১৪ আগস্ট, ২০২২ ১০:১৯

বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো প্রশ্নে কানাডার অবস্থান

আমাদের দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতদের ভূমিকা

লুৎফর রহমান রিটন

বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো প্রশ্নে কানাডার অবস্থান

লুৎফর রহমান রিটন

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা এবং জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিষয়ে কানাডার ধারণা বিশ্বাস কিংবা অবস্থান সংক্রান্ত কিছু ভ্রান্তির নিরসন হওয়া জরুরি। কিন্তু যথাযথ কূটনৈতিক তৎপরতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়।

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে রণাঙ্গণে যুদ্ধ করা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তৌফিকুল আরিফকে কানাডা স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাসের অনুমতি দেয়নি। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী মেজর নূর চৌধুরীকে কানাডায় নিরাপদ শেল্টার দিয়ে রেখেছে কানাডা।

একটি ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করি-
কানাডার কেন্দ্রীয় সরকারের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশি কানাডিয়ান ফয়সাল আরিফ। ২০০৭ সালে ফয়সাল তাঁর বাবা মুক্তিযোদ্ধা তৌফিকুল আরিফকে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে নিয়ে আসতে চান এবং কানাডা ইমিগ্রেশন বিভাগে যথাযথ অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদনের দশ বছর পরে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেয়ার অভিযোগে কানাডার ইমিগ্রশন বিভাগ আবেদনটি প্রত্যখ্যান ও বাতিল করে দেয়। 
সাধারণত ইমিগ্রেশনের আবেদন নাকচ বা প্রত্যাখ্যান হলে তার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ থাকে, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তৌফিকুল কোনো আপিলও করতে পারবেন না বলে জানানো হয়। 
আপিলের সুযোগ থেকেও তিনি বঞ্চিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াই করার অভিযোগে। 
  
একটু নজর ফেরানো যেতে পারে কানাডার ইমিগ্রেশন আইনের দিকে-

কানাডার ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী, একজন বিদেশি নাগরিক যদি কখনো কোনো সরকারকে সহিংসতা বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উৎখাতের চেষ্টা করেন বা কাউকে সেই প্রচেষ্টায় উৎসাহিত করেন বা সেই বিদেশি নাগরিক যদি কোনো সন্ত্রাসী দলের সদস্য বা সহযোগী হিশেবে কাজ করে থাকেন, তাহলে তিনি কানাডার স্থায়ী অভিবাসী বা নাগরিক হওয়ার অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। একটি অত্যাচারী, স্বৈরাচারী, একনায়কতন্ত্রী সরকারকে উৎখাতের জন্যে তার  বিরুদ্ধে সহিংস পন্থা অবলম্বন করলেও এই আইন প্রযোজ্য হবে।

অনেকের দৃষ্টিতে এই আইনটি গণতন্ত্র বিরোধী। কিন্তু মনে রাখতে হবে এটি কানাডার ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি আইন।  
অথচ কানাডার উদার ইমিগ্রশন আইন বা নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি মেজর নূর চৌধুরী, চার জাতীয় নেতা হত্যাকারী ক্যাপ্টেন কিসমত হাশেম, ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারী, মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন এবং খায়রুজ্জামান কানাডায় দীর্ঘদিন বসবাস করেছে এবং করছে, প্রায় একজন নাগরিকের মর্যাদায়। ইতোমধ্যে কিসমত হাশেম মারা গেছে। নাজমুল আনসারী বেঁচে আছে। শরিফুল নাম পালটে কানাডার কোনো একটি প্রদেশে আত্মগোপন করে আছে। 

(শেষমেশ খায়রুজ্জামান কানাডার বৈধ কাগজপত্র না পেয়ে মন্ট্রিল ছেড়ে গেছে। বর্তমানে সে মালয়েশিয়ায় বাস করছে। )    
প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কানাডার ইমিগ্রেশন আইনের এইরকম 'দ্বৈতনীতি' অনেকের কাছেই রীতিমতো বিস্ময়কর।  

০২
বহু বর্ণ বহু ধর্ম এবং বহু জাতি-গোষ্ঠীর অপরূপ সহ-অবস্থানের এক মোজাইক রাষ্ট্র- কানাডা। কানাডার মূল সৌন্দর্য এখানেই। 
মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকার- অন্ন বস্ত্র শিক্ষা চিকিৎসা বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করার দেশ হিসেবে,পরমত সহিষ্ণুতার দেশ হিসেবে, মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে,  সর্বোপরি মানবাধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কানাডা একটি অনন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শীর্ষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবার গৌরব অর্জন করেছে দুনিয়াব্যাপী। 
কানাডার আইনে মৃত্যুদণ্ডের কোনো বিধান নেই। 
কানাডার আরাধ্য বিষয়-ফ্রিডম অব স্পিচ।

প্রতিটি মানুষের বলবার অধিকার, লিখবার অধিকার, আঁকবার অধিকার, গাইবার অধিকারে বিশ্বাসী কানাডা। তাই কানাডা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিপন্ন মানুষের নিশ্চিত ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল হবার গৌরব অর্জন করেছে। স্বদেশে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, বিপন্ন এবং হত্যার হুমকির মুখে বহু লেখক-শিল্পী-সাংবাদিক ও সমাজকর্মীর ঠাঁই মিলেছে কানাডায়।
অন্যদিকে, কানাডার মুক্ত উদার উন্মুক্ত মানবাধিকারের আইন কানুনের ফাঁক গলে বহু দেশের বহু ঘৃণ্য অপরাধী এবং খুনিদেরও অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে কানাডা, দিনে দিনে। মানবাধিকার আইনের এস্তেমাল করে মানবাধিকারের চরম শত্রুও পেয়ে গেছে কানাডায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ।  
নিজের দেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো অপরাধী (এমন কি খুনের দায়ে দণ্ডিত হলেও) যে কোনো উপায়ে পরিচয় লুকিয়ে কানাডায় একবার প্রবেশ করতে পারলেই কানাডার আইনে খুনিটা আমৃত্যু কানাডায় বসবাসের অভাবনীয় সুবিধা পেয়ে যায়।  
এবং 
কানাডায় অবস্থান করা কিন্তু স্বদেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে কানাডা কখনই তার নিজের দেশে ফেরত পাঠায় না। কারণ কানাডা মৃত্যুদণ্ডে বিশ্বাসী নয়।
কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার নৈতিকতা আর ভয়ংকর খুনিকে নিরাপদ শেল্টার দেয়ার নৈতিকতাকে একই মানবিক মূল্যবোধে বিচার করা যায় কি?  
সুবিচার আর মানবিকতার সঙ্গে কানাডার এই দৃষ্টিভঙ্গিটি বা অবস্থানটি সাংঘর্ষিক। এই বিধানটি বলবৎ ও কার্যকর থাকলে আগামীতে ভয়ংকর খুনিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল বা অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে কানাডা, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। 
   
০৩
কানাডার মতো একটি দেশ অপরাধী কিংবা খুনিদের অভয়ারণ্য বা স্বর্গরাজ্য হতে পারে না। আমরা অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করেছি- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকারী ১২জন খুনির চারজনই (মতান্তরে পাঁচজন) কানাডায় বসবাস করেছে নিরাপদে! একজন নাগরিকের সকল অধিকার সমেত। 
বঙ্গবন্ধুর বুকে সরাসরি ফায়ার করেছিলো যে সেনাসদস্য, সেই ঘাতক নূর চৌধুরী আজও বহাল তবিয়তে বৃহত্তর টরন্টোতে বসবাস করছে।   
কানাডার রাজধানী অটোয়ায় থাকি আমি। আমার পাশের শহরেই আমাদের জাতির পিতার হত্যাকারীও থাকে! মাঝে মধ্যেই মনটা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অসহায় বোধ করি। 
কানাডা শান্তির দেশ। মানবাধিকারের দেশ। এই কানাডা খুনিদের অভয়াশ্রম হতে পারে না! আমরা প্রতিবাদ করেছি। সরকারকে জানিয়েছি। সরকার আমাদের কথা দিয়েছে তারা খুনিকে বহিষ্কার করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও খুনিদের মিত্ররা আছে, খুনিদের মিত্ররা থাকে, মানবাধিকার রক্ষার মোড়কে। কিছু আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে কানাডা এখনো বহিষ্কার করেনি নূর চৌধুরীকে।

২০১১ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কানাডায় এসেছিলেন। তাঁর কন্যা পুতুল কানাডার অশোয়া শহরে থাকেন। কন্যার সঙ্গে যে এপার্টমেন্টে তিনি ছিলেন, তার খুব কাছের আরেকটি এপার্টমেন্টেই ছিলো ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা নূর চৌধুরীর বসবাস। ২০১১ সালের ২৫ মে দৈনিক 'কানাডা স্টার' একটা প্রতিবেদন ছেপেছিলো, যার শিরোনাম ছিলো--''বাংলাদেশি পিএম ভিজিটস্‌ ফ্যামিলি ইন শ্যাডো অব কিলার।'' প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো--''শেখ হাসিনা স্পেন্ডস উইক ইন অশোয়া, নট ফার ফ্রম ফাদার্স য়্যাসাসিন...।''

০৪
বিভিন্ন সময়ে কানাডায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের একাধিক রাষ্ট্রদূত খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কার্যকর কোনো ভূমিকা তো রাখেইনি বরং কেউ কেউ নূরকে সহায়তা করেছে গোপনে। এদের মধ্যে মুশতাক পুত্র রফিকউদ্দিন আহমেদ তাঁর দূতাবাস থেকেই বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীর নামে বাংলাদেশের একটি পাসপোর্ট ইস্যু করেছিলো। এই বিষয়ে একদিন বিস্তারিত কথা হয়েছিলো আমার, রফিকুলের সঙ্গে।

বিএনপি জামাত চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে ২০০২ সাল থেকে কানাডার অটোয়ায় বসবাসকালে বছরের পর বছর আমি অপেক্ষা করেছি বাংলাদেশের একটি পাসপোর্টের জন্যে। কিন্তু দূতাবাস আমাকে পাসপোর্ট দিতে বারবার অপারগতা প্রকাশ করছিলো।

আমাকে জানানো হচ্ছিলো--'বাংলাদেশ থেকে আপনার পাসপোর্টের ক্লিয়ারেন্স আসেনি। ওটা না আসা পর্যন্ত আমরা আপনার নামে কোনো পাসপোর্ট ইস্যু করতে পারি না।'  
এক পর্যায়ে আমি রাষ্ট্রদূত রফিকউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি এবং দূতাবাসে তার মুখোমুখি হই। তিনিও আমাকে জানান যে, 'বাংলাদেশ থেকে আপনার পাসপোর্টের ক্লিয়ারেন্স আসেনি। ওটা না আসা পর্যন্ত আমরা আপনার নামে কোনো পাসপোর্ট ইস্যু করতে পারি না।'

আমি তখন তাকে বলেছিলাম, কিন্তু আপনি বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর নূর চৌধুরীর নামে আপনার দূতাবাস থেকেই বাংলাদেশের একটি পাসপোর্ট ইস্যু করেছিলেন জনাব!

ঘটনাটা তিনি অস্বীকার করলে আমি পাসপোর্ট ইস্যুর তারিখ এবং সেই পাসপোর্টে ইস্যুকারী কর্মকর্তার নাম ও দূতাবাসের সিলমোহরের বিষয়টি বললে তিনি বলেছিলেন, 'নকল সিলমোহর বানিয়ে কেউ যদি ভুয়া পাসপোর্ট বানিয়ে নেয় তাতে আমাদের কি করার থাকে?'

আমি তখন টোকিও দূতাবাসে প্রথম সচিব পদে আমার কাজ করার সরেজমিন অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ এবং কাউকে পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে দূতাবাসের গোপন ক্ষমতা ও দূতাবাসের জন্যে বরাদ্দ হওয়া পাসপোর্টের সিরিয়াল নাম্বারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করলে তিনি নিশ্চুপ হয়ে যান। এ বিষয়ে আর কোনো কথা তিনি বলতে চাননি।

অর্থাৎ, আমার উত্থাপিত খুনি নূরকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট প্রদানের বিষয়টি সঠিক ছিলো। (চারদলীয় জোট সরকারের পুরো শাসনকালে পর্যন্ত আমি ''বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট বঞ্চিত'' ছিলাম। পরে ২০০৭ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে, আমি আমার পাসপোর্টের অধিকার এবং বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি পাই।)   
পরবর্তীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্রদূত রফিকউদ্দিন আহমেদের জায়গায় একাধিক নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, কোনো রাষ্ট্রদূতই জাতির জনকের খুনি নূরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কার্যত কোনো ভূমিকাই রাখেননি। 
এক্ষেত্রে স্মরণে আনতে পারি কানাডায় নিয়োগ পাওয়া রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান, ইয়াকুব আলী কিংবা মিজানুর রহমানের নাম। তাদের দায়িত্বকালে নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিতে বিপুল পরিমানে অর্থ বরাদ্দ হলেও সেই অর্থ নূরকে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগের পেছনে ব্যয় হয়নি। বরং সেই অর্থের সিংহভাগই হাপিস বা লোপাট হয়ে গেছে। বিশেষ করে কামরুল আহসানের নেপথ্য তৎপরতায় বড় অংকের টাকার যোগান এসেছিলো কোনো একটি ল ফার্মের পেছনে ব্যয়িত হবার জন্যে। যার ফলাফল আজতক বিশাল একটা শূন্য পর্যায়েই থেকে গেছে।

