কালে কালে মহড়া দিয়েছে অনেক। মঞ্চ সেজেছে, গড়েছে আবার ভেঙেও গেছে। মঞ্চের কারসাজি দেখে দর্শক বিনোদন উপভোগ করলেও নাট্যকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো আজও পূরণ হয়নি। নির্মাণ হয়নি নাটকের জন্য কোনো আলাদা অডিটরিয়াম। একদিকে সরকারি সহযোগিতা আশাতীতভাবে না পাওয়া, নাটকের জন্য উন্নত মঞ্চ না থাকা, অডিটরিয়ামের ভাড়া বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চলছে বগুড়ার নাট্য আন্দোলন। দীর্ঘদিন থেকে মঞ্চের সমস্যা থেকে গেলেও কখনোই সমাধান করা হয়নি। দিন দিন নাট্য সংগঠনের নাটক সংখ্যা বাড়লেও নাটকের জন্য কোনো আলাদা অডিটরিয়াম গড়া হয়নি। বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটভুক্ত সংগঠন রয়েছে ৮১টি। এর বাইরেও রয়েছে আরও বেশ কিছু ছোট সংগঠন। ছোট সংগঠনগুলোও নাটকের কাজ করে থাকে। জেলা সদরে বর্তমানে ৬টি অডিটরিয়াম রয়েছে। এরমধ্যে শহীদ টিটু মিলনায়তন, উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি, মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম দুলাল অডিটরিয়াম, শিল্পকলা একাডেমি নতুন ও পুরাতন এবং জেলা পরিষদ মিলনায়তন। ৬টির মধ্যে শিল্পকলা একাডেমির পুরাতনটিতে আপাতত কোনো মঞ্চায়ন হয় না। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম দুলাল অডিটরিয়ামের অবস্থা নাজুক। ৫টির মধ্যে বগুড়া পৌরসভার আওতায় শহীদ টিটু মিলনায়তন ও উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবন জেলা প্রশাসন এবং অপরটি বগুড়া জিলা স্কুলের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন দেখভাল করে থাকে। জেলা পর্যায়ে মাত্র ৬টি অডিটরিয়াম থাকলেও নাটকের জন্য কোনো আলাদা মঞ্চ নির্মাণ করা হয়নি। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০টি নাট্য সংগঠন কাজ করলেও নাটক মঞ্চায়নের জন্য তেমন কোনো মঞ্চ নেই। জেলার নাট্য কর্মীদের এ নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। বর্তমান হলগুলোতে সাউন্ড সিস্টেম ও আলো নেই, মঞ্চের অতিথি চেয়ার টেবিল সংকট, বিশেষ পর্দার ব্যবস্থা নেই, জেনারেটরের ব্যবস্থা নেই- এমন সব নানা সমস্যা থাকার পরেও বেশিরভাগ হলের ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। নাট্যান্দোলনকে গতিশীল করতে নাট্যকর্মীরা হলের ভাড়া ও সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না জানান, বগুড়ায় নাটক করার মতো ভালো মঞ্চ নেই। নাটকের সংগঠনগুলো অলাভজনক। ভালো পৃষ্ঠপোষকতা নেই, ভালো অভিনেতা তৈরি বা নাটকের কাজ করার জন্য অর্থের প্রয়োজন হলেও আমরা জোগান দিতে পারছি না। বগুড়া থিয়েটার, কলেজ থিয়েটারের পাশাপাশি আর দুই-একটি সংগঠন নিয়মিত নাটক নিয়ে কাজ করতে পারলেও অন্য সংগঠনগুলো অর্থাভাবে কাজ করতে পারছে না। হারাতে হচ্ছে দর্শক। বগুড়ার নাট্যকর্মীরা দীর্ঘদিন থেকে হলগুলোর ভাড়া কমানোর দাবির পাশাপাশি নাটকের জন্য আলাদা মঞ্চ দাবি করে আসছে।
বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম জানান, একাধিক অডিটরিয়াম থাকলেও সেখানে নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। ভালো মানের নাটকের জন্য টিকিট ছাড়া হলেও দর্শক পাওয়া যায় না। এসবের পরেও নিজেদের আবহমান সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বগুড়া সংশপ্তক থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান সুজন জানান, বগুড়ার নাট্যকর্মীরা জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখছে। কিন্তু, শুরুতেই যদি আরও ভালো সুযোগ-সুবিধা পায় তাহলে আরও ভালো কিছু করার সুযোগ থাকে। বগুড়ার আমরা কজন শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি আবদুস সামাদ পলাশ জানান, নাট্যমঞ্চের সংস্কার করতে হবে। নয়তো দিন দিন দর্শক যেমন কমে যাবে ঠিক তেমনি নাটকও কমে যাবে।
বগুড়া জেলা কালচারাল কর্মকর্তা সাগর বসাক জানান, বগুড়া জেলার জন্য নাটকের যে বরাদ্দ তা ঢাকা থেকে আসে। জেলা কার্যালয় থেকে শুধু আবেদনকারীদের তালিকা ঢাকায় প্রেরণ করা হয়ে থাকে।