শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
বসুন্ধরা সিমেন্ট ওয়ানডে সিরিজ

উড়ে গেল জিম্বাবুয়ে

সাকিবের ১০১ চার উইকেট

উড়ে গেল জিম্বাবুয়ে

খেললেন, খেলালেন, জেতালেন। সাকিব আল হাসান নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল কাটিয়ে গতকাল খেললেন প্রথম ওয়ানডে। দলপতি না হয়েও অগ্রণী সেনানী হয়ে খেলালেন পুরো দলকে। পয়মন্ত জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ২২ গজি উইকেটে আগুন ঝরানো পারফরম্যান্সে টানা ১২ ওয়ানডে হারের লৌহ শৃঙ্খল ভেঙে অধরা জয় উপহার দিলেন বাংলাদেশকে। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৪ উইকেট নিয়ে বসুন্ধরা সিমেন্ট সিরিজের প্রথম ওয়ানডেকে সাকিবময় করে তোলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ৮৭ রানে জিতে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। আগামীকাল সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।
জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে টাইগাররা শেষ ওয়ানডে খেলেছিল তিন বছর আগে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি হেরেছিল বাংলাদেশ। ওই হারের পর গত দুই বছরে হারিয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ২০১৪ সালে হঠাৎই সুর, তাল, লয় হারিয়ে ফেলে। গতকালের আগ পর্যন্ত টানা ১২ ওয়ানডে হারে টাইগারদের রঙিন আকাশ নিকশ কালো আঁধার ছেয়ে ছিল। অন্ধকার সরিয়ে ফের আলোয় ফিরতে মরিয়া টাইগাররা নতুন অধিনায়ক মাশরাফির নেতৃত্বে নামে পয়মন্ত চট্টগ্রামে। নতুন অধিনায়কের সৌভাগ্যে হেসে ওঠে বাংলাদেশ। ৩৮১ দিন যে জয়ের পেছনে ছুটছিল টাইগাররা, সেই অধরা জয় ৩৮২ নম্বর দিনে একাই উপহার দিলেন সাকিব। শিশিরে বল ভিজে যায়। গ্রিপ করতে কষ্ট হয় বোলারদের। তাই রাতের শিশির এড়াতে টস জিততে চেয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। দোয়াও চেয়েছিলেন দেশবাসীর কাছে। কিন্তু ভাগ্যলক্ষ্মী সহায় ছিল না। হেরে যান টস। ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ের শর্ট বোলিংয়ে ৭০ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে বসে মাশরাফি বাহিনী। এমন বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে দলকে টেনে তুলেন দুই সাবেক অধিনায়ক সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুই সাবেকের রেকর্ডে ৭ উইকেটে ২৮১ রান করে বাংলাদেশ। রেকর্ডের দিনে ১০১ রানের ইনিংসটি সাকিবের ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় এবং চট্টগ্রামের মাঠে প্রথম সেঞ্চুরি।
৩১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ক্রিজে আসেন সাকিব। ৭০ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর সাকিবের সঙ্গে যোগ দেন সদ্য ওয়ানডে অধিনায়কত্ব হারানো মুশফিক। দুই সাবেক অধিনায়ক পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষকে বেসামাল করে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১৪৮ রান যোগ করেন মাত্র ২৩.৪ ওভারে। দুজনের জুটি যে কোনো দলের বিপক্ষেই রেকর্ড। পঞ্চম উইকেটে আগের রেকর্ডটি সাকিব-রকিবুলের। ২০০৮ সালে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ১১৯ রান করেছিলেন দুজনে। গতকাল সাকিবের ১০১ রানের ইনিংসটি ৯৯ বলে সাজানো। সেঞ্চুরি করেন ৯৫ বলে। ব্যক্তিগত ১৬ রানের সময় সনৎ জয়সুরিয়া, জ্যাক ক্যালিস ও স্টিভ ওয়াহদের কাতারে ঠাঁই নেন সাকিব। চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে ঘরের মাঠে ১০০ উইকেট ও ২০০০ রান করেন এই বাঁ-হাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার। সাকিবের রেকর্ডময় দিনে তিন হাজার রানের মাইলফলক গড়েন টেস্ট অধিনায়ক মুশফিক (৩০০৫)। তার উপরে এখন সাকিব, তামিম ও হাবিবুল বাশার। সাকিবময় ম্যাচে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোরটাও করে টাইগাররা। আগের সর্বোচ্চ ছিল ৮ উইকেটে ২৩৯, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
২৮২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নাভিশ্বাস উঠেছে জিম্বাবুয়ের। বাংলাদেশের স্পিনাস্ত্রকে সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে গুটিয়ে যায় ১৯৪ রানে। ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও দুর্বোধ্য ছিলেন সাকিব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ঘূর্ণিতে বেসামাল সতীর্থদের মধ্যে উজ্জ্বল ছিলেন ৫৪ রানের ইনিংস খেলা টেলর। সাকিব তিন স্পেলে বোলিং করে ৪১ রানে নেন ৪ উইকেট। আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার আরাফাত সানী, মাশরাফি ও মাহমুদুল্লাহ উইকেট নেন দুটি করে। ম্যাচ শেষে ম্যাচসেরা সাকিবের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মো. মাহবুব হায়দার খান। এ সময় বিসিবি পরিচালক আকরাম খান উপস্থিত ছিলেন। 

সর্বশেষ খবর