২ এপ্রিল, ২০২০ ১৩:০৫

''শুনেছি, বাঙালির নাকি লাঠির বাড়ি ছাড়া কাজ হয় না''

আমিনুল ইসলাম

''শুনেছি, বাঙালির নাকি লাঠির বাড়ি ছাড়া কাজ হয় না''

আমিনুল ইসলাম

আমেরিকায় গতকাল এক দিনে এক হাজারের উপর মানুষ মারা গিয়েছে করোনাভাইরাসে। এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। সব মিলিয়ে আমেরিকায় করোনা রোগী'র সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখের মতো এখন! সংখ্যাটা কয়েক কোটি'তে গিয়ে দাঁড়াবে আর কয়েক দিনের মাথায়!

আমেরিকার নিউইয়র্ক এখন মৃত্যুপুরী। এমনকি আমার পরিচিত মানুষজনকে মরে যেতে দেখছি!

নিউইয়র্কে থাকে, এমন বাংলাদেশির সাথে আমি কথা বলেছি, যারা নিজেরা অসুস্থ কিন্তু এরপরও হাসপাতালে যাচ্ছে না। কারণ হাসপাতালগুলো'তে জায়গা নেই।

হ্যাঁ, সেই আমেরিকা। যারা নিজেদের পৃথিবীর এক নাম্বার উন্নত দেশ হিসেবে দাবি করে। সেই আমেরিকায় এখন পশু-পাখির মতো মানুষ মারা যাচ্ছে।

এখন হয়ত নিউইয়র্কে সব চাইতে বেশি মারা আচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহ পর পুরো আমেরিকা জুড়ে'ই চলবে এই মৃত্যু'র এই মিছিল।

খোদ হোয়াইট হাউজ এখন বলছে- আমেরিকায় হয়ত দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষ মারা যেতে পারে, যদি তারা সব কিছু এখন ঠিক-ঠাক মতো করে!

অর্থাৎ কেউ যদি ঘরের বাইরে বের না হয়, ডাক্তার'রা সবাই যদি সুস্থ থেকে চিকিৎসা দিতে পারে; হাসপাতালগুলো যদি রোগী ভর্তি করাতে পারে; তাহলে হয়ত দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষ মারা যাবে নিশ্চিতভাবেই।

আর এইসব কিছু যদি ঠিক মতো না যায়; তাহলে মৃত্যু'র সংখ্যা ১০ লাখের উপর ছাড়িয়ে যাবে।

হ্যাঁ, ঠিক'ই পড়ছেন-১০ লাখ। নিশ্চিত জেনে রাখুন সংখ্যাটা এর আশপাশে'ই থাকবে!

এদিকে গতকালও স্পেনে প্রায় এক হাজারের মতো মারা গেছে। ইতালিতেও মৃত্যু'র মিছিল শেষ হচ্ছে না। ইংল্যান্ডে গতকাল পাঁচশো'র উপর মানুষ মারা গেয়েছে। নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামেও মৃত্যু'র মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। আমার পাশের দেশ সুইডেনেও শুরু হয়েছে মৃত্যু'র মিছিল। এইসব হচ্ছে হাসপাতালে যারা মারা গিয়েছে তাদের সংখ্যা। এর বাইরে হাজারে হাজারে মানুষ মারা যাচ্ছে নিজেদের ঘরে! ওই সংখ্যাগুলো হিসাবের বাইরে!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার এই দেশগুলো কেন দেখতে দেখতে মৃত্যুপুরী'তে পরিণত হলো? কেন এরা এই মৃত্যু থামাতে পারছে না?

উত্তরটা খুব সোজা।

এরা এদের নাগরিকদের ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। যেমন ধরুন সুইডেনে এখনও মানুষ স্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে! সেখানে সরকার এখনও কোন জরুরি অবস্থা ঘোষণা দেয়'নি!

এই এক'ই কাজ করেছিল ইতালি, স্পেন, ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশগুলো। এমনকি আমি যেই দেশে থাকি, সেই এস্তনিয়া'তে এখনও মানুষ মনের আনন্দে বের হতে পারছে। যদিও দুই জনের বেশি এক সাথে হাঁটা যাবে না।

এরা যখন টোটাল লক-ডাউনে গিয়েছে; ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সব জায়গায়। তাই মৃত্যু'র মিছিল আর থামছে'ই না।

আমার সত্যি'ই জানা নেই ইউরোপ- আমেরিকার এই দেশ গুলো আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে কিনা।

যেই দেশগুলোতে মানুষজন ৮০-৯০ বছর বয়সেও মনের আনন্দে পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়; সে দেশের মানুষগুলো এখন চোখের সামনে দেখছে মৃত্যু। এমনকি ৩০- ৪০ বছর বয়সী মানুষ ভাইরাসের কাছে পরাজিত হয়ে মরে যাচ্ছে!

ইউরোপ-আমেরিকা যেই ভুল করেছে; আমাদের কোন ভাবেই উচিত হবে না সেই ভুল করা।

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত মোটামুটি ভালো অবস্থায় আছে। আমি জানি করোনায় অনেকে'ই হয়ত মারা যাচ্ছে বাংলাদেশেও। তবে এখনও মহামারী আকার হয়ত ধারণ করেনি।

পুরো এপ্রিল মাস'টা খুব'ই গুরুত্বপূর্ণ। কোনভাবে এপ্রিল পুরোটা আর মে মাসের অর্ধেক যদি আমরা সবাই ঘরে বসে কাটিয়ে দিতে পারি; অন্তত আমার ধারণা এই যুদ্ধে হয়ত ইউরোপ- আমেরিকা জয়ী হতে না পারলেও আমরা জয়ী হবো।

আমি করোনা পরিস্থিতি নিয়ে একদম প্রথম থেকে লিখে আসছি। যখন বাংলাদেশে কেউ হয়ত করোনা নিয়ে কিছু বলছিল'ই না।

আমি নিজে চাইলে'ই দেশে ফেরত যেতে পারতাম যখন ইউরোপের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছিলো।

নিজে ফেরত না গিয়ে আমি বরং উল্টো লিখেছি- ইউরোপ থেকে কাউকে ওই মুহূর্তে বাংলাদেশে ঢুকতে দেবেন না।

আপনারা শুনেছিলেন, হয়ত একটু দেরি করেছেন।

এরপর স্কুল-কলেজ বন্ধ করার কথাও লিখেছি। শুনেছেন। বলেছিলাম, কারফিউ জারি করতে; সেটা না করলেও মোটামুটি সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছেন।

কিন্তু সমস্যা'টা হচ্ছে সবাই এটা পুরোপুরি মানছে না ঠিক মতো।

আপনারা যারা অনেক দিন ধরে আমার লেখার সাথে পরিচিত এবং যারা আমাকে কাছ থেকে চেনেন; তারা হয়ত জেনে থাকবেন, আমি খুব'ই লিবারেল একজন মানুষ।

কোন মানুষকে শারীরিকভাবে আঘাত করার পক্ষে আমি নই। এমনকি সে যদি চিহ্নিত আসামিও হয়। কোন মানুষকে জোর করে কোন কাজ করিয়ে নেয়ার পক্ষেও আমি নই।

কিন্তু বর্তমান পৃথিবী যেই পরিস্থিতে এসে দাঁড়িয়েছে; তাতে আমাকে কিছু কথা বলতেই হচ্ছে।

আমার পরিচিত এমনকি শিক্ষিত মানুষ গুলো এখনও
-মনের আনন্দে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) পরে বাইরে বের হয়ে এক'ই চায়ের কাপে চা খাচ্ছে মোড়ের দোকানে!
-এদের মাঝে অনেকে'ই আবার রেস্টুরেন্ট খোলা থাকাতে সেখানে গিয়ে আড্ডাও দিচ্ছে; খাচ্ছেও!
-অনেকে আবার মসজিদে গিয়ে নামাজও পড়ছে!
-অনেকে আড্ডা দিতেও বের হচ্ছে!
-অনেক'কে দেখতে পাচ্ছি রিলিফ নিতে এসে এক সঙ্গে জড় হচ্ছে!

