মঙ্গলবার, ১০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

সুপার পাওয়ারের লড়াই আজ

ফ্রান্স-বেলজিয়াম মুখোমুখি

সুপার পাওয়ারের লড়াই আজ

ফ্রান্স দলের কেউ আঘাত পেলে তার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিতে ছুটে যান ৩১ বছরের অলিভিয়ের গিরদ। কেউ রেগে গেলে তাকে শান্ত করার দায়িত্বটাও গিরদেরই কাঁধেই বর্তে। রেফারির সঙ্গে আইনসম্মত তর্ক করার প্রয়োজনটাও তিনিই মেটান। ফ্রান্স দলে অলিভিয়ের গিরদ অলিখিত ‘বড় ভাই’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিই তরুণ এই দলটার মধ্যে বয়স্কদের একজন। ফ্রান্স দলে অনেকে তো ২০’র কোঠাও পাড়ি দেয়নি! তরুণ মস্তিষ্ক গরম হতে সময় লাগে! আঠারো বছরের দুরন্তপনা কতটা হতে পারে, সুকান্তের আঠারো বছর বয়স কবিতা থেকে ভালো জানা যায়। তরুণ এই ফ্রান্সের মুখোমুখি অভিজ্ঞ বেলজিয়াম। সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে আজ রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলতে নামছে ইউরোপের দুই সুপার পাওয়ার দল। ফ্রান্স দলটা দিনে দিনে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে বিশ্বকাপে। প্রথমদিকের সেই অগোছালো ভাবটা আর নেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফ্রান্সকে খেলতে দেখে অনেকেই ভেবেছিল, এই দল নিয়ে খুব বেশি দূর যেতে পারবেন না দিদিয়ের দেশম। কিন্তু ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক তার ম্যাজিক দেখাতে লাগলেন বিশ্বকাপের পথে এগিয়ে যেতে যেতেই। গ্রুপ পর্ব পাড়ি দেওয়ার পর যেন আরও দুরন্ত হয়ে ওঠে তার দল। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সাত গোলের একটা ম্যাচ জিতে নিজেদের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট হিসেবেই প্রমাণ করে ফ্রান্স। কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের মতো দলকে এক রকম উড়িয়েই দেয়! অথচ এবারের বিশ্বকাপে ল্যাটিন দলগুলোর মধ্যে একমাত্র উরুগুয়েই ইউরোপিয়ান স্টাইলের ফুটবল খেলছিল। পাল্লা দিচ্ছিল সমানতালে। ফ্রান্সের কৌশল দিনে দিনে এতটাই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে, এখন তাদেরকে সম্ভাব্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভাবতেও কষ্ট হয় না অনেকের। তবে প্রতিপক্ষ বেলজিয়ামও তো কম নয়! নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে উঠতে উঠতে ফেবারিটের তকমা পেয়ে গেছে বেলজিয়াম। ১৯৮৬’র বিশ্বকাপে দিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার সঙ্গে সেমিফাইনাল খেললেও কেউ তাদেরকে ফেবারিট ভাবেনি। কিন্তু এবারের দলটাকে অনেকেই ফেবারিটের তকমা দিয়েছেন। আর রাশিয়ানরা! ওরা বলে, আমরা বিশ্বকাপটা জিততে পারিনি। তবে আমরা চাই, এবার বিশ্বকাপটা জিতুক বেলজিয়াম। কেন? কারণ, বেলজিয়াম গত কয়েক বছর ধরে খুবই ভালো ফুটবল খেলছে। সাবেক এক ফুটবলারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল ট্রেনে। তার নাম ভাসিল। মস্কোর বাসিন্দা। প্রফেশনাল ফুটবল ক্যারিয়ারটা শেষ হয়ে যায় লিগামেন্ট ইনজুরির কারণে। রাশিয়া বিদায় নিলে পুরোপুরি মাতাল হয়ে ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে আসে। লম্বা ঘুম দেয়। ঘুম থেকে উঠতেই আলাপ হয়। ভাসিল বলে, ‘আমরা চাই, বেলজিয়াম এবার বিশ্বকাপটা জিতুক। ওদেরই প্রাপ্য।’ ইংল্যান্ড কেন নয়? রাশানরা ইংলিশদের মোটেও সহ্য করতে পারে না। কারণটাও জানা গেল। সামারায় কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেনকে হারানোর পর দীর্ঘ সময় ইংলিশরা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ছিল। ভাসিল সে সময়কার একটা ভিডিও দেখাল। সেখানে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, ইংলিশ সমর্থকরা সামারা অ্যারিনার গ্যালারিতে নতুন করে বসানো চেয়ারগুলো ভেঙে ফেলছে। রাশানরা খুবই ভদ্র। কিন্তু ওদের সঙ্গে কেউ খারাপ আচরণ করলে, আতিথেয়তা ভুলে যায়। নিজ দেশের ক্ষতি মোটেও বরদাশত করে না। সেই তুলনায় বেলজিয়ামের সমর্থকরা অনেক ভালো। তারা গান গায়, দলের সমর্থনে চিৎকার করে। কিন্তু দাঙ্গা বাধায় না। মারমুখী হয় না। রাশানরা বেলজিয়ামের সমর্থন করার আরও একটা কারণ হলো, বেলজিয়ামের অসাধারণ কিছু ফুটবলার আছে। ইডেন হ্যাজার্ড, ডি ব্রুইন, রোমেলু লুকাকু এবং ফেল্লিনি। কর্টয়েস তো আছেনই। দুর্দান্ত এ ফুটবলারদের এখন সবাই ভালোবাসে। আজ সেমিফাইনালের লড়াইয়ে নামার আগে, ফ্রান্স-বেলজিয়ামের কোনো একটা দলকেও এগিয়ে রাখা যাবে না। দুটো দলই নিজেদের ফেবারিট হিসেবে প্রমাণ করেছে। তবে লড়াইটা হবে দুই গোলরক্ষকের ধৈর্যের। একদিকে লরিস। অন্যদিকে কর্টয়েস। দুই গোলরক্ষই বর্তমানের সেরা হিসেবে সুপরিচিত। ডিফেন্স লাইনটা দুই দলেরই প্রায় সমানে-সমান। আক্রমণভাগেও কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই। কিন্তু গোলবারের সামনে দাঁড়িয়ে কর্টয়েস এবং লরিস কেমন করেন, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। সেমিফাইনাল ম্যাচটা তাই ফিফটি-ফিফটি অবস্থানে রেখেই মাঠে যাবে ফ্রান্স-বেলজিয়াম। থিয়েরি অঁরির জন্য আজ বড় কঠিন দিন অপেক্ষা করছে। একদিকে দেশের প্রতি ভালোবাসা। অন্যদিকে কর্তব্য পালনের তাগাদা। অঁরি ১৯৯৮ সালে দেশমের নেতৃত্বেই বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। আজ সেই দেশমেরই মুখোমুখি তিনি। প্রিয় সেনাপতির মুখোমুখি সৈনিক!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর