১৪ নভেম্বর, ২০২২ ১০:৩৭

‘ভালোবাসি বাংলাদেশ!’

আবুল হাসনাত মিল্টন

‘ভালোবাসি বাংলাদেশ!’

আবুল হাসনাত মিল্টন

রবিবারের রাস্তা প্রায় ফাঁকা। পাতায়া থেকে নির্ধারিত সময়ের দু ঘণ্টা আগেই ব্যাংকক এয়ারপোর্টে পৌঁছেছি। এয়ারপোর্টে ঢুকলে কেমনে যেন সময় কেটে যায়। বন্ধু শাহিন বলছে ডিউটি ফ্রি দোকান থেকে ওর জন্য বেনসন সিগারেট কিনে নিয়ে যেতে। মদের দোকানের এক কোনায় সিগারেটের আলাদা শেলফ, বাইরে থেকে দেখা যায় না। ধূমপান নিরুৎসাহিত করার জন্য নতুন নিয়ম দেখে ভালো লাগলো। শেলফের দরজা খুলে সিগারেটের কার্টুন হাতে নিয়েই ভয়ে রেখে দিলাম। প্রতিটি কার্টুনের গায়ে থাই ভাষায় লেখার পাশাপাশি অনেকগুলো বীভৎস ছবি। সেইসব ছবি দেখে ধূমপান করা তো দূরের কথা, বন্ধুর জন্য কেনার আগ্রহটাও হারিয়ে যায়।

থাই এয়ারওয়েজের প্লেন প্রায় পঞ্চাশ মিনিটে দেরিতে ছেড়েছে। ঢাকায় নেমেছে নির্ধারিত সময়ের চল্লিশ মিনিট পরে। ইমিগ্রেশন পেরিয়ে লাগেজ সংগ্রহ করতে গিয়ে শুনি দেরি হবে। প্লেন থেকে লাগেজ নামানোর যন্ত্রটা নষ্ট হয়ে গেছে। ওটার পরিবর্তে আরেকটা যন্ত্র এনে প্লেনের সাথে লাগাতে হবে। কোন সমস্যা নাই। কারণসহ বিলম্বের তথ্য জানিয়ে দিয়েছে, তাতেই আমি খুশি। শুধু টিপু, শাওন বুবু আর সুজন ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগছে। তারা সেই বারোটা থেকে এয়ারপোর্টের বাইরে অপেক্ষা করছে।

লাগেজের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। এক লোক এসে খুব আন্তরিকতার সাথে কথা বলা শুরু করলেন। অস্ট্রেলিয়ায় থাকি শুনে বেশ আহ্লাদিত বোধ করলেন বলে মনে হলো। আমার পেশা জানতে চাইলে বললাম, এখন টুকটাক লেখালেখি করি। আগে অনেককিছু করতাম। লাগেজ এলে কনভেয়ার বেল্ট থেকে নিজেই আমার লাগেজ দুটো ট্রলিতে তুলে দিলেন। আমি বিনয়ের সাথে ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, ‘আমার কাছে তো বাংলাদেশি কোন টাকা নাই। আমি আপনাকে কোন টাকা দিতে পারবো না যে’। ভদ্রলোক জিভে কামড় দিয়ে বললেন, ‘কী যে বলেন স্যার। টাকা লাগবে না। এত বছর এয়ারপোর্টে কাজ করি, এই প্রথম একজন কবিকে দেখলাম’। ভদ্রলোকের কথা শুনে আমি থ। আমি যে কবিতা লিখি এ কথা তো আমি তাকে বলিনি!

গ্রিন চ্যানেল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে এক অপরিচিত ভদ্রলোকের কাছ থেকে মোবাইল ফোন চেয়ে টিপুকে ফোন দিয়ে টার্মিনাল টু তে আসতে বললাম। আট সেকেন্ডে কথা শেষ করে ফোনটা ফেরত দিয়ে বললাম, ‘আমার কাছে তো বাংলাদেশি টাকা নাই ভাই’। ভদ্রলোক উল্টো বিব্রত বোধ করে বললেন, ‘কী যে বলেন ভাই। এই সামান্য কথা বলার জন্য টাকা দেওয়া লাগবে না’। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাতেই টিপু আর সুজন ভাই সামনে হাজির। টিপু এসেই আমার হাতে এক বান্ডিল টাকা গুজে দিয়ে বললো, ‘আগে এটা রাখ’।

এয়ারপোর্টে নেমে বিরক্ত হবার মত সামান্য যে দুয়েকটা ঘটনা ঘটে, তা মুহূর্তে তুচ্ছ হয়ে যায় চেনা-অচেনা মানুষগুলোর ভালোবাসার কাছে। শত সংকটে এটাই বাংলাদেশের শক্তি। 
ভালোবাসি বাংলাদেশ। চিয়ার্স!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর