বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

সেই জঙ্গি সাজিদ জামিনে গিয়ে পলাতক

সেই জঙ্গি সাজিদ জামিনে গিয়ে পলাতক

ভারতে গ্রেফতার সেই জঙ্গি সাজিদের বাবা-মা নাম রাখেন মাসুম মিয়া ওরফে মাসুদ। কিন্তু গ্রেফতার এড়ানোর জন্য জঙ্গি সংগঠনে ঢুকে তার নাম হয় শেখ রহমত উল্লাহ মাসুম ওরফে সাজিদ। সেই সাজিদ পৃথক তিন মামলায় জামিন পেয়ে পলাতক। মামলাগুলো হলো, রাজধানীর দারুস সালাম থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলা, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থানার অস্ত্র আইনের মামলা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক দুই মামলা। এগুলোর মধ্যে বেআইনিভাবে বিভিন্ন ধরনের জিহাদি বই, লিফলেট বিতরণ ও প্রচারের অভিযোগে শেখ রহমত উল্লাহ মাসুমকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে এ ঘটনায় বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে র‌্যাব-৪-এর পরিদর্শক সৈয়দ মো. শহিদুল ইসলাম সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। দারুস সালাম থানার মামলা নম্বর-০৪(১২)১২। মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে রাজধানীর দারুস সালাম থানা এলাকার টেকনিক্যাল মোড়ের পাকা রাস্তার ওপর নিষিদ্ধ-ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্যরা বেআইনিভাবে বিভিন্ন ধরনের জিহাদি বই, লিফলেট বিতরণ ও প্রচারের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার বদনগঞ্জ এলাকার ফরাজিকান্দার মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে শেখ রহমত উল্লাহ মাসুম, সাতক্ষীরা জেলার রসুলপুরের বালিয়াডাঙ্গা ইব্রাহিম সর্দারের ছেলে শাহিনুজ্জামান শাহিন, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার সূর্যমুখী এলাকার মঈন উদ্দিনের ছেলে অমিত হোসেন, বাগেরহাট জেলার মোল্লার হাট থানার গাওলা বাজার এলাকার আব্বাস আলী শেখের ছেলে শারিফুল ইসলাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার আজমতপুর এলাকার মৃত ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে সাইদুরকে গ্রেফতার করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এরপর ঘটনা তদন্ত করে দারুস সালাম থানার এসআই ইদ্রিস আলী পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ মামলার প্রধান আসামি শেখ রহমত উল্লাহ মাসুম ওরফে সাজিদ উচ্চ আদালত থেকে জামিনে গিয়ে পলাতক আছেন। আসামি সাজিদের জামিনের সময় জামিননামায় জামিনদার হিসেবে ঠিকানা রয়েছে তার ভাই মো. মামুন মিয়ার। এ ছাড়া এস ডি দুলাল নামের একজন আইনজীবী রয়েছেন। মামলার অন্য আসামিরাও জামিনে মুক্ত রয়েছেন। এ ছাড়া অস্ত্র আইনে সাজিদের নামে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থানায় ২০০৫ সালে মামলা হয়। পরে ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে আসামি জামিন পান। এরপর গোপালগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সদস্য জে মেহেদী এবং কে এম শফিকুল ইসলাম ২০১০ সালের ১৭ জুন জামিননামা দাখিল করেন। জামিননামায় জামিনদারের নাম রয়েছে মো. রিপন মিয়া, পিতা-ফারুক মিয়া, সাং ফরাজিকান্দা, থানা বন্দর, জেলা নারায়ণগঞ্জ। পরে মামলাটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিধায় সরকার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করার জন্য ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। এরই মধ্যে আসামি সাজিদ জামিনে গিয়ে পলাতক। পরে এ মামলায় ২০১১ সালের ৩০ জুন পলাতক আসামি সাজিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন। এ ছাড়া গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থানায় করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা হয় আসামি সাজিদের নামে। পরে তিনি ২০১১ সালের ৩১ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। এরপর ওই বছরের ২ মার্চ এস ডি দুলাল নামের আইনজীবী জামিননামা দাখিল করেন। জামিনদার হিসেবে নাম রয়েছে মো. আবদুল্লাহ গাজী, পিতা আহম্মেদ গাজী, সাং বুড়িগাঙ্গী, থানা মোল্লার হাট, জেলা বাগেরহাট। পরে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এ মামলায়ও আসামি সাজিদ জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন। পরে সাজিদের অনুপস্থিতিতে ২০১০ সালের ২৫ নভেম্বর সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালতের বিচারক রেজাউল করিম।

সর্বশেষ খবর