১৪ মার্চ, ২০২৩ ১০:১০

আমার টিকিট কাটার পয়সায় তারা ভাত খায়

সাইফুল ইসলাম রিপন

আমার টিকিট কাটার পয়সায় তারা ভাত খায়

সাইফুল ইসলাম রিপন ও তার ফেসবুকে শেয়ারকৃত ডকুমেন্ট

আমি কানাডা প্রবাসী। ৮৬টা দেশ বেড়িয়েছি। দেশে-বিদেশে ভালো চাকরি করে নির্ধারিত বয়সের আগেই অবসর নিয়েছি। এখন জীবনটা উপভোগ করি। লেখালেখি, ছবি তোলা আর ভ্রমণেই কাটে সময়। এবার বাংলাদেশে প্রায় ৭ সপ্তাহের জন্য এসেছিলাম। ভ্রমণের উপরে আমার একটা বইও প্রকাশিত ও পাঠক সমাদৃত হয়েছে। (সাত রাতের কিলিমাঞ্জারো এগারো রাতের হিমালয়) আমার স্ত্রী, উনিও প্রায় ৬০ টা দেশে ভ্রমণ করেছেন। আমাদের কানাডার পাসপোর্ট থাকার কারণে, পৃথিবীর অনেক দেশের ভিসার প্রয়োজন হয় না। মোটামুটি যে দেশে যেতে চাই, প্লেনের টিকিট কেটে উঠে পড়ি। সেই আর্থিক সংগতিও আমাদের আছে। আমরা বেড়াতে গেলে কেনাকাটা কখনই করি না। শুধু বেড়ানোর উদ্দেশ্যেই যাই। ভারতের ইভিসাও আমাদের পাঁচ বছরের একাধিকবার প্রবেশের জন্য নেয়া। বাংলাদেশে এসে এবার ফেব্রুয়ারির শুরুতে নভো এয়ারে আমার স্ত্রী কলকাতা বেড়িয়ে আসে। তার শান্তিনিকেতন যাওয়ার খুব ইচ্ছা। দোল দেখতে। সেই ইচ্ছা থেকেই মার্চের ১ তারিখ সকালে বাংলাদেশ বিমানে কলকাতা যাওয়ার উদ্দেশ্যে আবারও ঢাকা এয়ারপোর্ট যান।

যথারীতি বাংলাদেশ বিমানের বোর্ডিং কার্ড নিয়ে, ইমিগ্রেশন পার হয়ে বিমানের গেটের সিকিউরিটি পর্যন্ত যান। বিশ্বের ১৫০টার বেশি এয়ারপোর্ট দিয়ে আমি গেছি। এই গেটে সাধারণত বোর্ডিং কার্ড আর পাসপোর্টের সঙ্গে নাম, চেহারা মিলিয়ে দেখে। আমার স্ত্রীর হাতে কানাডার পাসপোর্ট দেখে বিমানের সিকিউরিটির দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত মানুষটির মাথায় কী কাজ করে, আমার ধারণা নাই। খুটিয়ে খুটিয়ে সব পাতা দেখতে থাকে। কেনো এতো দেশ ঘুরেছেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন করতে থাকে। এক পর্যায়ে বলে আপনার পাসপোর্টে দুইটা পুরা পাতা খালি না থাকলে যেতে পারবেন না! কী আজগুবি!! আমার স্ত্রীর পাসপোর্টের কিছু কিছু পাতায় মাত্র একটা সিল আছে। আর এখন পৃথিবীর অনেক দেশে ঢোকার সময় পাসপোর্টে কোন সিল মারে না। এই সব সিলের আর কোনো গুরুত্ব নেই। সব অনলাইনে থাকে। যদি দেখে সিলে সিলে পাতা ভর্তি, খুঁজে খুঁজে খালি জায়গায় সিল মারে। অথবা সিলের উপর সিল মারে। কোনো কোনো দেশে ভিসা ইস্যু করার আগে পৃষ্ঠা খালি রাখার কথা বলা হতো। এখন ই ভিসার কারণে, সেটারও ব্যবহার নেই। কোলকাতা ঢোকার সময় তার পাসপোর্টের যে কোনো শূন্যস্থানে একটা সিল মারবে। একমাস আগে যখন নভো এয়ারে কোলকাতা যায়, তখনও তার পাসপোর্টে শূন্য পাতা ছিলো না, কই কোনো অসুবিধা তো হয়নি। অথচ এরা দাবি করে বসে দুই পাতা খালি না থাকলে যেতে পারবে না! আমার নিজের পুরানো পাসপোর্ট দেখাতে পারবো, যেটাতে সিলের উপর সিল। শেষ পাতাতেও কয়েকটা দেশের সিল। এমনকি ভারতেরও। এই ৮৬টা দেশ ভ্রমণের কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। সমস্যা হয়ে গেলো বাংলাদেশ বিমানে ঢাকা থেকে কোলকাতা যাওয়ার!

যাই হোক। আমরা কোনো অনৈতিক কাজে জীবনে জড়াইনি। কোনোদিন জড়াবোও না। আমার স্ত্রী তার ল্যাগেজ উঠিয়ে নিয়ে ফেরত আসেন। বাংলাদেশে আমার কিছুই নেই। আসি প্রাণের টানে। এই বয়সে, এই পরিবেশে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে অফুরন্ত ভালো সময় কাটে। পেশাতে একজন প্রকৌশলী, দেশে বিদেশে উচ্চতর লেখা পড়া করা এবং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কোম্পানিগুলিতে চাকরির অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা বিস্তর এবং বৈচিত্রময়। পাহাড়ে ওঠা থেকে শুরু করে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত আমার অনেক অনেক বিচরণ। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতে এমন বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতা খুব সাধারণ নয়। ঐ রকম একজন বাংলাদেশ বিমানের সিকিউরিটি গেটে কাজ করা মানুষের পক্ষে, সেটা বোঝার ক্ষমতা আছে বলে আমি মনে করি না। আমার এই সব দেশ বিদেশের বিচিত্র অভিজ্ঞতাগুলি লিখে মানুষকে জানানোর একটা লোভ থেকে বই প্রকাশ করি। আর সেই কারণেই বাংলাদেশ আসা। বিশ্বে বই প্রকাশের অনেক মাধ্যম আমার জানা আছে। তবুও বাংলাদেশে আসতে মন চায়।

শুধু এখানেই শেষ না। যখন বাংলাদেশ বিমানের কাছে টিকিটের টাকা ফেরত চাওয়া হয়ছে, তখন বিমান কর্তৃপক্ষ আমার ট্রাভেল এজেন্টকে বলেছে, কারণ হিসাবে, No Show লিখতে। আসল কারণটা বলা যাবে না! কতখানি জুলুম এবং অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর অধিকার এদের! 

সে যেটা করেছে, সেটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি এবং অন্যায়। ক্ষমতা দেখানোর বাহাদুরী। হয়তোবা আমার স্ত্রীর জীবনে আর কোনোদিন শান্তি নিকেতনে দোল যাত্রা দেখা হবে না! আবার সময় করে এই দোলের সময় এতদূর আসা হয়ে উঠবে কি না, কে জানে। সেটার মূল্য বিমানের নিরাপত্তার কর্মচারীর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। এমন একটা অবস্থায় ফেলেছে, যে কানাডিয়ান পাসপোর্ট নিয়ে দেশে আসলে, বের হতে গেলেও, একটা অনিশ্চিয়তায় ভুগতে হবে, ঐ সব সাহেবেরা যেতে দেবে তো! না জানি কী আইন বের করে! হয়তো বলতে পারে, আপনার পাসপোর্টটা একটু বাঁকা হয়ে গেছে, এই পাসপোর্টে যাওয়া যাবে না। 

যাক ঐ সব। কিছু উপসংহার টানি। এই যে দেশে এতদিন থেকে গেলাম, খুব কম হলেও ৫,০০০.০০ ডলার খরচ করলাম। এ রকম মাঝে মাঝেই আমি আসছি। এটা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আমার সরাসরি অবদান।Do some respect. Do not treat like a dirt. একজন মানুষকে অহেতুক হয়রানি করার মতো পৈশাচিক আনন্দ পায় যারা, তারা সাংঘাতিক ভাবে অমানুষ। আমি দেশে-বিদেশে যত যায়গায় আইনত অভিযোগ করা সম্ভব, সব যায়গায় এই harassment এর অভিযোগ করবো। আমি বিমানের কাস্টমার। আমার টিকিট কাটার পয়সায় তারা ভাত খায়। তারা আমার প্রভু না। আমরা কারও দয়ার কিংবা ইচ্ছার দাস না। দূরু দূরু চিত্তে বিমানের সিকিউরিটি গেট পর্যন্ত যেতে হবে, না জানি সাহেবরা বিমানে চড়তে দিবে কি না, তেমন অবস্থায় ভবিষ্যতে যেনো না পড়তে হয়, তাই বাংলাদেশ বিমানকে এড়িয়ে চলবো।

লেখক: প্রকৌশলী ও ভ্রমণ বিষয়ক লেখক।

(লেখাটি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর