১৯ মে, ২০২৩ ১৬:৫৫

আছে প্রতিবন্ধকতা, স্বপ্ন বাস্তবায়নে ওরা অদম্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

আছে প্রতিবন্ধকতা, স্বপ্ন বাস্তবায়নে ওরা অদম্য

রংপুরের কাউনিয়ার কলি রানী ও নয়ন মিয়া সমাজের অন্য আর দশজনের মত নয়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ করে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে বসেছে পরীক্ষার টেবিলে। ওরা দুজনেই অদম্য। দুজনেরই আশা উচ্চ শিক্ষিত হয়ে সমাজের জন্য ভাল কিছু করার।

কলি রানী কাউনিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মোফাজ্জল হোসেন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে চলতি এসএসসি পরীক্ষা  অংশ নিয়েছেন তিনি। তার বাবা মনোরঞ্জন রায় কলি যখন গদাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে তখনই মারা যান। তারা তিন ভাই তিন বোন। কলি সবার ছোট। 

তার মা রুপালি রানী জানায়, জন্ম থেকেই তার মেয়ের হাতের আঙ্গুল নেই, হাত বাঁকা ও ছোট, কলম ধরতে পারে না। মেয়ের অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ডান পা দিয়ে লেখা শুরু করে। ধীরে ধীরে লিখতে লিখতে সে দ্রুত গতিতে লেখার কৌশল আয়ত্ব করে। সে যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম যাওয়া শুরু করে তখন তার সহপাঠীরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি ও উপহাস করত। বাড়িতে ফিরে সে মন খারাপ করতো। পরে শিক্ষকদের সার্বিক সহযোগিতায় সে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পায়। সহপাঠীরাও তাকে মেনে নিয়ে বন্ধুসুলভ আচরণ শুরু করে। পঞ্চম শ্রেণিতে সে এ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
 
কলি জানান, তিনি ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চান।

অপরদিকে নয়ন মিয়া এক সময়  সাইকেল চালিয়ে স্কুলেও যেত। কিন্তু ২০১৫ সালে হঠাৎ করেই তার হাতে-পায়ের শক্তি কমে যায়। হাত-পা চিকন হয়ে যায় এবং হাঁটা-চলার শক্তি হারিয়ে ফেলে নয়ন। কাউনিয়া উপজেলার নাজিরদহ একতা বাজার এলাকার বাসিন্দা লোকমান হোসেনের ছেলে নয়ন মিয়া। তিনি একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। হুইল চেয়ার করে যাতায়াত করেন স্কুলে। বন্ধুরাই সেই চেয়ারে বসিয়ে তাকে প্রতিদিন স্কুল নিয়ে যায় এবং ক্লাস শেষে বাড়িতে রেখে যায়। হুইল চেয়ারে খাওয়া-দাওয়া, হুইল চেয়ারে পড়ালেখা, এভাবেই চলছে নয়নের জীবন। সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে নয়ন।

নাজিরদহ একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমজান আলী বলেন, নয়ন বন্ধুদের সহযোগিতায় নিয়মিত স্কুল আসত। শিক্ষকরা আন্তরিকতার সঙ্গে তাকে পাঠদানসহ খোঁজ খবর রাখতো। সে হারাগাছ দরদী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মনোনীতা দাস বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী হিসেবে কলি রানীর পরীক্ষা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মেনে গ্রহণ করা হচ্ছে। তার পরীক্ষার প্রতিটি খাতা আলাদা করে বোর্ডে পাঠানো হচ্ছে। নয়ন মিয়ার পরিবার বোর্ডে থেকে অনুমতি না নেয়ায় তাকে বাড়তি সময় দেয়া সম্ভব হয়নি।

  

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর