শ্রাবণের মুষল ধারার বৃষ্টি কেটে গিয়ে পড়েছে ভাদ্রের পাট পঁচানি বা তালপাকানি রোদ। শরতের এই মেঘ, এই রোদ্র আবহাওয়ার মধ্যে এখন পঞ্চগড়সহ রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলে শুরু হয়েছে আবহমান কালের 'ভাদর (ভাদ্র) কাটানি' উৎসব। এ উৎসবে ভাদ্র মাসে নববধূরা তিন দিন, সাত দিন অথবা এক মাসের জন্য বাপের বাড়িতে যায়। কন্যার আত্মীয়-স্বজনরা ধুমধাম করে মেয়েকে জামাই বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। জামাই বাড়িতে মেহমানদের আদর-যত্নে উৎসব আয়োজন হয়। পরে জামাই বাড়ির আত্বীয়-স্বজনেরা বধূকে আনতে যায়। সেখানেও নানা আয়োজনে মুখরিত হয়ে ওঠে।
এই প্রথা রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে 'নাইওর' নামে পরিচিত। প্রচলিত ধারণা আছে, ভাদ্র মাসে স্বামীর মুখ দেখতে হয় না। স্থানীয় লোকজনদের বিশ্বাস এ সময় দেখা সাক্ষাৎ হলে স্বামীর অমঙ্গল হয়। এমনকি অপঘাতে মৃত্যু হতে পারে স্বামীর। অনেক এলাকায় বিশ্বাস আছে এ মাসে বউ-শাশুড়ির দেখা সাক্ষাৎ করতে হয় না। লোকজ এই প্রথা ঠিক কবে শুরু হয়েছে তা বলা কঠিন। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ই এই প্রথা মেনে চলে।
স্বামীর মঙ্গল কামনায় বধূরা বাপের বাড়িতে অনেকদিন থাকার সুযোগ পেলেও স্বামীরা এসময়টা কাটে স্ত্রী বিরহে। তাই স্বামীর বিরহকে গীতিকবি বর্ণনা করেন-
"নাইয়োর গেছে হামার বধূ হে
বিরাদর
ভাদর কাটাবা
মোর পরানডা উথাল পাতাল
না পারু কহিবা।"
তবে ভাদর কাটানিতে গরু গাড়ি, গরু-মহিষের গলায় বাঁধা পিঠা-পায়েসের হাড়ির প্রচলন এখন আর নেই। তার বদলে জায়গা নিয়েছে ভ্যান, রিক্সা, অটোবাইক, মাইক্রো, মিষ্টি, রোস্ট আর কোলড্রিংকস ।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক মণিশংকর দাসগুপ্ত বলেন, ভাদর কাটানি উৎসব ঠিক কবে শুরু হয়েছে তা সুনিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। তবে সনাতন ধর্মে প্রথম শুরু হলেও হিন্দুদের পাশাপাশি বাঙালি মুসলমানরাও এই প্রথা পালন করে থাকে।