‘ক্যাচটিক ক্যাসল’। একটি অভিশপ্ত বাড়ির নাম। স্লোভাকিয়ার ওই বাড়িতে বাস করতো এক সিরিয়াল কিলার, যিনি কিনা ৬৫০ জন মেয়েকে হত্যা করে তাদের রক্তে স্নান করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। নাম তার এলিজাবেথ বাথোরি। অনিন্দ সুন্দরী। আর সেই রূপ-লাবণ্য ও যৌবন অনন্তকাল ধরে রাখতেই একের পর এক যুবতীর রক্তে রাঙিয়েছেন হাত। ঘটনা ৪০০ বছর আগের হলেও আজও ওই বাড়ির সামনে দাঁড়ালে ভয়ে শীতল হয়ে যায় রক্তপ্রবাহ।
কে ছিলেন এই এলিজাবেথ বাথোরি? ১৫৬০ কি ১৫৬১ সালে হাঙ্গেরির নাইরিবেতর স্টেটে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৫ বছর বয়সে ১৫৭৫ সালে ব্যারন তামাস নাওদাস্দ এর পুত্র ফ্যারেন্স নাওদাস্দ এর সাথে বিয়ে হয়। বিয়েতে আপ্যায়ন করা হয় ৪ হাজার ৫০০ জন অতিথিকে। আর বিয়ে উপলক্ষ্যে নাওদাস্দ বাথোরিকে উপহার দেন ‘ক্যাচটিক ক্যাসল’।
ফ্যারেন্স নাওদাস্দ “ব্ল্যাক হিরো অব হাঙ্গেরি’ নামে পরিচিত ছিলেন। ১৫৭৮ সালে অটোম্যানদের সাথে যুদ্ধে হ্যাঙ্গেরিয়ান বাহিনীর প্রধান কমান্ডার ছিলেন তিনি। সবসময় ব্যস্ত থাকতেন যুদ্ধ নিয়ে। আর একা থাকতেন বাথোরি। শোনা যায় তখন কালোজাদু দ্বারা প্রভাবিত হন তিনি।
১৬০৪ সালে ফ্যারেন্স মারা যান ৪০ বছর বয়সে। তারপর থেকে এলিজাবেথ বাথোরি একাই থাকতে শুরু করেন দাস-দাসী নিয়ে ক্যাচটিক ক্যাসলে। তিনি বিভিন্ন বলি দেয়ার পার্টিতে যেতেন। কোন এক পার্টিতে এক বুড়িকে ব্যঙ্গ করলে বুড়ি অভিশাপ দেন- তুমিও শীঘ্রই বুড়ি হবে। এরপর থেকেই শুরু হয় তার যৌবন ধরে রাখার চেষ্টা।
একদিন এক দাসী তার চুল আচড়াতে গিয়ে কয়েকটা চুল তুলে ফেলে, এতে সে রেগে গিয়ে দাসীকে প্রহার করে। খুব প্রহারের ফলে দাসী রক্তাক্ত হয় আর দাসীর রক্ত বাথোরির হাতে লেগে যায়। তার মনে হয় দাসীর রক্ত লাগার পর তার হাতের ত্বক সজীব হয়ে উঠেছে। দুই জাদুকরও তাকে জানায় কম বয়সী কুমারী যুবতীদের রক্ত যৌবন ধরে রাখার মহৌষধ। এরপর থেকে বাথোরি শুরু করে যুবতী মেয়েদের রক্তে স্নান করা।
এক বন্দী মেয়ে বাথোরির হাত থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। সে পালিয়ে গিয়ে সব প্রচার করে দেয়। এরপর রাজা ম্যাথিয়াস কাউন্ট দায়ার্দু তুর্যকে ১৬ ডিসেম্বর ১৬১০ এ বাথোরির ক্যাসল রেইড করতে পাঠান। ক্যাসেল রেইডের পর দার্য়াদু দেখেন এক মেয়ে কাতরাচ্ছে, তার পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।
আর এক ঘরে গিয়ে দেখেন একটা মেয়ে ঝুলে আছে যার শরীর থেকে সমস্ত রক্ত বের করে নেয়া হয়েছে এবং একটা মেয়ে জীবিত আছে তার শরীরে অসংখ্য ছিদ্র। তারপর প্রিজন সেলে গিয়ে দেখেন আরো এক ডজন অর্ধমৃত মেয়ে, যাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত। সবশেষে ক্যাসলের নিচ থেকে মাটি খুঁড়ে আরো ৫০ টার বেশি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
বেথোরিকে অবরুদ্ধ করা হয় ক্যাচটিক ক্যাসলেই। চলতে থাকে তার বিরুদ্ধে ট্রায়াল। অবরুদ্ধ অবস্থায় ১৬১৪ সালের ২১ আগস্ট সে মারা যায়। ব্যাপারটা এই রকম যে, তার সৌন্দর্যের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে এক কাউন্ট তাকে দেখতে আসে। গিয়ে দেখে অবরুদ্ধ বাথোরি মরে পড়ে আছে।
গত ২১ আগস্ট বাথোরির মৃত্যুর ৪০০ বছর হয়ে গেলো। এখনো ক্যাচটিক ক্যাসল ইতিহাসের কলঙ্ক নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। এটা এখন ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান। ইচ্ছে হলে ঘুরে দেখে আসতে পারেন।