বুধবার, ২০ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

তবুও মাঠে নেই মন্ত্রী-এমপিরা

সমন্বিত তৎপরতা নেই, বিচ্ছিন্নভাবে ১৪ দল সভা করছে, রাজনৈতিক দলের চেয়ে প্রশাসন তৎপর বেশি

জুলকার নাইন ও রফিকুল ইসলাম রনি

তবুও মাঠে নেই মন্ত্রী-এমপিরা

জঙ্গিবিরোধী কমিটি গঠনে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক কোনো তত্পরতায় নেই ১৪ দল। একই সঙ্গে সভা-সমাবেশ করে জনমত গঠনে ভূমিকা নেই মন্ত্রী-এমপিদের। তবে প্রশাসন সারা দেশে ব্যাপকভাবে তত্পর। পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি সিভিল প্রশাসনও জঙ্গি দমনে কাজ করছে। অভিযানে অংশ নিচ্ছে অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও। প্রশাসনের ব্যাপক কার্যক্রমের পাশাপাশি রাজনৈতিক তত্পরতার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকলেও কিছু কিছু জেলায় বিচ্ছিন্ন সভা-সমাবেশ করেছে ১৪ দল। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে জনমত গঠনে তেমন কোনো তত্পরতা নেই মন্ত্রী-এমপিদের। অনেকে ঈদেও যাননি এলাকায়, থেকেছেন ঢাকায়। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী রাজনৈতিক কমিটি গঠনে নেই মন্ত্রী-এমপিদের তেমন কোনো ভূমিকা। অনেক এমপি গ্রুপিংয়ের কারণে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় বাধাও সৃষ্টি করেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে। খোদ ঢাকা মহানগরীতেই কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। ঢাকার অর্ধশতাধিক থানার মধ্যে মাত্র একটির কমিটি গতকাল ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করতে দলীয় এমপিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও এমপিদের স্ব স্ব এলাকায় অবস্থান করে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে বিশেষ নির্দেশনাও দেন তিনি। পরে জেলায় জেলায় পাঠানো মাহবুব-উল আলম হানিফ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয় : জোটনেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক দেশব্যাপী ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা এবং মহানগরে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই কমিটির অন্যতম কাজ হচ্ছে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও জঙ্গিবাদী তত্পরতার বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ২১ জুলাইয়ের মধ্যে কমিটি গঠন সম্পন্ন করতে বলা হয় চিঠিতে। দলীয় প্রধানের এসব নির্দেশ সত্ত্বেও এলাকায় এখন পর্যন্ত পা দেননি অর্ধশত এমপি। তারা রাজধানীতে বসে আয়েশি জীবন যাপন করছেন। দাফতরিক কাজ সারছেন ঢাকায় বসেই। প্রাপ্ত তথ্যমতে, নির্বাচিত  হওয়ার পর থেকেই বরগুনার এমপি এলাকায় যান খুব কম। গেলেও এক-দুই দিন থেকেই ঢাকায় অবস্থান নেন। এখনো তিনি এলাকার বাইরে। ১৫ রমজানের পর আর যাননি এলাকায়। ঝালকাঠির আরেক এমপির বিরুদ্ধে ছয় মাসেও এলাকায় না যাওয়ার অভিযোগ আছে স্থানীয় কর্মীদের। জাতীয় দিবসেও তিনি যান না এলাকায়। এবার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠনেও নেই তিনি। সিরাজগঞ্জের আরেক এমপি দেশেই নেই বেশ কিছু দিন। একই অবস্থা ঝিনাইদহের এক এমপিরও। দীর্ঘ সময় ঢাকায় অবস্থান করে গতকাল সকালে গিয়ে বিকালে আবার ঢাকায় ফেরত এসেছেন তিনি। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতার অংশগ্রহণের কর্মশালায় অংশ নিতেই নিজ সংসদীয় এলাকায় তার এই ঝটিকা সফর। চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরার দুই এমপি ঈদের আগে একবার এলাকা ঘুরে আসার পর থেকেই ঢাকায়। চাঁদপুরের পাঁচ এমপির একজন ছাড়া অন্য কেউ যাননি এলাকায়। একই অবস্থা সরকারের অংশীদার জাতীয় পার্টির এমপি-মন্ত্রীদেরও। কেন্দ্রীয়ভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান ঘোষণা করা হলেও জনমত গঠনে দেখা নেই জাতীয় পার্টির এমপি-মন্ত্রীদের। ঢাকায় শান্তি সমাবেশে অংশগ্রহণের পর থেকেই তারা নীরব। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় পার্টির মন্ত্রী-এমপিদের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মাঠে না থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির মন্ত্রী ও এমপিরা জনমত গঠন করছেন না। জাতীয় পার্টির করারও কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে সরকার আইন প্রয়োগে সচেষ্ট রয়েছে। জানা গেল, জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বার বার উঠে আসা গাইবান্ধায় গতকাল পর্যন্ত ১৪ দলের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে কমিটি গঠন হয়নি, নেওয়া হয়নি তেমন কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগও। বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষুদ্র পরিসরে সমাবেশ হয়েছে জেলার পার্কের অভ্যন্তরের শহীদ মিনার চত্বরে। কিন্তু সুন্দরগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জের মতো এলাকাগুলোয় জনগণের কাছে যাননি কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব। গাইবান্ধা ১৪ দলের সমন্বয়ক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকের কাছে কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কমিটির কথা বলা হলে করা হবে।’ দুই দিনে কি সম্ভব হবে— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘হয়ে যাবে, কেন হবে না!’ যশোর জেলায় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কমিটি গঠন দূরের কথা, বৈঠকও ডাকা হয়নি। এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিলন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৪ দলের মিটিং করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে আমরা কমিটি গঠনের কাজ শুরু করতে পারছি না। মিটিং ডাকা হলে কমিটি গঠন করা যাবে।’ একই অবস্থা নেত্রকোনা জেলায়ও। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মতিয়ার রহমান দেশের বাইরে থাকায় বৈঠক ডাকা হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, ‘জেলা সভাপতি মতিয়ার রহমান রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে থাকায় আমরা মিটিং করতে পারছি না। সভাপতি দেশে ফিরলেই কমিটি গঠন করব।’ দেশের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়েও এখন পর্যন্ত সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি গঠন করা যায়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাৎ সম্রাট বলেন, ‘আগামী ২৪ জুলাই আমরা বৈঠকে বসব। তারপর কমিটি গঠন করা হবে।’ জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত জেলা নীলফামারীতেও একই অবস্থা। কমিটি গঠনের নির্দেশনা গতকাল পেয়েছেন জেলা নেতারা। যে কারণে এখন পর্যন্ত কমিটি হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গতকাল কেন্দ্রের চিঠি পেয়েছি। আমরা এখন কমিটি গঠনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি।’ বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মমতাজ উদ্দিন বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও ১৪ দলের উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন স্থানে মিটিং ও সমাবেশ করা হচ্ছে। কিছু কিছু কমিটিও গঠন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশের পরই আমাদের কমিটি গঠনের কাজ শুরু করি। ইতিমধ্যে মহানগরে ১৪ দলের মূল কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ চলছে।’

সর্বশেষ খবর