গ্রেফতার এড়াতে একের পর এক প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন পাঁচ কোটি টাকা দামের অবৈধ গাড়ি আটকের ঘটনায় আলোচিত সেই উঠতি মডেল জাকিয়া মুন ও তার স্বামী ব্যবসায়ী শফিউল আজম মহসিন। এবার তারা নতুন গল্প জুড়েছেন। বলছেন, অফিস পুড়ে যাওয়াতে গাড়ির কাগজপত্র নেই। গাড়ির মালিকও তারা নয়। তাদের প্রতিষ্ঠান গাড়িটি দেখভাল করতো।
মুন ও তার স্বামীর এমন নিত্য নতুন গল্পে অতিষ্ট শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, আগামী বুধবার তাদের স্ব-শরীরে হাজির হতেই হবে, অন্যথায় তাদের গ্রেফতার করা হবে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান রবিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মুন ও তার স্বামী রবিবার হাজির না হয়ে নতুন গল্প পাঠিয়েছেন আইনজীবীর মাধ্যমে। আসলে তারা একের পর এক গল্প বানিয়ে চলেছেন। কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দা আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতিতে আছে। ফলে আগামী বুধবার জাকিয়া মুন ও তার স্বামীকে স্ব-শরীরে হাজির হতেই হবে। নইলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করবে শুল্ক গোয়েন্দা।
এর আগে সর্বশেষ ১৯ এপ্রিল তাদের হাজির হওয়া কথা ছিলো। সেদিন অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে হাজির হননি তারা। পরে ২৪ এপ্রিল হাজির হতে সময় চায় মুন ও তার স্বামী। তারা ১৯ এপ্রিল হাজির না হওয়ায় দু'জনের ওপর নজরদারি বাড়িয়ে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে শুল্ক গোয়েন্দা।
জানা গেছে, তলবের পর গত ১৯ এপ্রিল শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে মডেল জাকিয়া মুন ও তার স্বামী প্যাসেফিক গ্রুপের কর্ণধার শফিউল আজম মহসিন হাজির না হওয়ায় শুল্ক গোয়েন্দার সহকারি পরিচালক ফেরদৌসী মাহবুবকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পুরো বিষয়টি তদন্ত করে এই দু'জন কি কি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন, তা ঠিক করবেন। এই কমিটি শুল্ক আইনের সেকশন ১৬১ এর ১ ধারার অধীনে মুন ও তার স্বামী জাকিয়া মুনকে যে কোন সময় গ্রেফতার করতে পারবে। তদন্ত কমিটি এই দু'জন যাতে কোথাও পালাতে না পারেন এবং দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সেজন্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এর আগে গ্রেফতার এড়াতে মডেল জাকিয়া মুন ও তার স্বামীর করা রিট আবেদনটি গত ১৩ এপ্রিল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। রিট খারিজ হওয়ার বিষয়টি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করে বলেন, রিটে মডেল মুন ও তার স্বামীকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হয়রানি ও গ্রেফতার না করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। প্রসঙ্গত, আইন অনুযায়ী-এই অবৈধ গাড়ি ব্যবহার ও কেনার দায়ে তাদের ১২ বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হতে পারে। আবার তারা ফেঁসে যেতে পারেন চোরাচালান ও অর্থপাচার মামলায়।
গত ৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে মডেল জাকিয়া মুন ও তার স্বামী মহসিনের ব্যবহৃত পোরশা মডেলের একটি গাড়ি আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা। গাড়ির মালিকানার বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে তারা কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। ১১ এপ্রিলের এক চিঠিতে ১৮ এপ্রিল কাকরাইলের শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের তলব করা হয়। এরই মধ্যে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে গ্রেফতার আশঙ্কায় ওই দম্পতি হাইকোর্টে রিট করেন। এই সময়ে শুল্ক গোয়েন্দার তলবি চিঠি গ্রহণ না করে ফেরত পাঠানো হয় 'প্রাপকের ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে'- এ কথা উল্লেখ করে। পরে শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে সরাসরি বাহক মারফত চিঠি পাঠিয়ে ১৯ এপ্রিল হাজির হতে বলা হলেও এদিন তারা আসেননি। এ অবস্থায় তৃতীয় দফায় তলবি পত্র পাঠানো হয় মুন ও তার স্বামীর কাছে। এতে ২৪ এপ্রিল বিকাল ৩ টায় কাকরাইলের শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, এদিনও তারা হাজির না হয়ে 'গাড়িটি তাদের নয়' বলে আইনজীবীর মাধ্যমে চিঠি পাঠায়।
বিডি-প্রতিদিন/২৪ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