১৮ জুলাই, ২০২১ ১৬:৩৭

পশুর হাটে জাল টাকা থেকে সতর্ক থাকুন

রিয়াজুল হক

পশুর হাটে জাল টাকা থেকে সতর্ক থাকুন

রিয়াজুল হক

আগামী ২১ আগস্ট পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। ঈদের কয়েক দিন বাকি আছে। পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় বাড়ছে। কিছু মুনাফার আশায় অনেক কৃষক সারা বছর গরু-ছাগল পালন করেন থাকেন। সেগুলো নিয়েই তারা পশুর হাটগুলোতে হাজির হয়।

অনেক সময় দেখা যায়, কিছু অসাধু জাল নোট কারবারিদের অপতৎপরতার জন্য অসহায় কৃষকদের চোখের জল ছিল একমাত্র সম্বল। অনেকেই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে পশু পালন করেছেন। জাল নোট কারবারিদের খপ্পরে পড়ে ভিটে মাটিও বিক্রি করে দিয়েছেন। কোরবানির হাটগুলোতে এমনিতেই পশু বিক্রির খুব চাপ থাকে। তিল পরিমাণ ঠাঁই থাকে না। কেনাবেচার এই ব্যস্ততার মাঝে এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ জাল টাকা ছড়িয়ে চলে। ভীড়ের মাঝে সাধারণ মানুষের কিছুটা সচেতনতার অভাব এবং জাল নোট কারবারিদের নিত্য নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন এই সমস্যা সকলকেই ভাবিয়ে তুলেছে। বড় নোটের ক্ষেত্রে জাল করার ঘটনাগুলো বেশি ঘটে থাকে। এজন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ৫০০ এবং ১০০০ টাকা মূল্যমানের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত আসল ব্যাংক নোটের কিছু সহজ বৈশিষ্ট্য, যা খালি চোখে দ্রুত বোঝা যায়, আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন।

কাগজ: নোটটি সিনথেটিক ফাইবার মিশ্রিত অধিক টেকসই কাগজে মুদ্রিত।

ইন্টাগ্লিও লাইন: নোটের ডানদিকে আড়াআড়িভাবে ইন্টাগ্লিও কালিতে ৭টি সমান্তরাল লাইন আছে।

অসমতল ছাপা: নোটের সামনের দিকে ইন্টাগ্লিও কালিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুদ্রিত।

অন্ধদের জন্য বিন্দু: ১০০০ টাকার নোটের ডানদিকে অন্ধদের জন্য ৫টি ছোট বিন্দু; ৫০০ টাকার নোটের ডানদিকে অন্ধদের জন্য ৪টি ছোট বিন্দু রয়েছে যা হাতের স্পর্শে উচু নিচু অনুভূত হবে।

রং পরিবর্তনশীল হলোগ্রাফিক সুতা: নোটের বাম পাশে ৪ মিলিমিটার চওড়া নিরাপত্তা সুতা: যাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো ও ৫০০/১০০০ টাকা লেখা আছে; সরাসরি দেখলে লোগো ও ৫০০/১০০০ টাকা সাদা দেখাবে; কিন্তু পাশ থেকে দেখলে বা ৯০ ডিগ্রিতে নোটটি ঘোরালে তা কালো দেখাবে।

জলছাপ: কাগজে জলছাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি; প্রতিকৃতির নিচে অতি উজ্জ্বল ইলেক্ট্রোটাইপ জলছাপে ৫০০/১০০০ লেখা আছে এবং জলছাপের বামপাশে বাংলাদেশ ব্যাংকের উজ্জ্বলতর ইলেক্ট্রোটাইপ জলছাপ রয়েছে।

ব্যাকগ্রাউন্ড মুদ্রণ: ৫০০/১০০০ টাকার নোটের সামনের দিকে পটভূমি বা ব্যাকগ্রাউন্ডে হালকা অফসেটে জাতীয় স্মৃতিসৌধ রয়েছে।

নোটের পেছন ভাগ: ১০০০ টাকার নোটের পেছনের দিকে ইন্টাগ্লিও কালিতে জাতীয় সংসদ ভবন মুদ্রিত আছে যা হাতের আঙ্গুলের স্পর্শে অসমতল অনুভূত হবে। ৫০০ টাকার নোটের পেছনের দিকে ইন্টাগ্লিও কালিতে বাংলাদেশের কৃষি কাজের দৃশ্য মুদ্রিত আছে যা হাতের আঙ্গুলের স্পর্শে অসমতল অনুভূত হবে।

রং পরিবর্তনশীল কালি: ১০০০ টাকার ডানদিকের কোণায় ১০০০ লেখাটি সরাসরি তাকালে সোনালি এবং তির্যকভাবে তাকালে সবুজ রং দেখা যাবে। ৫০০ টাকার ডানদিকের কোণায় সরাসরি তাকালে ৫০০ লেখাটি লালচে এবং তির্যকভাবে তাকালে সবুজ রং দেখা যাবে।

কোরবানির পশুর হাটে পশু ব্যবসায়ীদের নোট যাচাইকরণের জন্য বিভিন্ন তফশিলী ব্যাংক জালনোট সনাক্তকারী মেশিনের সাহায্যে অভিজ্ঞ ক্যাশ কর্মকর্তাদের দ্বারা ঈদের পূর্বরাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে পশু ব্যবসায়ীদেরকে বিনা খরচে টাকা গণনাসহ জাল নোট সনাক্তকরণে সাহায্য করে থাকে। এই সুযোগ প্রতিটি পশু ব্যবসায়ীকে গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যস্ততার সুযোগ নেই। ধীরে সুস্থে যাচাই-বাছাই করেই পশু বিক্রির টাকা গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়াও জাল টাকা শনাক্তের জন্য কিছু সাধারণ বিষয় আমাদের মনে রাখা উচিত। যেমন, জাল টাকার নোটগুলো নতুন হয়ে থাকে। কারণ জাল টাকার নোটগুলো সাধারণ কাগজের তৈরি; তাই পুরাতন হয়ে গেলে সেই নোট নাজেহাল হয়ে যায় বা তা অতি সহজেই বোঝা যায় । জাল টাকার নোট ঝাপসা দেখায়। আসল নোটের মত ঝকঝকে থাকে না। সেটা নতুন হোক আর পুরাতন হোক এবং কিছুটা পাতলা বা হালকা ধরনের যা একজন আরেকজনের কাছ থেকে টাকা লেনদেন করার সময় একটু মনযোগ সহকারে দেখলেই বোঝা যায়। জাল নোট হাতের মধ্যে নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ করে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলে তা সাধারণ কাগজের মতো ভাঁজ হয়ে যাবে। আর আসল নোট ভাঁজ হবে না। যদিও সামান্য ভাঁজ হবে তবুও তা জাল নোটের ক্ষেত্রে তুলনামূলক অনেক বেশি। 

কুরবানির সময়ে পশুর হাটগুলোতে ভিড় অনেক বেশি হয়ে থাকে। তাই প্রতিটি মানুষকেই জাল টাকা প্রতিরোধের জন্য সতর্ক থাকা উচিত। কারণ হাটে যারা যায়, সবাই কুরবানির পশু কেনার উদ্দেশে যায় না।


লেখক : যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক


বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর