৯০ দশকের শুরু থেকে সালমান খান ক্যারিয়ার শুরু করেন বলিউডে। সিনেমায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও তখনও পর্যন্ত তেমন সাড়া জাগানো ছবিতে অভিনয় করা হয়ে ওঠেনি তার। একটি নির্দিষ্ট সময় পর দেখা গেল, সালমান খাণ শুধুমাত্র কমেডি ছবিতেই অভিনয় করে চলছেন। এর মাঝে কিছু বিরতির পর ২০০৯ সালে একশন ‘ওয়ান্টেড’ ছবিটির মাধ্যমে সুপারহিট ছবির মোহর লাগিয়ে বলিউডে ফেরেন এই নায়ক। এই ছবিটির মুক্তির পর থেকে বলিউডের বক্স অফিস নতুন করে কাঁপানো শুরু করেন সালমান খান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি বলিউড ভাইজানকে। বক্স অফিসকে ১০০ কোটির ক্লাব থেকে তিনশ কোটির ক্লাব পর্যন্ত চিনিয়েছেন এই সালমানই।
গল্পের আসল কাহিনী এখানে নয়। প্রভুদেবা পরিচালিত ‘ওয়ান্টেড’ ছবিটি ছিল আসলে তামিল ছবির রিমেক। এরপর ‘বডিগার্ড’, ‘দাবাং’, ‘রেডি’ ছবির সুবাদে সুপারহিট নায়কের তকমা গায়ে চাপান সালমান। মজার কাহিনী হচ্ছে, সব কটি সিনেমাই তামিল ছবির হিন্দি সংস্করণ ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে শুধু তামিল ছবির কপি সিনেমাতেই যে সালমান অভিনয় করেন, তা নয়। হলিউডের একাধিক ছবির কাহিনী নকল করে সেসব সিনেমায় অভিনয় করেছেন ‘দাবাং’ অভিনেতা। কয়েকদিন আগে খবরে প্রকাশিত হয় সালমান খানের আসন্ন ছবি ‘টিউবলাইট’ নাকি হলিউড ছবির নকল। সেই সূত্র খুঁজতে গিয়েই বেড়িয়ে গেল অজানা নানা গোপন তথ্য। আর তা হচ্ছে, শুধু ‘টিউবলাইট’ নয়, এছাড়া আরও ৯টি এমন ছবিতে সালমান অভিনয় করেছেন, যা হলিউড সিনেমার হুবহু নকল। আর এই নিয়েই আমাদের আজকের প্রতিবেদন-
*টিউবলাইট
বলিউডে ‘টিউবলাইট’ নিয়ে যেন আলোচনার শেষ নেই। ক'দিন আগেই আলোচনায় আসে এই ছবি, কারণ প্রথমবারের মতো সালমানের সঙ্গে জুটি বাধছেন চীনের এক অভিনেত্রী। কিন্তু সব কিছুর পরও নতুন করে আবারো আলোচনায় এই ছবি। তবে এবারে যে বলা হচ্ছে টিউবলাইটের গল্প নাকি এক হলিউড ছবির নকল। ২০১৫ সালের হলিউড ছবি ‘লিটল বয়’ থেকে নাকি কপি করা হয়েছে টিউবলাইটের স্ক্রিপ্ট। লিটল বসের গল্প ছিল বাবা ও ছেলের। পটভূমিকা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। পিপার নামে একটি ছেলেকে নিয়ে ছিল লিটল বয়ের গল্প। পিপার দেখতে ছিল ছোটোখাটো। এর জন্য অনেকেই তার পিছনে লাগত। গল্পের শুরু হয় তখন যখন তার বাবা যুদ্ধে যায় এবং হারিয়ে যায়। অনুমান করা হয় জাপান তাকে বন্দি করেছে। পিপার তার বাবাকে উদ্ধার করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
টিউবলাইটেও নাকি সেই একই গল্প। শুধু বাবা-ছেলের বদলে এখানে দুই ভাইকে নিয়ে গল্প সাজানো হয়েছে। সালমান ও সোহেল। পটভূমিকা এখানে ভারত-চীন যুদ্ধ। লিটল বয়ে পিপারের যে চরিত্রটি ছিল, এখানে সালমানের চরিত্রটিও সেই রকম। সোহেল সালমানের ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন। ভারত-চীন যুদ্ধে তিনি হারিয়ে যাবেন আর সালমান তাকে খুঁজবেন।
*কিউ কি
১৯৭৫ সালের হলিউডি সিনেমা ‘ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কাকু’স নেস্ট’। এই ছবিটির হুবহু অনুকরণ করা ছবি সালমান খানের ‘কিউ কি’ ছবিটি। ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে সালমানের সঙ্গে ছিলেন কারিনা কাপুর, জ্যাকিশ্রফ, রিমি সেন।
*জয় হো
মিমি লেডার পরিচালিত ২০০০ সালের সিনেমা ‘পে ইট ফরওয়ার্ড’। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ছবিটির বলিউড সংস্করণ হচ্ছে সালমানের ‘জয় হো’। ২০১৪ সালে সোহেল খান নির্মাণ করেন ছবিটি। শুধু সালমান নয়, ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বলিউডের একাধিক তারকা। আর শেষমেশ ছবির ফলাফল- সুপারহিট।
*পার্টনার
অ্যান্ডি টেন্যান্ট পরিচালিত হলিউডের রোমান্টিক কমেডি সিনেমা ‘হিচ’। আর এই ছবির হিন্দি সংস্করণ সালমান ও গোবিন্দ অভিনীত ‘পার্টনার’। ডেভিড ধাওয়ান পরিচালিত এই ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৭ সালে। তাদের সঙ্গে ছিলেন ক্যাটরিনা কাইফ ও লারা দত্ত। ‘পার্টনার’ ছবিতে যে চরিত্রে সালমান অভিনয় করেছিলেন, হলিউডের ‘হিচ’ ছবিতে একই ভূমিকায় ছিলেন মার্কিন অভিনেতা উইল স্মিথ।
