শিরোনাম
রবিবার, ১৯ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুর্নীতি রোধে দুদকের একগুচ্ছ সুপারিশ

আহমেদ আল আমীন

দুর্নীতি রোধে দুদকের একগুচ্ছ সুপারিশ

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে দুর্নীতি রোধে একগুচ্ছ সুপারিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের অনুসন্ধানে এসেছে, বেবিচকে অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয় ১১টি পথে। আর বিমানে দুর্নীতির উৎস রয়েছে আটটি। এসব দুর্নীতি রোধে ১৯ দফা সুপারিশ দিয়েছে দুদক। দুদকের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

বেবিচকের দুর্র্নীতি রোধে দুদকের সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ক্রয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে ক্রয়ের মান ও মূল্যের যথার্থতা নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে অতীত ক্রয়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা। নির্মাণকাজ মূল্যায়নের জন্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নিরপেক্ষ ও সুনির্দিষ্ট মেয়াদের কমিটি গঠন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার জন্য অভিজ্ঞ পরিচালক পদায়ন করা। বিদ্যমান দোকান ও বিলবোর্ড বরাদ্দের যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা। অযৌক্তিক বরাদ্দের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উপযুক্ত দেশি-বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মনট্রিল কনভেনশন দ্রুত র‌্যাটিফাই করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। বেবিচকের নিজস্ব কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা। অন্য সংস্থা থেকে ডেপুটেশনে পদায়ন নিরুৎসাহিত করা। দক্ষ ব্যক্তিদের যথাযথ স্থানে পদায়ন করা। অবকাঠামো নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার এবং ক্রয়ে ই-টেন্ডারিংয়ের ব্যবস্থা চালু করা। ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার ও এয়ারলাইনস প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্নীতির ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করার পাশাপাশি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। ফ্লাইট ফ্রিকুয়েন্সি ও শিডিউল অনুমোদনের জন্য আবশ্যিকভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার তথা বাংলাদেশ বিমানের অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। বিমানবন্দরের অপারেশনাল কাজে দক্ষ অফিসারের পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজের জন্য দক্ষ প্রশাসক বা সমন্বয়ক নিয়োগ দিতে হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুর্নীতি রোধেও দুদক সুপারিশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম ক্রয়ের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দুর্নীতির পরিমাণ নির্ধারণ করা। রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভারহেলিং খাতে কেনাকাটার সময় আন্তর্জাতিক দরপত্রের নিয়ম সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে ই-টেন্ডারিং বাধ্যতামূলক করা। বিমানের কার্গো ওজনের কাজটি নিয়মিত মনিটরিং, ওজন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন করা। অতিরিক্ত ব্যাগেজের চার্জ আত্মসাৎ রোধে মনিটরিং জোরদার করা। বিমানকে সার্বক্ষণিক ওয়েবসাইটে আপডেটেড করা, যাতে গ্রাহকরা সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ তথ্য পেতে পারেন। বিমান লিজের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে লিজ চুক্তির শর্ত নির্ধারণ করা। হজের জন্য যথাসময়ে দরপত্রের কার্যক্রম শুরু করা। আগমনী যাত্রীদের বুকিং ট্যাগ ও বহনকৃত ওজন পরীক্ষা করে মিল না পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

দুদক জানিয়েছে, টাওয়ার, বোর্ডিং ব্রিজসহ বেবিচকের ক্রয় খাতে দুর্নীতি হয়। দুদক নির্মাণ ও উন্নয়ন খাতকে বেবিচকে দুর্নীতির আখড়া হিসেবে উল্লেখ করেছে। কাগজপত্র ঠিক রেখে কাজের কোয়ালিটি কমপ্রোমাইজ করে যেনতেন কাজের মাধ্যমে ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ার অর্থ বাটোয়ারা করে নেয়। বেবিচকে প্রচুর সম্পত্তি অবৈধ দখলে থাকলেও এর সঙ্গে অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজশের কারণে উচ্ছেদসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় চুক্তিভিত্তিক অনেক কনসালটেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকৃত অভিজ্ঞ কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয় না। হারানো মালের ক্ষতিপূরণ ও দুর্ঘটনার যাত্রী অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মন্ট্রিল কনভেনশন বাস্তবায়ন না করায় যাত্রীদের অধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। অপরদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রেও অনেক দুর্নীতি হয়। দুদকের মতে, বাস্তবে আসন খালি থাকলেও প্রায়ই বাংলাদেশ বিমানের টিকিট পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বিমানের কিছু অসাধু কর্মী যোগসাজশ করে অন্যান্য এয়ারলাইনসকে টিকিট বিক্রির সুযোগ দেন। এ খাতে ফলস বুকিংয়ের সুযোগেও অনিয়ম ঘটে। বিমান, বিমানের অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্টস ও বিমান লিজের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়। গ্রাউন্ড সার্ভিস খাতটি বিমানের দুর্নীতির অন্যতম উৎস। কার্গো সার্ভিসে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কোটি কোটি টাকা এয়ারওয়ে বিল কম পাচ্ছে। অতিরিক্ত ব্যাগেজের যাত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত চার্জ নিয়ে মূল হিসাবে তা না দেখিয়ে প্রতিদিন বহু অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর