিবন্ধন দিচ্ছে। একটি নীতিমালাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু নীতিমালা অনুযায়ী সহজ, স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে হয়রানি না করে যাত্রা আয়োজনের অনুমতি দেওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। তা হলে নিবন্ধন দিয়ে লাভ কি হলো? নিবন্ধন পাওয়ার পর ৬০-৭০টি দল এবার যাত্রার আয়োজনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মন্দায় পড়ে দলগুলো। এ ছাড়া নানা অব্যবস্থা তো আছেই।
যাত্রা সংগঠক জোৎস্না বিশ্বাস বলেন, যাত্রাশিল্পের অবস্থা এখনো ভালো নয়। এই মৌসুমে রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন সমস্যা তৈরি করেছে। যাত্রাপালা নিয়ে দীর্ঘদিন দুর্বৃত্তায়ন চলছে। যাত্রার অনুমতি পাওয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। প্রশাসনের নাকের ডগায় অশ্লীলতা, জুয়া, হাউজি চলে। এতে পরিবার নিয়ে যাত্রা দেখার প্রবণতা কমে গেছে। সুস্থ যাত্রা অয়োজনে সুষ্ঠু পরিবেশ দরকার। প্রশাসনকে বলব, প্রতিটি জেলায় যাত্রামঞ্চ নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হোক, যাত্রা শিল্পের সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক। যাতে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ১৫ লাখ মানুষ সচ্ছলভাবে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।
যাত্রা সংগঠক এম এ মজিদ বলেন, চলতি মৌসুমে যাত্রাপালা ভালোই চলছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও এসএসসি পরীক্ষার কারণে শেষ দিকে এসে মঞ্চায়ন স্থবির হয়ে পড়ে। এ ছাড়া অনিবন্ধিত কিছু যাত্রা দল অশ্লীলতা তৈরি করে। প্রাথমিকভাবে জেলা শহরগুলোতে স্থায়ী মঞ্চের আবেদন করেও পাওয়া যায়নি। সরকারি বাজেট না থাকার দোহাই দিয়ে শিল্পকলা একাডেমি কোনো সমস্যারই সমাধান করে না। একাডেমি যেহেতু নিবন্ধন দেয় তাই সব বিষয়ে নজর দেওয়া ও নিয়ন্ত্রণ করা শিল্পকলা একাডেমিরই দায়িত্ব।