সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
নরসিংদীতে সড়ক দুর্ঘটনা

মাইক্রোবাস দুমড়ে মুচড়ে নিহত ১৩

নরসিংদী প্রতিনিধি

মাইক্রোবাস দুমড়ে মুচড়ে নিহত ১৩

নরসিংদীতে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে নারী-শিশুসহ ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পথচারীসহ আরও আট জন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেলাব উপজেলার দড়িকান্দি বাজার এলাকায় গতকাল সকাল ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন— কিশোরগঞ্জের নিকলী থানার ছাতিরচর গ্রামের কালু মিয়ার ছেলে মানিক (৫৫), তার স্ত্রী মাফিয়া (৪৫), ছেলে অন্তর (১২), মধু মিয়ার ছেলে হাসান (৪০), তার স্ত্রী হালিমা (৩০), ছেলে ঈশান (১০) বাচ্চু মিয়ার মেয়ে ঝুমা (১৫), মরম আলীর মেয়ে সাধনা (৪০), তার ভাই নাজমুল (৩০), শব্দর আলীর ছেলে হীরা (৪৫), নূরে আলমের স্ত্রী শারমিন (২২) ও মাইক্রোচালক আবু সাঈদ। অপর একজনের পরিচয় জানা যায়নি। নিহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী এবং তারা ছাতিরচরে ফাগুন মেলায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। আহতদের মধ্যে ছয়জনকে ঢাকায় এবং দুজনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, রবিবার সকালে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে দুটি মাইক্রোবাসে কয়েক পরিবারের ৩২ জন সদস্য কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রামে যাচ্ছিলেন। অগ্রদূত পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস হবিগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেলাব দড়িকান্দি বাজারে অগ্রদূত পরিবহনের বাসটি একটি সিএনজিচালিত আটোরিকশাকে ওভারটেক করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ সময় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে ছিটকে রাস্তার পাশে গিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই ১১ জন নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ১০ জন। পুলিশ, দমকল বাহিনী ও স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ভৈরবসহ আশপাশের হাসপাতালে পাঠান। গুরুতর আহত তিন মাইক্রোবাস যাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ঢাকায়। ঢাকা নেওয়ার পর একজন এবং স্থানীয় হাসপাতালে মারা যান আরও একজন। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এক ঘণ্টা পর দুর্ঘটনাকবলিত যান সড়ক থেকে সরিয়ে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোজাম্মেল হক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা, বেলাব থানার ওসি বদরুল আলম, ভৈরব হাইওয়ে পুলিশের ওসি মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মিজানুর রহমান জানান, স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জনের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়। বাস ও মাইক্রোটি আটক করা হলেও বাসচালক ও তার সহকারী পালিয়েছেন। এ ঘটনায় বেলাব থানায় মামলা হয়েছে। নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মরদেহ দাফনের জন্য জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

ছয় জেলায় আরও ১০ প্রাণহানি : নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার ছদাহা এলাকায় স্কুলে যাওয়ার পথে গতকাল বাস চাপা দেয় রূপসী নাথকে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। রূপসী ছদাহা ইউনিয়নের নাথপাড়ার সাধনের মেয়ে ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। একই সময় পটিয়া উপজেলায় বাসচাপায় আহত হন কলেজছাত্রী পমি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পমি কমল মুন্সিরহাট ফকিরপাড়ার আবদুল গফুরের মেয়ে। ময়মনসিংহের ভালুকায় এনা পরিবহনের বাসচাপায় স্বামীর-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার সিডস্টোর বাজারে। হবিরবাড়ী ইউনিয়নের লবনকোঠা গ্রামের ইমরান খাঁ স্ত্রী কুলসুমকে নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে রাস্তা পারের সময় দ্রুতগতির বাসটি তাদের চাপা দেয়। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর নতুন বাসস্ট্যান্ডে গতকাল ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হন এক মোটরসাইকেল আরোহী। নিহত মীর আহমেদ সুজন উপজেলার বানিয়ারা গ্রামের কুদরত-ই খুদার ছেলে। ঘাটাইলে ট্রাকচাপায় মারা যান মোটরসাইকেলে থাকা এক কিশোর। তার নাম সৈকত। সে স্থানীয় স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। এছাড়া সখীপুরে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নিহত হন এর চালক আরিফ। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে গতকাল বাস ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে বরকত-বিন-শহিদ নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। পরশ গোদাগাড়ী পৌরসভার শ্রীমন্তপুর মহল্লার শহিদুল ইসলামের ছেলে। ঝিনাইদহের শৈলকূপা চরবাখরবা গ্রামে গতকাল ট্রাকচাপায় কবির হোসেন নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সে ওই গ্রামের টুটুল হোসেনের ছেলে ও স্থানীয় বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। এছাড়া দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে শনিবার সন্ধ্যায় পিকনিকের বাসচাপায় আব্দুস সালাম নামে এক বাইসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। সালাম নবাবগঞ্জের দক্ষিণ শাহ্বাজপুর গ্রামের আলাউদ্দীনের ছেলে।

সর্বশেষ খবর