অর্থ কেলেংকারি সংক্রান্ত এই সকল দুর্নীতির তদন্ত নিশ্চয়ই একদিন হবে। 
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কানাডায় কোনো রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিগত সফরে এলেই কেবল নূর চৌধুরী বিষয়ে আমাদের দূতাবাস এবং রাষ্ট্রদূতদের তৎপরতা বেড়ে যায় বা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তিনি ফিরে গেলে সেই তৎপরতা আর দেখা যায় না। 
আরও একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। এমনিতে রাষ্ট্রদূতরা সারা বছর কিংবা কয়েক বছর খুনি নূর চৌধুরী বিষয়ে বিস্ময়কর রকমের নিরব থাকলেও মেয়াদ শেষ হবার আগে আগে কোনো কোনো রাষ্ট্রদূত অতি মাত্রায় তৎপরতা প্রদর্শনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নূর চৌধুরী ইস্যুটি মেয়াদ এক্সটেনশনে ভূমিকা রাখবে সেই দুরভিসন্ধিতেই এই তৎপরতা, সেটা বুঝতে কারো অসুবিধে হবার কথা নয়।     
দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূতরা আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীর বিষয়ে প্রকৃত সত্য প্রকাশ করেন না কিংবা অনেক সত্যই গোপন করেন। কিন্তু কেন করেন সেটা বোধগম্য নয়। এই রহস্য কি উন্মোচিত হবে না কোনোদিন? বিশেষ করে রাষ্ট্রদূতদের কর্মকাণ্ডে প্রায়শ প্রশ্ন জাগে মনে- প্রকারান্তরে এরা আসলে কার বা কাদের পারপাস সার্ভ করেন?

০৫
নিকট অতীতে বাংলাদেশের তৎকালীন একজন আইনমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী কানাডা সফর করে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে মিডিয়াকে বলেছিলেন--''কানাডা নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে।''
কিন্তু কানাডা জানিয়েছিলো--''এমন কথা তারা বলেননি।''
খুনি নূরকে ফিরিয়ে নেবার কাগজপত্রে স্বাক্ষর হবার আগে মিডিয়ায় এসব কথা বলা উচিত নয়। এটা কানাডা। নিয়ম এখানে সবার আগে মান্য। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাঝারি গোছের দু'একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললেই তো হবে না। কথা হতে হবে আরও উঁচু স্তরে। রাষ্ট্র বনাম রাষ্ট্রে।
মনে রাখতে হবে কানাডা মৃত্যুদণ্ডবিরোধী দেশ। 
প্রথমে কানাডাকে রাজি করাতে হবে। কানাডার সঙ্গে 'অপরাধী বিনিময় চুক্তি' সম্পাদন করতে হবে। তার আগে কানাডা কাউকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না। নিদেনপক্ষে একটি 'থার্ড কান্ট্রি'তে মানে অন্য আরেকটি দেশে অপরাধীকে হস্তান্তরে কানাডাকে রাজি করাতে পারলেই কেবল সম্ভব বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাওয়া। তার আগে নয়। 
আমরা অপেক্ষায় আছি, কানাডা সরকার খুনি নূর চৌধুরীকে একদিন এই দেশ থেকে বহিষ্কার করবে। কারণ, কানাডায় বৈধভাবে বসবাস করার প্রয়োজনীয় অনুমতি সে এখনো পায়নি। চার চারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তার ইমিগ্রেশন আবেদন।
নূর চৌধুরী নামের একজন অবৈধ অভিবাসীর পেছনে সুদীর্ঘকাল ব্যাপী কানাডা সরকার বিপুল পরিমাণে ব্যয় করছে ডলার, বিরামহীন।
মানবাধিকার রক্ষার নামে 'চিহ্নিত একজন কুখ্যাত খুনি'র পক্ষে আর কতোদিন দাঁড়িয়ে থাকবে কানাডা? 

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর