নতুন মুখের অভাব নেই। কিন্তু তারা দর্শক মন কাড়তে পারছে না। অভিনয়ে দক্ষতা নেই তাদের। ভাবটা এমন 'নায়িকা' তকমা পেতেই আসা। অল্প সময়ে বাড়ি-গাড়ি আর অর্থবিত্তের মালিক হওয়া। অভিনয় জানা বা শেখার দরকার নেই। এ মনোভাবের সুযোগে কিছু নির্মাতা সর্বনাশ করছে তাদের। স্বপ্নছোঁয়ার ব্যাকুলতায় সহজে চোরাবালিতে পা দিচ্ছে এবং নিজের সর্বনাশ ডেকে আনছে নতুন কিছু মুখ। ফলে ঢালিউডে নায়িকা সংকট আর কাটছেই না।
নায়করাজ রাজ্জাক বলেন, আমাদের সময় সুচন্দা, শবনম, শাবানা, কবরী, ববিতাসহ যারা ছিলেন সবাই অভিনয়কে ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে নিতেন। তাদের ছবি দেখে দর্শকমন জুড়াত। নির্মাতারও স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারতেন। এখন যারা আসছে তাদের অনেকে চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে নয়, নিজেকে বড়লোক করতেই আসছে। তাদের দায়সারা গোছের কাজ দেখে বিরক্তিতে ভোগে নির্মাতা-দর্শক। এতে সংকট বাড়ছে।
জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুচন্দা বলেন, চলচ্চিত্র আর অভিনয়কে ভালোবাসতে হবে। দক্ষতা দেখাতে হবে। না হলে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব নয়। শুধু এলাম আর গেলাম। চলচ্চিত্র শিল্পকে কিছু দিলাম না, দর্শকের মনেও ঠাঁই পেলাম না। এতে কার কী লাভ হলো? শুধু সময়ই নষ্ট হলো। সমাধান তিমিরেই রয়ে গেল। এটি কারও কাম্য হতে পারে না।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের সময় কাজ শিখিয়ে তা আদায় করে নেওয়া হতো। ওই সময়ের নায়িকাদের মধ্যে শেখার আগ্রহও ছিল। এখন তা আছে বলে মনে হয় না। ফলে সংকট কাটছে না। বরং বাড়ছে।
চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, এখন জহির রায়হান, কাজী জহির, কামাল আহমেদ, ্এহতেশাম, মোস্তাফিজ, খান আতা, সুভাষ দত্ত, আজিজুর রহমান, আমজাদ হোসেন, চাষী নজরুল প্রমুখের মতো নির্মাতা কোথায়? তারা নায়িকাদের হাতে-কলমে কাজ শিখিয়ে নায়িকা তৈরি করেছেন। এসব নির্মাতাকে শিল্পী তৈরির কারিগরও বলা হয়।
সর্বশেষ সোহানুর রহমান সোহানও শিল্পী তৈরিতে সফল হন। তাই শুধু নতুন মুখদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। শিল্পী তৈরিতে নির্মাতাদের ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদ বলেন, প্রথমে পেলাম সুচন্দা, শবনম, শাবানা, কবরী, ববিতার যুগ। এরপর দিতি, চম্পাও সাফল্য দেখিয়েছে। তারপর এল শাবনাজ, শাবনূর, মৌসুমী, পপি, পূর্ণিমা। দক্ষ কাজ দিয়ে এখনো দর্শক মনে স্থান করে আছে তারা। এদের পর ২০০৬ সালে পাওয়া গেল অপু বিশ্বাসকে। প্রথম ছবি 'কোটি টাকার কাবিন' দিয়েই প্রতিষ্ঠা পায় অপু। প্রথম অভিনয় দেখেই বোঝা গেছে মেয়েটির মধ্যে মেধা ও প্রতিভা আছে। এখন পর্যন্ত সুঅভিনয় দিয়ে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে অপু বিশ্বাস।
অপুর পর মাহির কথা বলা যায়। সেও দর্শক- নির্মাতার প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে। আসলে অপুর সঙ্গে এবং তার পরে অনেক নায়িকাই এসেছে। তাদের মধ্যে একমাত্র মাহিই এখন পর্যন্ত টিকে আছে। অন্য যারা এসেছে তারা মোটেও জমাতে পারেনি বা পারছে না।
দু-একটি ছবি করেই ঝরে পড়ছে। ফলে ঢালিউডে নায়িকা সংকট এখন মহাসংকটে পরিণত হয়েছে। এ সংকট দূর করতে সত্যিকারের নায়িকা হতে আসতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে নির্মাতাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।