ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্র্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) গভর্নর বোর্ডের ৩৪তম সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এ ব্যাপারে আমাদের রেলে যারা কাজ করেন তাদের সতর্ক করা উচিত। সেই সঙ্গে যারা রেলের চালক তাদেরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বুলবুলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে এখানে দুর্ঘটনা ঘটে গেল। ঠিক জানি না কেন এই শীত মৌসুম এলেই শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বে রেলের দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে।’ রেল যোগাযোগ নিরাপদ সে কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রেল যোগাযোগ সবচেয়ে নিরাপদ এবং আমরাও এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা নতুন রেল সম্প্রসারণ করে যাচ্ছি। পণ্য পরিবহন, মানুষ পরিবহন সব ক্ষেত্রেই রেল নিরাপদ। তিনি বলেন, আমাদের রেলমন্ত্রী চলে গেছেন। উদ্ধার ও প্রয়োজনীয সবকিছু করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসের চালকসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনা তদন্তে রেলের পক্ষ থেকে চারটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কৃষিনির্ভরতা কমাতে শিল্পায়নে গুরুত্বারোপ : শুধু কৃষির ওপর নির্ভরশীল না থেকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ব্যাপক শিল্পায়নের পথে যেতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। কিন্তু এককভাবে এই কৃষিনির্ভর না থেকে কৃষির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শিল্পের উন্নয়ন করা অপরিহার্য। আর সে উন্নয়ন করতে পারলে আমাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে খাদ্য উৎপাদন যেন কোনোভাবে হ্রাস না পায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাও আমাদের লক্ষ্য। কারণ পৃথিবীতে খাদ্য চাহিদা কোনো দিন কমবে না। এটা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা শিল্পাঞ্চলগুলো (বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল) বিশেষভাবে করে দিচ্ছি। যাতে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে। কেননা পরিবেশ রক্ষার দিকেও আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’ দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জীবন-জীবিকার মান উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্র্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে বেপজা যথেষ্ট অবদান রেখে চলেছে। সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসছে এবং বিনিয়োগ হচ্ছে।’ তার সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা, সস্তা শ্রম ও শ্রমবান্ধব তরুণ জনগোষ্ঠী এবং দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় বাংলাদেশকে বিদেশি বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবেও আখ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বের কাছে বিনিয়োগের সব থেকে আকর্ষণীয় স্থান। যে কারণে বেপজার পাশাপাশি সরকার সারা দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই কর্মক্ষম যুবক শ্রেণি, যাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারি। আর সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে একেবারে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আমরা কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি এবং বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে তরুণদের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময়োপযোগী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, দেশের কর্মক্ষম এই নবীন জনগোষ্ঠীর কারণেও বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম একটি আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠেছে। এই দিকটায় আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘদিন বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পার হয়ে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হওয়ায় এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে বলেই বিনিয়োগের ক্ষেত্রটা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।’ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য তার সরকার নানারকম সুযোগ-সুবিধাও দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেপজায় যারা বিনিয়োগ করে তারা বিশেষ সুবিধা যেমন পেয়ে থাকে, তেমনি এখানকার শ্রমিকরাও ভালো বেতন পায়।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বহু শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলব এবং বাংলাদেশ দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত হবে, যেটা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য।’ শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘বাংলাদেশের অবস্থানটা আন্তর্জাতিক বিশ্বে আজকে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- এই নীতিমালার ভিত্তিতে চলায় আজকে সবার সঙ্গেই বাংলাদেশের একটা সুসম্পর্ক রয়েছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বস্ত্র এবং পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান সভায় অংশ নেন।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        