সরকারি নিষেধ উপেক্ষা করে ইংরেজি নামে ছবি নির্মাণ ও প্রদর্শন চলছেই। এতে ক্ষোভ জানান সিনিয়র নির্মাতারা। ২০১৪ সালের ৭ জুলাই বাংলাদেশ প্রতিদিনের শোবিজ বিভাগে 'ইংরেজি নামে অবাধে ছবি নির্মাণ' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হলে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তথ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশি ছবির ইংরেজি নাম নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। অথচ সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে এখনো ইংরেজি নামে ছবি নির্মাণ ও প্রদর্শন চলছে। সম্প্রতি 'পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী টু' ছবির নাম পরিবর্তন করে 'ক্যাপ্টেন' রাখার আবেদন জমা পড়েছে এফডিসি ও চিত্র পরিচালক সমিতিতে।
এ বিষয়ে পরিচালক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, এ ব্যাপারে গত মঙ্গলবার সমিতির কার্যনির্বাহী সভায় কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছি। এখন থেকে ছবির ইংরেজি নাম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। 'ক্যাপ্টেন' নামটি পরিবর্তনের জন্য নির্মাতাকে বলা হয়েছে। সেন্সর বোর্ডকে জানানো হয়েছে এ ব্যাপারে যেন তারা সচেতন থাকে। তিনি বলেন কিছু ইংরেজি শব্দ ও কালজয়ী গল্প আছে যা পরিবর্তন সম্ভব নয়। যেমন চেয়ারম্যানের প্রচলিত বাংলা শব্দ নেই। আবার শেক্সপিয়রের 'ম্যাকবেথ' নামটিরও বাংলা করা যাবে না। শুধু এসব ক্ষেত্রেই বিবেচনা করা যেতে পারে।
প্রখ্যাত চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেন বলেন, সেন্সর বোর্ড নীতিমালার এসআরও ১৯৮৫ এর ধারা ১ এর উপধারা 'এ'তে বর্ণিত আছে- 'বাংলাদেশ বা এর জনগণের সমসাময়িক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রথা ও পোশাকের পরিপন্থী কোনো বিষয় চলচ্চিত্রে থাকতে পারবে না।' অথচ ভাষাগতভাবে নামের দিকটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর বাধ্যবাধকতার বিষয়টি সেন্সর বোর্ডের আইনে উল্লেখ না থাকা দুঃখজনক। আইনের এই ফাঁক গলিয়ে নির্মাতারা বাংলাদেশের ছবির নাম ইংরেজি ভাষায় রাখছেন। সেন্সর বোর্ড যদি এ অবস্থা রোধে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে স্বকীয় সংস্কৃতি হিসেবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
চলচ্চিত্রকার রাজ্জাক বলেন, এটি জাতি হিসেবে আমাদের দৈন্য ও চরম ব্যর্থতা। সেন্সর নীতিমালায় এ বিষয়ে কঠোর আইন থাকা উচিত ছিল। বাঙালি হিসেবে স্বতন্ত্র জাতি হয়েও ভিনদেশি কালচারে আসক্ত হওয়া যেন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এখন অকারণে ইংরেজি ও বাংলায় অদ্ভুত নামের সব ছবি হয়। চলচ্চিত্রের এ অবস্থা দেখে খুবই কষ্ট হয়। এসব মেনে নেওয়া যায় না।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতা বলেন, এই দৈন্য লজ্জার। পৃথিবীর বুকে ভাষার জন্য জাতি হিসেবে একমাত্র বাঙালিই ত্যাগ স্বীকার করেছে। সর্বস্তরে বাংলা চালু করাও শুরু হয়েছে। মামলার রায়ও বাংলায় লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরেও কেন আমাদের ছবির নাম ইংরেজিতে হবে। সংস্কৃতির মধ্যে চলচ্চিত্র হচ্ছে অন্যতম শক্তিশালী প্রধান গণমাধ্যম। সুতরাং এর নাম নিজ দেশের ভাষায় রুচিসম্মত ও মার্জিতভাবে হওয়া দরকার। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নীতিমালায় ছবির নাম বাংলায় হতে হবে উল্লেখ রয়েছে। সরকারি নির্দেশনাও রয়েছে। তারপরেও এই নির্দেশ না মানা দুঃখজনক। জাতিকে বিভ্রান্ত করার নামান্তর। সেন্সর বোর্ডে দায়িত্বশীল ও বুদ্ধিজীবীরা রয়েছেন। আশা করব তারা বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ছবির নাম মার্জিত বাংলায় রাখার দাবি সমিতির দীর্ঘদিনের। ভিন্ন ভাষার নামকরণ দূর করতে সেন্সর বোর্ডকে কঠোর ও প্রকৃত চলচ্চিত্রকারদের সজাগ হতে হবে।