শিরোনাম
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০৯:২৮

ক্যান্সার রোগীও এখানে এসে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন বিনা চিকিৎসায়

সাজেদ রহমান

ক্যান্সার রোগীও এখানে এসে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন বিনা চিকিৎসায়

গ্রিসের একটি দ্বীপ। ছবি : সাজেদ রহমানের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

গ্রিসের একটি ছোট দ্বীপ ইকারিয়া। ২৫৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। সেখানে যেন মানুষের জীবনে এমন কিছু একটা ঘটেছে, যার ফলে ‘মৃত্যুকে ভুলতে বসেছেন’ তাঁরা! বা অন্যভাবে বললে বিষয়টা এমন, ‘অমরত্বের’ রহস্য জেনে ফেলেছেন!

বিস্ময়ে ভরা এই দ্বীপের মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর। এত বছর বয়স মানেই চোখের সামনে কুঞ্চিত চামড়া, ক্ষীণ দৃষ্টি, লাঠি ধরে চেয়ারে বসে থাকার যে ছবি ফুটে ওঠে, তার সঙ্গে ইকারিয়ার বাসিন্দাদের কোনো মিল পাবেন না। ১০০ বছরেও লাঠি-নির্ভর নন এখানকার বাসিন্দারা। পাহাড়ি সিঁড়ি ভেঙে একাই উঠে যান গির্জায়।

শয্যাশায়ী, মরতে বসা ক্যান্সারের রোগীও এখানে এসে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন বিনা চিকিৎসায়। তারপর হৈ হৈ করে কাটিয়ে ফেলতে পারেন অনেক বছর! এমনই জাদু রয়েছে এই দ্বীপে। যেমনটা হয়েছিল ইকারিয়ার বাসিন্দা স্ট্যামাটিস মোরাইটিসের সঙ্গে। দীর্ঘদিন স্ট্যামাটিস ইকারিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে আমেরিকার ফ্লোরিডায় থাকতেন। ১৯৭৬ সালে একদিন হঠাত্ই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছেন তিনি। তাঁর মাত্র নয় মাস আয়ু রয়েছে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।

স্ট্যামাটিসের তখন ৬০ বছর বয়স। জীবনের শেষ সময়টা তিনি ইকারিয়ায় ছেলেবেলার বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে চেয়েছিলেন। ফলে স্ত্রীর সঙ্গে ইকারিয়ায় ফিরে আসেন তিনি। সেখানে আসার মাস খানেক পর থেকেই যেন তাঁর জীবনের ঘড়ি উল্টো দিকে চলতে শুরু করে। ক্রমে সুস্থ বোধ করতে শুরু করেন তিনি। শয্যাশায়ী মানুষটা একাই হাঁটাচলা শুরু করেন। এমনকি নিজের জমিতে চাষ করে অলিভও ফলান! ৯০ বছর পর্যন্ত বেঁচেছিলেন তিনি। এ রকম ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। 

১০০ পার করা ইকারিয়ার বাসিন্দা গ্রেগরি সাহাস ৭০ বছর ধরে দিনে অন্তত ২০টা সিগারেট খেতেন। তা সত্ত্বেও এক অ্যাপেনডিসাইটিস সংক্রমণ ছাড়া আর কোনো অসুখ সারা জীবনে ছুঁতে পারেনি তাকে। এখানকার বাসিন্দারা আজও ঘড়ির উপর নির্ভরশীল নন। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দোকান খোলেন। লাঞ্চে নিমন্ত্রিত অতিথিরা দুপুর ১২টাতে আসতে পারেন, আবার সন্ধ্যা ৬টাতেও। এখানে সবাই নিজের মর্জির মালিক। আর তাতে কারও কোনো সমস্যাও নেই। ছোট্ট এই দ্বীপে সকলেই একটা পরিবারের মতো বাঁচেন। টাকা-পয়সা নিয়ে কেউই মাথা ঘামান না। আর তাই ভীষণ স্ট্রেস মুক্ত জীবন এখানে। বেশি শাক-সব্জি, ফল খান তাঁরা। ফাস্ট ফুড একেবারেই চলে না এখানে। মাছ-মাংসও পরিমাণে খুব কম খান এখানকার বাসিন্দারা। মৎস্যজীবী, চাষি, পশুপালন এগুলোই এখানকার মানুষের মূল জীবিকা। আর পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আলাদা করে শরীরচর্চারও প্রয়োজন হয় না। দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই সেটা সম্পূর্ণ হয়।

ইকারিয়ানরা স্থানীয় মদ খান। কিন্তু তা কখনও দু’গ্লাস অতিক্রম করে না। রাতে ঘুমনোর আগে তাঁরা এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হার্বাল চা খান। কোনো স্ট্রেস না থাকার কারণে তাঁদের ঘুমও পর্যাপ্ত হয়, যা শরীর সুস্থ রাখার অন্যতম উপায়। ভাবতে অবাক লাগলেও বয়স তাঁদের যৌবনেও ছাপ ফেলতে পারে না। তাই ৮০ শতাংশ ইকারিয়ান ৬৫ থেকে ১০০ বছরেও সম্পূর্ণ সুস্থ এবং স্বাভাবিক যৌন জীবন পর্যন্ত উপভোগ করেন। ইউনিভার্সিটি অব আথেন্স-র এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। ২০০০ সালে ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক এক্সপ্লোরার এবং লেখক ড্যান বুয়েটনার এই দ্বীপের জীবনযাপন নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন, যার নাম ‘দ্য ব্লু জোনস সলিউশন’। মূলত ইকারিয়াদের দীর্ঘায়ু হওয়ার ‘রহস্য’ লেখা রয়েছে ওই বইয়ে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শতায়ুর সংখ্যা এই দ্বীপে কেন? কেন এখানে মানুষ কম অসুখে ভোগেন? বিশ্বে ভয়ানক হারে বাড়তে থাকা ক্যান্সার এবং হৃদরোগ এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে দেখাই যায় না, সেটা কী ভাবে সম্ভব? প্রচুর গবেষণাও হয়েছে এ নিয়ে। গবেষণায় বারবারই তাঁদের লাইফস্টাইলের বিষয়টি উঠে এসেছে। তাঁদের চিন্তামুক্ত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভাস এবং সর্বোপরি এই দ্বীপের জলবায়ু— এই তিনটি কারণের জন্যই ‘মৃত্যুকে ভুলতে বসেছেন’ এঁরা, এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

সর্বশেষ খবর