*সালাম এ ইশক
২০০৭ সালে বলিউডে মুক্তি পায় তারকাবহুল সিনেমা ‘সালাম এ ইশক’। ছবিতে একটি বিশেষ ভূমিকায় অভিনয় করেন সালমান খান। অনেকেই হয়ত জানেন না, নিখিল আদভানি পরিচালিত ছবিটি হলিউড থেকে কপি করা। রোমান্টিক ড্রামা ও কমেডি নির্ভর এই ছবিটি হলিউডের রিচারড কুরটিস পরিচালিত ‘লাভ একচুয়ালি’ ছবির নকল যা মুক্তি পায় ২০০৩ সালে।
*যুবরাজ
১৯৮৮ সালের ড্রামা ঘরানার মার্কিন সিনেমা ‘রেইনম্যান’। অস্কার জয়ী এই ছবিটি বেরি লেভিনসন পরিচালনা করেন যাতে অভিনয় করেছিলেন টম ক্রুজ, ডাস্টিন হোফম্যান সহ অনেকে। অনেকের অজানা যে ছবিটির কাহিনী নকল করে বলিউডে নির্মিত হয়েছে একটি সিনেমা। সুভাষ ঘাই পরিচালিত ছবিটির নাম ‘যুবরাজ’। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন সালমান খান। সঙ্গে ছিলেন ক্যাটরিনা কাইফ, অনিল কাপুর ও জায়েদ খান। এ আর রজ\হমানের মিউজিকের ছবিটি সেসময় বেশ সাড়া ফেলেছিল বলিউডে। তবে যত যাই হোক না কেন, নকল ছবিতে অভিনয় করেই প্রশংসা পেয়েছিলেন সালমান।
*ম্যায়নে পেয়ার কিউ কিয়া
আবারও পরিচালক ডেভিড ধাওয়ান। ২০০৫ সালে বলিউডে মুক্তি পায় সালমান, ক্যাটরিনা, সুস্মিতা সেন ও আরশাদ ওয়ার্সি অভিনীত রোমান্টিক কমেডি ছবি ‘ম্যায়নে পেয়ার কিউ কিয়া’। ছবির ফলাফল সুপারহিট, কারণ ছবিটির গল্প যে হলিউড থেকে ধার করা! ১৯৬৯ সালে হলিউডে মুক্তি পায় ‘ক্যাকটাস ফ্লাওয়ার’ ছবিটি। জেনে সাক্স পরিচালিত ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন গোল্ডি হোন, ইনগ্রিড বার্গম্যান, ওয়াল্টার ম্যাথিউ, রিক লেঞ্জ ও জ্যাক ওয়েসটন। এই ছবিটির বলিউডি ভার্সন সালমান অভিনীত ‘ম্যায়নে পেয়ার কিউ কিয়া’।
*গড তুসি গ্রেট হো
২০০৮ সালে রুমি জাফরি বলিউডে নির্মাণ করেন ‘গড তুসি গ্রেট হো’ ছবিটি। প্রধান চরিত্রে সালমান খান অভিনয় করেন। সঙ্গে ছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, সোহেল খান ও একটি বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। সুপারহিট এই ছবিটি হয়ত অনেক ভক্তদের কাছে এখনও জনপ্রিয়। তাদের উদ্দেশ্য জানানো হচ্ছে, ছবিটি হলিউড থেকে হুবহু কপি করে নির্মিত হয়েছে। ২০০৩ সালে হলিউডে মুক্তি পায় ‘ব্রুস অলমাইটি’ ছবিটি। টম শ্যাডিয়াক পরিচালিত ফ্যান্টাসি ড্রামা ঘরানার ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন জিম ক্যারি, মরগ্যান ফ্রিম্যান, জেনিফার অ্যানিস্টন। হলিউডের জিম ক্যারির ভূমিকায় বলিউডের ভার্সনে অভিনয় করেছিলেন সালমান খান।
*হার দিল জো পেয়ার কারেগা
১৯৯৫ সালের হলিউডের রোমান্টিক কমেডি ঘরানার ছবি ‘হোয়াইল ইউ ওয়্যার স্লিপিং’। সান্ড্রা বুলক, বিল পুলম্যান, গ্লিনিস জোনস অভিনীত ছবিটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বলিউডে নির্মিত হয় ‘হার দিল জো পেয়ার কারেগা’ ছবিটি। যথারীতি ছবির নায়ক সালমান খান। রাজ কানওয়ার পরিচালিত ছবিতে আরও অভিনয় করেন রানি মুখার্জী, প্রীতি জিনতা সহ অনেকে। ছবিটি বলিউডে মুক্তি পায় ২০০০ সালে। সেসময় ছবিটির পাশাপাশি ছবির গানগুলোও বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
*জুড়ুয়া
কুংফু কিং জ্যাকি চ্যান অভিনীত ছবি ‘টুইন ড্রাগন’ মূলত হংকংএর ছবি যা মুক্তি পায় ১৯৯২ সালে। অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার ও কমেডি মিশ্রণের ছবিটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বলিউডে নির্মিত হয় ‘জুড়ুয়া’ ছবিটি। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে জ্যাকি চ্যানের ভূমিকায় অভিনয় করেন সালমান খান। আর এই ছবিটি পরিচালনা করেন ডেভিড ধাওয়ান। এতে আরও অভিনয় করেছিলেন কারিশমা কাপুর, রাম্ভা, কাদের খান, শক্তি কাপুর সহ অনেকে।
বিডি-প্রতিদিন/তাফসীর