মেয়েরা মেয়েদের শত্রু -- এই জনপ্রিয় বাক্যটি আমি উচ্চারণ করি না। করি না কারণ আমার মনে হয় না, বাক্যটি সঠিক। তাহলে আমি কি বলতে চাই, মেয়েরা খুব ভালো মানুষ, মেয়েরা কারো পেছনে কাঠি করে না, কারো বাড়া ভাতে ছাই দেয় না? নিশ্চয়ই দেয়। দেয় কারণ তারা মানুষ নামের প্রাণী। এই প্রাণী কোনও নিরীহ প্রাণী নয়। কত সহস্র বছর পৃথিবীর পথে হাঁটছে কিন্তু নিজেদের মধ্যে মারামারি হানাহানি হিংসেহিংসি ছাড়া এই প্রাণী একটি দিনও পার করেনি। মানুষের দোষ গুণ নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই আছে ।
শত্রুতা নারী পুরুষ উভয়ে করে। আমার শত্রুতা হাবিবুর রহমান আর মৃদুল দাশগুপ্ত যেমন করে, খালেদা বেগম আর মল্লিকা মিত্র তেমনই করে। শত্রুতা লিঙ্গের ওপর নির্ভর করে না। নারী পুরুষ যে কেউ যে কারো বন্ধু বা শত্রু হতে পারে। আমরা কখনও বলি না, পুরুষ পুরুষের শত্রু। জরিপ করে দেখ, পৃথিবীতে বড় বড় সব শত্রুতা পুরুষদের মধ্যেই হচ্ছে, পুরুষেরা পুরুষদের প্রতিদিন ঠকাচ্ছে, ল্যাং মারছে, আঘাত করছে, ফাঁদে ফেলছে, মেরে ফেলছে। মেয়েরা মেয়েদের শত্রু --- এই কথাটা বলে পুরুষেরা নারীবিরোধী পুরুষতন্ত্র টিকিয়ে রেখে মেয়েদের বিরুদ্ধে যে শত্রুতা করছে তার থেকে চোখ অন্যদিকে ঘোরাতে চায়। দোষটা অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চায়। মেয়েরাও বোকা, পুরুষের শিখিয়ে দেওয়া মিথ্যেটা দিন রাত আওড়ায়।
মেয়েরা পুরুষ শাসিত সমাজে সুযোগ সুবিধে কম পায় বলে পুরুষের মতো ধংসাত্মক কাজ কর্মে অতটা হাত পাকায়নি। কিন্তু একবার মসনদে উঠে গেলে কিন্তু পুরুষের চেয়ে সামান্যও কম নয় তাদের অরাজকতা। আমি কাছ থেকে যত নীচ, হীন, কুচুটে, ক্ষুদ্র, স্বার্থান্ধ, অবিবেচক, নিষ্ঠুর, নির্দয়, লোভী মেয়েমানুষ দেখেছি, তত অন্য কেউ হয়তো দেখেনি। আমার বড় দুই ভাইয়ের স্ত্রীরা হেন কুকর্ম নেই পৃথিবীতে করতে পারে না, আমার বাবা মা'কে অবর্ণণীয় কষ্ট দিয়েছে, কিন্তু তাঁদেরই বিশাল সম্পত্তি ভোগ করছে এখন একা একা, ছলে বলে কৌশলে তাঁদের দুই কন্যাসন্তানকে উত্তরাধিকার থেকে সম্পুর্ণ বঞ্চিত করে। তারপরও আমি বলি না মেয়েরা মেয়েদের শত্রু। কারণ ওই ক্ষুদ্র মেয়েমানুষগুলো আমি এবং আমার বোন -- আমরা মেয়ে বলে শত্রুতা করছে না, আমরা পুরুষ হলেও করতো। আমরা পুরুষ হলেও যদি আমাদের মতো উদার, নিঃস্বার্থ, শান্তিপ্রিয় এবং ক্ষমতাহীন হতাম, করতো।
(লেখকের ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/১ জুলাই ২০১৭/এনায়েত করিম