ভারতের আসামের মিশিং উপজাতি সম্প্রদায়ের যাদব পায়েং মুলাই বিখ্যাত হয়ে গেছেন বন তৈরি করে। একাই তৈরি করেছেন ১৫৫ হেক্টর জমিতে বিশাল এক ঘন বন। বনে রয়েছে হাতি, বাঘ, হরিণসহ বুনো জীব-জন্তু।
১৯৭৯ সালে মাত্র ষোল বছর বয়সে পায়েং এক সকালে ব্রহ্মপুত্রের বালির চড়ায় শতাধিক মৃত সাপ দেখতে পান। আগের দিনের হঠাৎ আসা জলের তোড়ে এদের সেখানে এনে ফেলে। তখন সেখানে কোনও গাছ ছিলো না। প্রচণ্ড তেতে ওঠা বালির তাপে ওই সাপগুলো মারা যায়। ক্লাস টেন-এ পড়া কিশোর যাদবের মনে এই ঘটনা দাগ কাটে। ছুটে গিয়েছিলেন বন বিভাগের কাছে, আবেদন করেন ওখানে গাছ লাগানোর জন্য। গিয়েছিলেন সাধারণ স্থানীয় মানুষের কাছেও, কেউ বলেছেন ওখানে গাছ লাগালে বাঁচবে না, কেউ বলেছে ওটা ডুবে যাবে। কেউ তার কথার গুরুত্ব দেয়নি।
পায়েং নিজের হাতেই দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পড়াশোনা ছাড়লেন, ঘরও ছাড়লেন, এসে উপস্থিত হলেন ওই বালির চড়ায়। প্রথম দিকে লাগাতেন শুধুই বাঁশ ও ঘাস জাতীয় গাছ। তাদের বাঁচিয়ে রাখতে নিয়মিত পরিচর্যা করতেন। ধীরে ধীরে অন্যান্য গাছপালাও গজিয়ে উঠতে শুরু করল। আজও একইভাবে কাজ করে চলেছেন যাদব পায়েং।
শুধু গাছ লাগানোর মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন না যাদব। মাটিকে উর্বর রাখতে নিয়মিতভাবে উইপোকা, কেঁচো, পিঁপড়া ও কীটপতঙ্গ ছাড়েন তিনি। তার নিজের কথায়, মাটির উর্বরতা বাড়াতে উইপোকা ও পিঁপড়া খুবই উপকারী। এগুলো খুব কঠিন মাটিকেও নরম করে তোলে। ধীরে ধীরে ১৫৫ একর জমি জুড়ে তৈরি করেন এই মানবসৃষ্ট বন। আসাম সরকার তার ডাকনাম অনুসারে এই বনের নাম দেন মুলাই বন। এ বন নানা প্রাণীর বাসস্থান, এমনকি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির একশৃঙ্গ গণ্ডার, রয়েল বেঙ্গল টাইগারও রয়েছে এই তালিকায়। নানা জাতের গাছ লাগিয়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন উদ্ভিদ বৈচিত্রও। শিমুল, বাঁশ, শিশু, ডিমারু, ভেলকো, পাম, গামারি, সোনারু, কৃষ্ণচূড়া, সেগুন প্রভৃতি ছাড়াও আরও অসংখ্য প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন সেখানে।
যাদবের শখ বন তৈরি করা আর পেশা হচ্ছে গরু-মহিষ পালা। তার গোমহিষের সংখ্যা পঞ্চাশের মতো। জীবিকার তাগিদে নিজ গ্রামে প্রতিদিন সকালে ফেরি করে দুধ বিক্রি করেন তিনি।
তবে শুধু আসাম সরকারই নয়, তার কর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিখ্যাত বিজ্ঞানী ড. এপিজে আব্দুল কালাম। আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগই যাদব সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, এমন বনপ্রেমী লোক পৃথিবীতে আর আছে কিনা আমার জানা নেই। তিনি জীবন্ত কিংবদন্তী। সদিচ্ছার পাশাপাশি লক্ষ্যে অবিচল থাকলে একজন সাধারণ লোকও যে অসাধ্যকে সাধন করতে পারে, তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সত্যিই তিনি পূজনীয়।