৩০ মার্চ, ২০২০ ০৯:০৭

করোনায় বাংলাদেশে কত মানুষ মারা যাবে?

ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন

করোনায় বাংলাদেশে কত মানুষ মারা যাবে?

ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন

গতকাল একটি অখ্যাত নিউজ পোর্টাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে বলেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে কুড়ি লাখ লোক মারা যাবে। অমনি শুরু হয়ে গেছে ফেসবুকে শেয়ার। আসলেই কী তাই? একেবারে কুড়ি লাখই মারা যাবে? একজন কম বা বেশী নয়? এই যে কুড়ি লাখ মারা যাবে বললেন, এটার ভিত্তিই বা কী? এটা কি তারা স্বপ্নে পেয়েছেন নাকি মিটিংয়ে বসে বা কয়েকজনের সাথে আলাপ করে ঠিক করেছেন? আসুন জেনে নেই এসব ভবিষ্যদ্বাণীর ভিত্তি কী?

যখনি কোন লোকালয়ে সংক্রামক রোগের মহামারী দেখা দেয়, তখন পরিসংখ্যানবিদ ও এপিডেমিওলজ্স্টরা মিলে পরিসংখ্যানের সূত্র দিয়ে (mathematical modelling of infectious disease) ওই রোগে কতজন আক্রান্ত হবে সেই ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এই প্রেডিকশন বা ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য গাণিতিক মডেলিংয়ে অনেকগুলো assumption বা অনুমান ব্যবহার করা হয়। পুরো মডেলিংয়ের অ্যাকুরেসি নির্ভর করে এই অ্যাজাম্পশনসমূহের উপর। এটাকে আমি বলি গাণিতিক এক খেলা। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, নীতি নির্ধারকরা যাতে অসুখের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে একটা ধারণা পেতে পারে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন।

আমি তাই মডেলিংভিত্তিক ভবিষ্যদ্বাণী পাঁচ লাখ না কুড়ি লাখ, তাতে আটকে না থেকে সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়াতে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেবার পক্ষে। এটা সরকারের জন্য একটা সুবর্ণ সুযোগও বটে। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, করোনায় বাংলাদেশে পাঁচ হাজার লোক মারা গেলো। দিনের শেষে সরকার তখন কৃতিত্ব দাবি করে বলতে পারবে, তাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই তারা অসংখ্য প্রাণহানি কমাতে পেরেছে।

বাংলাদেশে করোনার ছোবল কত লঘু বা মারাত্মক হবে, তার একটা চিত্র আমরা আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যেই পাব বলে আমার নিজস্ব ধারণা। সাধারণত, একটা দেশের বা লোকালয়ের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলো অসুখের মহামারীর মাত্রা নির্ধারণ করে তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তবে কোন লোকালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি প্রকৃত অবস্থা নিয়ে লুকোচুরি খেলে, সেক্ষেত্রে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ইটালিতে গুরুতর আকার ধারণ করার এক সপ্তাহ আগেও সে দেশের সরকার সমস্যাটিকে গুরুত্ব দেয়নি। সে দেশের মন্ত্রীরা বারবার বলেছে, অর্থনীতির চাকাকে তারা থামতে দেবে না। মন্ত্রীরা বিশাল জনসমাবেশে গিয়ে সবার সাথে হ্যান্ডশেক করে বোঝাতে চেয়েছে, ভয়ের কিছু নাই, উন্নয়নের গতি থামতে দেওয়া যাবে না (প্লিজ, সি অ্যাটাচড)। বাকিটা তো ইতিহাস, আজ সারা পৃথিবীই জানে।

বাংলাদেশের জন্য সবসময় প্রাণ কাঁদে। মন বলে, করোনায় বাংলাদেশের কিছু হবে না। কিন্তু বিজ্ঞান এবং অন্য দেশের অভিজ্ঞতায় ভয় লাগে। মনে হয়, যদি করোনা ঝড় শুরু হয়, বাংলাদেশ সামলাতে পারবে তো? তবু বাংলাদেশের জন্য শুভ কামনা।

লেখক: চেয়ারম্যান, ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এফডিএসআর)।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) 
বিডি প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর