বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
আইএমএফের প্রতিবেদন

২০১৯ সাল শেষে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ

মানিক মুনতাসির, ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে

চলতি ২০১৯ পঞ্জিকা বছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এটা হবে বিশে^র অন্যতম সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। খুব কম দেশই এত বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। কেননা বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার প্রভাবে বেশির ভাগ দেশে প্রবৃদ্ধি কমবে। শুধু তা-ই নয়, বৈশি^ক প্রবৃদ্ধিও কমে দাঁড়াবে ৩ শতাংশে। তবে পরের বছর ২০২০ সালে বৈশি^ক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে এ আভাস দিয়েছে আইএমএফ।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রকাশ করে এই পূর্বাভাস দেয় সংস্থাটি। এতে বলা হয়, ২০১৯ অর্থবছরের আর্থিক মন্দা খানিকটা কাটিয়ে উঠতে পারে বড় দেশগুলো। ফলে নতুন গতি আসতে পারে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে। বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা একটা অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে সময় পারলেও বাংলাদেশ এতে ভালো করছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও উৎপাদন বৃদ্ধি, সেই সঙ্গে রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও শ্রমশক্তি। এর সঙ্গে বাড়তি সুবিধা যোগ করেছে বাংলাদেশে নির্মাণাধীন ১০০ ইকোনমিক জোন। এসব জোনে ব্যাপক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করবে বাংলাদেশ এমনটাই মনে করে আইএমএফ। আউটলুক প্রকাশ অনুষ্ঠানে আইএমএফের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ জানান, বৈশ্বিক বাণিজ্য দ্বন্দ্ব এবং ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলো অগ্রগতির ক্ষেত্রে এখনো বড় বাধা, যা কাটিয়ে উঠতে নীতিনির্ধারকদের আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এ মন্দা ও বিশ্ববাণিজ্যের শ্লথ গতির জন্য ব্রেক্সিট জটিলতাকে দায়ী করা হয়। এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের শ্লথ গতি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে এসব বাধা উপেক্ষা করেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সার্বিক অগ্রগতির প্রশংসা করা হয়েছে অর্থনীতির মোড়লদের এই বিশ্বসভায়। তবে ধনী দেশগুলোর দ্বন্দ্ব আর উন্নয়নের সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে এশিয়ান টাইগার খ্যাত বাংলাদেশকে রেখেছে সংস্থাটি, যা স্পষ্ট হয়েছে তাদের এই আগাম বার্তায়। যেখানে বলা হয়েছে, এই দুই বছরে দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় আটের ঘরে। আর যা সম্ভব হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মতো বিনিয়োগবান্ধব উদ্যোগের কারণে; সেই সঙ্গে বিশ্বমন্দার পরও রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের শক্তিশালী অবস্থান। এদিনের আয়োজনে ঘুরেফিরে আলোচনায় আসে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থান। সেই সঙ্গে বিশ্বমন্দার কবলে থাকা বড় দেশগুলোর উদার বাণিজ্যনীতির ব্যর্থতা এবং মুদ্রা পাচারের মতো অপরাধ ঠেকাতে না পারা। বৈশ্বিক কর এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থারও সমালোচনা হয় এদিন। তাই পরামর্শ উঠে আসে নিয়ন্ত্রণকর্তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও বেশি সতর্ক এবং সময়োপযোগী হওয়ার। প্রবৃদ্ধির আভাসে বাংলাদেশকে ভারত, শ্রীলঙ্কা কিংবা ভিয়েতনামের চেয়েও এগিয়ে রেখেছে সংস্থাটি, যা এশিয়ার দেশগুলোর গড়ের চেয়ে কিছুটা বেশি। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ১২টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সক্ষমতা নিয়ে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে যে কোনো দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী ভূমিকা পালনের পাশাপাশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর