পুরনো খবর হলো ঢালিউডের মিষ্টি মেয়ে খ্যাত অভিনেত্রী কবরী দ্বিতীয়বার ছবি নির্মাণ করতে যাচ্ছেন। আর নতুন খবর হচ্ছে এই ছবির জন্য নায়িকা খুঁজতে টালিগঞ্জে নাও ভিড়াচ্ছেন তিনি। মানে ওপার বাংলায় নায়িকার খোঁজে যাচ্ছেন এপার বাংলার নায়িকা।
কিন্তু নায়িকা খুঁজতে টালিগঞ্জে যাওয়া কেন? এই প্রশ্নে কবরীর ক্ষোভ ঝরা সহজ-সরল উত্তর হলো- 'এখানে অনেক মেয়েই তো দেখলাম। তাদের মধ্যে কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই। পেশাদারিত্ব আর কমিটমেন্টের বড়ই অভাব। আমরা যেভাবে কাজ শিখেছি, করেছি সেই চেষ্টা তাদের মধ্যে কোথায়! এ জন্য তো দীর্ঘদিন ছবির কাজ আটকে রাখতে পারি না, আমি হতাশ। বাধ্য হয়ে টালিগঞ্জ যাচ্ছি। ওখানে এখনকার শিল্পীরাও কাজের প্রতি খুব সিনসিয়ার। বেশ কজনের সঙ্গে ইতিমধ্যে প্রাথমিক আলাপও হয়েছে। আশা করছি অচিরেই কাজ শুরু করতে পারব। শিগগিরই মনের মতো নায়িকা পেয়ে যাব।'
সারাহ বেগম কবরী ২০০৬ সালে প্রথম নির্মাণ করেন 'আয়না' ছবিটি। প্রায় ১০ বছর পর এবার নির্মাণ করবেন ছবি 'এই তুমি সেই তুমি'। দুই প্রজন্মের দুই জুটির নিত্যদিনের খুনসুটি নিয়ে গড়ে উঠেছে ছবির গল্প। আগের জুটি হিসেবে থাকছেন আলমগীর ও কবরী। আর এখনকার জুটি হবেন আরিফিন শুভ এবং একজন নতুন মুখ। যাকে আনা হবে টালিগঞ্জ থেকে।
কবরী দুঃখ করে বলেন, 'এখন উন্মুক্ত বাজারের যুগ। তাই বলে শিল্প-সংস্কৃতি বাজারি হয়ে গেলে তো চলবে না। আমাদের কাজ মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্দার সেতু তৈরি করেছিল। এখনো অনেকে বলেন আপনার অমুক ছবি দেখে এতটাই তৃপ্তি পেয়েছি যে, এখনো ভুলতে পারছি না। কিন্তু এখনকার শিল্পীদের অভিনয় ও ছবি দেখে কেউ কি তা মনে রাখতে পারছে। সিনেমা ও নাটক, সবখানে একই অবস্থা।
কালজয়ী এই অভিনেত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, এই দায়ভার কার? উত্তরে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তো নির্বিকার। শুধু বলে হবে, হচ্ছে। উত্তরণের তো লক্ষণ দেখছি না। কোনো মনিটরিংও নেই।
কবরী নিজেই তো এক্ষেত্রে পরীক্ষিত ও প্রশিক্ষিত ব্যক্তিত্ব। তাহলে কেন নিজে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছেন না তিনি! তার কথায়, আমি তো অনেক কিছুই করতে চাই। কিন্তু আমাকে তো কোনো পদ দেওয়া হয় না। রাজনীতিতে গিয়েছিলাম। সেখানেও পেশাগত স্বকীয়তা বজায় রেখেছি। বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। নারায়ণগঞ্জের মানুষ এখনো আমাকে বলে আপনি এমপি থাকাকালে আমরা শান্তিতে ঘুমিয়েছি। চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের স্বচ্ছতার বিষয়ে জানতে চাইলে কবরী বলেন, আমি দুবার অনুদান চেয়েছি। কিন্তু আমাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী আমার মর্মবেদনা অবশ্যই উপলব্ধি করবেন। আমি চলচ্চিত্রকে ঢেলে সাজাতে চাই। অনুদান কমিটিকে শক্তিশালী করে গঠন করা দরকার। যারা চলচ্চিত্র বোঝে তাদের কমিটির সদস্য করতে হবে। কবরীর জিজ্ঞাসা চলচ্চিত্র, শিল্প, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা, সহানুভূতি এবং উৎসাহের অভাব নেই। তারপরও কেন কিছু হচ্ছে না? কবরী বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমাকে অনুদান কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। ওই সময় কমিটিতে ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার, মাহাবুব জামিল, অভিনেতা ইনামুল হক, মৃদুল কান্তি প্রমুখের মতো অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। আমরা নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে কাজ করে গেছি। আর এখন আমার দুঃখ ৫০ বছর ধরে চলচ্চিত্রে কাজ করছি অথচ দুবার অনুদান চেয়েও পাইনি। এই ব্যর্থতা বা দায়ভার কার?
'আয়না' থেকে 'এই তুমি সেই তুমি'
ঢালিউডের মিষ্টি মেয়ে-খ্যাত অভিনেত্রী কবরীর তুলনা তিনি নিজেই। ১৯৬৪ সালের ২৪ এপ্রিল। ওইদিন মুক্তি পায় কবরী অভিনীত প্রথম ছবি 'সুতরাং'। ছবিটি নির্মাণ করেন সুভাষ দত্ত। এই খ্যাতিমান নির্মাতা চট্টগ্রামের মেয়ে মিনা পালকে কবরী নামে চলচ্চিত্রে আনেন। প্রথম ছবিতেই তার সাবলীল অভিনয় শুধু দেশে নয়, বিদেশের মাটিতেও প্রশংসা কুড়ায়। ১৯৬৫ সালে ফ্রাঙ্কফুট চলচ্চিত্র উৎসবে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার লাভ করে 'সুতরাং'। কবরীর অভিনয়েরও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা হয় উৎসবে।
১৯৭৮ সালে শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা আবদুল্লাহ আল মামুন নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র 'সারেং বৌ'। এতে 'নবীতুন' চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন কবরী। ২০১৩ সালে জাতীয় পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে চারবার বাচসাস সম্মাননা পান। তা ছাড়া ২০০৮ সালে এ সংগঠনটি বিশেষ সম্মাননা জানায় কবরীকে। অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেন। ১৯৭৬ সালে প্রথম প্রযোজনা করেন 'গুণ্ডা' চলচ্চিত্রটি।
২০০৬ সালে 'আয়না'র মাধ্যমে প্রথম পরিচালনায় আসেন তিনি। এতে নিজে অভিনয়ও করেন। এটিই ছিল চলচ্চিত্রে কবরীর শেষ অভিনয়। একটি সফল নির্মাণ ছিল 'আয়না'। প্রায় ১০ বছর পর আবার নির্মাণ করতে যাচ্ছেন তিনি 'এই তুমি সেই তুমি'। তার এই নির্মাণ যাত্রা দীর্ঘ ও আরও সফল হবে এটিই সবার কামনা।