গতি হারিয়েছে যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ। এর জন্য নতুন নীতিমালাকেই দায়ী করেন নির্মাতারা। সবাই চায় ২০১২ সালের এই নীতিমালা পরিবর্তন হোক। চলচ্চিত্রকারদের দাবি ১৯৮৬ সালের নীতিমালা পুনর্বহাল করতে হবে। না হলে উভয়পক্ষেরই স্বার্থহানি ঘটবে।
১৯৮৬ সালের যৌথ প্রযোজনার নীতিমালায় সব দেশের শিল্পীদের সমান হারে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা বাধ্যতামূলক ছিল। ২০১২ সালে সে নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, 'দুই দেশের নির্মাতারা আলোচনার মাধ্যমে নির্মাণের বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।' এ সিদ্ধান্তের অপব্যবহার করে যৌথ প্রযোজনার সুযোগে এখন অনেকেই যৌথ প্রতারণায় শামিল হয়েছেন। এর উদাহরণ ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' ছবিটি। এ ছবিতে নায়ক-নায়িকা চরিত্রে বাংলাদেশের কাউকেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান ভারতের এসকে মুভিজের সঙ্গে যৌথভাবে ছবিটি নির্মাণ করে। মূলত কলকাতার এসকে মুভিজেরই ছবি ছিল এটি। বাংলাদেশে ব্যবহৃত ছবি পোস্টারে পরিচালকের নামের জায়গায় অনন্য মামুন ও অশোকপাতির নাম থাকলেও ভারতে সাঁটানো কোনো পোস্টারেই বাংলাদেশি পরিচালক, গীতিকার কিংবা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়নি। প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় এরপর আরও কয়েকটি ভারতীয় ছবি যৌথ প্রযোজনার নাম দিয়ে বাংলাদেশে মুক্তি পায়। এর মধ্যে চলতি বছর মুক্তি পাওয়া 'রোমিও বনাম জুলিয়েট' অন্যতম। এ ছবির ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। বাংলাদেশে সাঁটানো কিছু পোস্টারে আবদুল আজিজ ও অশোকপতির নাম দেখা গেলেও ভারতে সাঁটানো কোনো পোস্টারেই আবদুল আজিজের নাম ছিল না। নির্মাতারা বলেন, আসলে এটি শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া আর কিছুই নয়।
নায়ক রাজ রাজ্জাক বলেন, যৌথ আয়োজনে ছবি নির্মাণ হয়েছে এবং হবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু কেন এবং কার স্বার্থে নতুন করে নীতিমালা তৈরি করতে হয়েছে জানি না। এ কারণে নতুন করে সমস্যাও দেখা দিয়েছে। তাই আগের নীতিমালা অনুযায়ী বা বর্তমান সময়োপযোগী করে নীতিমালা তৈরি করে কাজ করা দরকার। সুচন্দা বলেন, যৌথ আয়োজনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতেই পারি। যা আগেও হয়েছে। কিন্তু নীতিমালা যদি সঠিক না হয় তাহলে উভয়পক্ষেরই ক্ষতি হবে।
আমজাদ হোসেন বলেন, যৌথ প্রযোজনার ছবির ক্ষেত্রে নীতিমালা যদি দুর্বল হয় তাহলে যৌথ আয়োজনের উদ্দেশ্য অবশ্যই ব্যাহত হবে। এদিকটায় নজর দিতেই হবে। আজিজুর রহমান বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যৌথ
আয়োজনে ছবি নির্মাণ হচ্ছে। প্রথমদিকে তেমন শক্তিশালী কোনো নীতিমালাও ছিল না। তা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে তখন
কোনো জটিলতা দেখা দেয়নি। ১৯৮৬ সালে যে নীতিমালা প্রণয়ন হয় তাতেও সুষ্ঠুভাবে কাজ চলছিল। ২০১২ সালে নতুন
যে নীতিমালা তৈরি হয় তা সত্যিই দুর্বল। এতে উভয়পক্ষেরই ক্ষতি হতে পারে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি সুদীপ্ত কুমার দাশ বলেন, যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করবে প্রযোজক। আর পুঁজি ফেরত আসবে প্রদর্শকের মাধ্যমে। তাই এ ক্ষেত্রে যাবতীয় সমস্যা দূরীকরণে প্রযোজক ও প্রদর্শকদের নিয়ে সরকার বৈঠক করে পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা একটি নতুন নীতিমালা তৈরি করতে পারে। বর্তমান নীতিমালা অকার্যকর। তার প্রমাণ 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' ছবিটি। যৌথ প্রযোজনার নামে একতরফা ভিত্তিতে নির্মিত এই ছবির ব্যাপারে মন্ত্রণালয়, সেন্সর বোর্ড এবং এফডিসি কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। এখন যেহেতু উন্মুক্ত বাজারের যুগ তাই যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। শুধু নীতিমালা করলেই চলবে না। এর বাস্তব প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। শাকিব খান বলেন, আমি যৌথ প্রযোজনার বিপক্ষে নই। কিন্তু দুর্বল নীতিমালার কারণে কোনো পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক তাও চাই না। ফেরদৌস বলেন, আমরা আগের মতো যৌথ নির্মাণ অব্যাহত রাখতে পারি। তবে এক্ষেত্রে বর্তমান নীতিমালা সংস্কার প্রয়োজন।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রায় অর্ধশতাধিক যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ হয়েছে। বর্তমানে নীতিমালা সমস্যার কারণে যৌথ আয়োজনের গতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।