এমন অনেক কিছু'ই হচ্ছে; যেটা হওয়া উচিত না। কাল আবার জুম্মার দিন। অনেকে হয়ত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়বে।

এই জন্য এই লেখা লিখতে বসলাম।

দেখুন বেঁচে থাকলে নামাজ পড়তে পারবেন জীবনভর। আপনার সামান্য ভুলের খেসারত হয়ত পুরো জাতিকে দিতে হতে পারে। একজনের করোনাভাইরাস হওয়া মানে হাজার হাজার মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা।

আপনার যদি নামাজ পড়তে মন চায়, বাসায় পড়ুন। চা খেতে মন চাইলে বাসায় খান। আড্ডা দিতে মন চাইলে, দরকার হয় মন খারাপ করে বসে থাকুন। নইলে টেলিফোনে কথা বলুন কিংবা অন্য যা ইচ্ছে ঘরে বসে করুন।

আর যেটা বলার জন্য এই লেখার অবতারণা- সরকারের উচিত হবে কেউ যদি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আজ থেকে যদি ঘর থেকে বের হয়, সোজা জেলে দিয়ে দিন। দরকার হয় দুই একটা ভিডিও করে ছেড়ে দিন। যাতে মানুষজন ভয় পায়। নইলে জরিমানা করুন। শুনেছি, বাঙালির নাকি লাঠির বাড়ি ছাড়া কাজ হয় না। যদিও আমি এই মতের বিরুদ্ধে। এরপরও বৃহত্তর স্বার্থে এমন পরিবর্তিত পরিস্থিতে এই আমাকে'ই বলতে হচ্ছে- দরকার হয় লাঠির বাড়ি দিয়ে হলেও এদের ঘরে ঢুকান। মানুষ যাতে ভয় পায়, কয়েকটা ভিডিও করে ছেড়ে দিন।

রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ করে দিন। পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকান বন্ধ করে দিন। শুধু মুদি'র দোকান খোলা থাকবে। যেখানে জরুরি খাদ্য পাওয়া যাবে। মসজিতে জামাত আপাতত নিষিদ্ধ করে দিন। মন্দিরে যাওয়ার দরকার নেই। কোন ধর্মীয় জমায়েতের দরকার নেই। কোন রকম জমায়েতের'ই দরকার নেই। রিলিফ দেয়ার জন্যও জড় হওয়া যাবে না। বাসায় বাসায় গিয়ে দিয়ে আসুন, বস্তিতে গিয়ে নিরাপদ দূরত্বে থেকে খাবার দিয়ে আসুন।

এই এপ্রিল মানুষ'টা খুব'ই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি এভাবে বের হতে থাকি, তাহলে শুধু আমার মতামত না; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে- বাংলাদেশে ১০ লাখের মতো মানুষ মারা যেতে পারে।

আমি নিজে দেশে যাইনি; স্রেফ দেশে থাকা মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে। ইউরোপে এখানে বাঁচি-মরি ঠিক নেই। অন্তত আমার দেশের এই মানুষগুলো বেঁচে থাক।

যারা এভাবে বাইরে বের হচ্ছে, আমি তাদের দোষ দেই না। কারণ আমরা সবাই মিলে এমন সমাজ'ই গড়ে তুলেছি; যেখানে এমন'কি শিক্ষিত মানুষরাও সচেতন না।

কোনভাবে এই এপ্রিল মাসটুকু মানুষগুলোকে জোর করে ভেতরে ঢুকিয়ে রাখুন।

এক মাস কম খেয়ে থাকলে কিছু হয় না। এরপরও বেঁচে থাকা যাবে। আর যারা খুব গরীব, তাদের আপনারা না হয় চিড়া-মুড়ি দিয়ে আসুন। এক মাস এই খেয়ে'ই থাকুক। সমস্যা নেই। বেঁচে থাকলে পোলাও-মাংস খেতে পারবে।

একটা মাস'ই তো কেবল।

জরুরী স্বাস্থ্য সেবা আর খাদ্যসামগ্রী কেনা ছাড়া আর কোন কারণে কেউ যদি ঘর থেকে বের হয়- সোজা জেলে ভরে দিন, নইলে লাঠির বাড়ি দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিন।

বৃহত্তর স্বার্থে এই আমার মতো মানুষ কোন এক দিন এমন কথাও বলেছিল; এই জন্য হয়ত ভবিষ্যতে আমাকে সমালোচনা সহ্য করতে হবে। সেটা আমি মাথা পেতে নিবো।

এরপরও মানুষগুলো বেঁচে থাকুক।

ইউরোপ-আমেরিকা হয়ত এই যুদ্ধে পরাজিত হতে যাচ্ছে। আমরা না হয় জয়ী হই এই যুদ্ধে।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর