বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোনো কোটাই থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোনো কোটাই থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সংসদে চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যখন কেউই কোটা পদ্ধতি চায় না, তখন এটা রাখার আর কোনো দরকার নেই। কোটা পদ্ধতি বাতিল, এটা আমার পরিষ্কার কথা।

গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাতে কারও কোনো সমস্যা না হয়, বার বার যেন রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন না হয়, বার বার যাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না হয়, তা বন্ধ করতে আমি এই কোটা পদ্ধতি বাতিলই করে দিতে চাই। এখন থেকে মেধার ভিত্তিতেই সব নিয়োগ হবে। তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে যা হচ্ছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। কেউ যদি কোটা না-ই চায়, তাহলে কোটা আমরা বন্ধ করেই দেব। এখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বলব— যথেষ্ট হয়েছে, এখন তারা ক্লাসে ফিরে যাক। তবে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনে হামলা করেছে, লুটপাট চালিয়েছে, লুটপাটের মাল কোথায় রয়েছে তা ছাত্রদেরই খুঁজে বের করতে হবে। এত বড় অন্যায় আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। গোয়েন্দা সংস্থাদের নির্দেশ দিয়েছি বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে। যারা হামলা, লুটপাট করেছে তাদের অবশ্যই বিচার হতে হবে। তবে পিছিয়ে পড়া প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর চাকরির ব্যাপারে আমরা অন্য ব্যবস্থা নেব। শেখ হাসিনা উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করে বলেন, একাত্তরে হানদাররা যেভাবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা করে লুটপাট চালিয়েছিল, ঠিক একই কায়দায় ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে হামলা-লুটপাট করা হয়েছে। উপাচার্যের বাড়িতে প্রবেশ করেই সিসি ক্যামেরা ভেঙেছে, সিসি ক্যামেরার রেকর্ডবক্স সরিয়ে নিয়ে গেছে। কী পরিকল্পিত এই ঘটনা। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সংসদ নেতা বলেন, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার উপযুক্ত নয়। তারা সেখানকার ছাত্র বলে আমি মনে করি না। কারণ কোনো শিক্ষার্থী তার শিক্ষককে এভাবে অপমান করতে পারে না। এভাবে আঘাত করতে পারে না, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। সব থেকে জঘন্য ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। অভিমানী কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে বলেন, কোটা থাকলেই সংস্কারের প্রশ্ন আসবে। এখন সংস্কার করলে আগামীতে আরেক দল আবারও সংস্কারের কথা বলবে। তাই কোটা থাকলেই ঝামেলা। সুতরাং কোনো কোটারই দরকার নেই। কোটাব্যবস্থা বাদ, এটাই আমার পরিষ্কার কথা। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে কোটা পদ্ধতি থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা কোটায় নিয়োগ পায় তারাও তো মেধাবী। তাদেরও তো লিখিত পরীক্ষায় পাস করতে হয়। কাজেই মেধাবীদের যদি ধরি, তবে শতভাগই মেধাবী চাকরি পাচ্ছে। তার পরও আন্দোলন। রোদের মধ্যে ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় বসে আছে। এই রোদে বসে থাকলে সবারই তো অসুখ-বিসুখ হবে। তারপর আবার রাস্তা বন্ধ করে রাখছে। এমনিতেই যানজট, তারপর আন্দোলনের কারণে তীব্র যানজট। রোগীরা হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে পারছে না। হয়তো গাড়িতেই মারা যাচ্ছে। কেউ অফিস-আদালতে যেতে পারছে না। কাজকর্ম করতে পারছে না। তিনি বলেন, জেলা কোটাও রয়েছে। কিন্তু দেখলাম জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে রয়েছে, তারাও রাস্তায় নেমে গেছে। এরাও চায় না। কেউ চায় না তাহলে কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। ঠিক আছে এখন থেকে বিসিএস পরীক্ষায় মেধার মাধ্যমে সব নিয়োগ হবে। এরপর তো কারও আর আপত্তি থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, কোনো শ্রেণি যেন বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কোটাব্যবস্থা রেখেছিলাম। এটি সংবিধানেও রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও মহিলাদের চাকরির ক্ষেত্রেও সুযোগ ছিল। এ সময় ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদেরও আন্দোলনে নামায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন সরকারে আসি তখন কি একটাও মহিলা সচিব ছিল? পুলিশের পদে চাকরি পেত? কোথাও মহিলাদের কোনো অবস্থান ছিল না। জুডিশিয়াল সার্ভিসে মহিলারা টিকতে পারত না। এ কারণে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ১০ ভাগ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এখন দেখলাম মেয়েরাও রাস্তায় নেমে গেছে। তারাও কোটার সংস্কার চায়। তার মানে ধরে নেব মহিলারাও কোটা চায় না। তিনি বলেন, খুব ভালো কথা। আমি খুশি, কারণ আমিই নারীর ক্ষমতায়নে সবচাইতে বেশি কাজ করেছি। যখন মেয়েরাও চায় না তখন কোটার আর দরকারটা কী? কোটা পদ্ধতিরই দরকার নেই। আর যারা প্রতিবন্ধী বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারব। তারাও যোগদান করতে পারবে। সংসদ নেতা বলেন, এখনো আমাদের শিক্ষক যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের যখন দেখি, আমরা তাঁদের সম্মান করি। প্রধানমন্ত্রী বা যাই-ই হই না কেন আমি যখন শিক্ষকদের কাছে যাই, তখন আমি তাদের সম্মান করি। গুরুজনকে অপমান করে শিক্ষা লাভ করা যায় না, সেটা প্রকৃত শিক্ষা হয় না। তিনি বলেন, প্রত্যেকের একটা শালীনতা বজায় রাখতে হবে। নিয়ম মেনে চলতে হবে, আইন মেনে চলতে হবে। রাষ্ট্র কতকগুলো নীতিমালার ভিত্তিতে চলে। আগে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেশনজট ছিল। আমরা সরকারে আসার পর কঠোর হস্তে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দমন করেছি।

ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে আন্দোলন উসকে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরাই গড়ে তুলেছি। আজ যে ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব ব্যবহার করা হচ্ছে তা আমরাই করেছি। কিন্তু এই প্রযুক্তি গঠনমূলক কাজে ব্যবহার না করে গুজব ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, একটা ছেলের মাথায় আঘাত লেগেছে। হঠাৎ একজন তার ফেসবুকে দিয়ে দিল সে মারা গেছে। এই গুজব শুনে ছাত্রছাত্রীরা বেরিয়ে এলো। অথচ যে ছেলেকে বলা হলো মারা গেছে, সে-ই উল্টো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিল যে, ‘আমি মরি নাই, বেঁচে আছি’। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, গুজব যারা ছড়াল ওই মৃত ব্যক্তির স্ট্যাটাসের পর তাদের মুখটা কোথায় থাকল? আর এই স্ট্যাটাস কে দিল? রাতে মেয়েরা রাস্তায় বেরিয়ে আসার পর যদি কোনো অঘটন ঘটত তবে এর দায় কে নিত? এটা কি কেউ চিন্তা করেছে। তিনি বলেন, সংস্কার সংস্কার বলে যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করছে তারা তো আমার নাতির বয়সী। তাদের কিসে ভালো হবে না হবে, আমরা কি কিছুই বুঝি না? তাদের কিসে ভালো হবে, তা আমরা জানি। সেই অনুযায়ীই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

জাতির বিকাশের জন্য চাই সাংস্কৃতিক চর্চা : বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘সুরের ধারা’র রজতজয়ন্তী পালন উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, ব্যাপক সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে একটি জাতির প্রকৃত বিকাশ সম্ভব। সাংস্কৃতিক চর্চা জাতিকে এগিয়ে নেয়। জাতির বিকাশের জন্য চাই সাংস্কৃতিক চর্চা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝে মাঝে কালো মেঘ ছেয়ে যায়। কিন্তু তার পাশে আবার সূর্য হাসে এবং আমাদের জীবনেও সেই ঘটনা ঘটেছে। অনুষ্ঠানে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির এবং প্রখ্যাত রবীন্দ  সংগীত শিল্পী এবং সুরের ধারার কর্ণধার রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শ্রুতি গীতবিতানের দ্বিতীয় সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করেন।

সর্বশেষ খবর