শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ

সাগর-রুনি হত্যা রহস্য উন্মোচন না হলে র‌্যাবের সফলতা ম্লান হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদ্্ঘাটন, দোষীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করতে না পারলে র‌্যাবের সফলতা ম্লান হবে বলে মন্তব্য করেছে হাই কোর্ট। মামলাটি বাতিল চেয়ে সন্দেহভাজন আসামি তানভির রহমানের আবেদনের ওপর গতকাল দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে  বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করে। আদালত তার রায়ে সামগ্রিক ঘটনা ও আইনগত অবস্থা বিবেচনায় সাগর-রুনি হত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে সন্দেহভাজন আসামি মো. তানভির রহমানকে অব্যাহতি দেয়। একই সঙ্গে সামগ্রিক অবস্থা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আগামী ৪ মার্চ বা তার আগে এ মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা এবং অপরাধের সঙ্গে বর্তমান আসামি তানভিরের সম্পৃক্ততার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন হলফনামাসহ দাখিলের নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতে আসামি তানভিরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলে, দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও তদন্তের মাধ্যমে এ মামলার রহস্য উদ্্ঘাটিত না হওয়া এবং অপরাধীদের চিহ্নিত, গ্রেফতার ও বিচারের সম্মুখীন না করতে পারা নিঃসন্দেহে দুঃখ ও হত্যাশার বিষয়। প্রযুক্তিনির্ভর, এলিট ও চৌকস বাহিনী হিসেবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক, বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার, ভেজাল প্রতিরোধসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অনন্য সফলতা কিছুটা হলেও ম্লান হবে, যদি সংস্থাটি এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদ্্ঘাটন এবং দোষীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করতে না পারে। হাই কোর্ট আরও বলেছে, আদালত প্রত্যাশা করছে, র‌্যাব অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে হত্যারহস্য উন্মোচন, প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করতে সক্ষম হবে। বিশেষায়িত এই বাহিনী ব্যর্থতার দায়ভার বহন করুক তা কারোই কাম্য নয়।

এর আগে এ হত্যা মামলা বাতিল চেয়ে সন্দেহভাজন আসামি মো. তানভির রহমানের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করে এবং ৬ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে। পরে তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার শফিকুল আলম হাই কোর্টে হাজির হয়ে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানান। এরপর তানভিরের আবেদনটি রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করে আদালত।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় রুনির ভাই বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলানগর থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই)। পরে মামলার তদন্তভার ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসের বেশি সময়ে ডিবি রহস্য উদ্্ঘাটনে ব্যর্থ হয়। এরপর হাই কোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল তদন্তভার র‌্যাবে হস্তান্তর হয়। কিন্তু গত সাত বছরেও মামলার তদন্তে অগ্রগতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর