মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রাস্তা থেকে টেনে নিয়ে মারধর-ধর্ষণ

ঘটনাস্থলে ঘড়ি চাবির রিং খাতা ইনহেলার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষিতা ছাত্রীর শরীরে ধর্ষণের আলামত পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই ছাত্রী ধর্ষকের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন, আলামতে এমনি চিত্রও পাওয়া গেছে। সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল তাঁর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ব্যবহৃত সামগ্রী।

গতকাল ভোরে র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুই ভাগে ভাগ হয়ে আলামত সংগ্রহ শুরু করে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) আলামত সংগ্রহ শুরু করে সকাল ১০টায়। দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ১৫ ধরনের আলামত সংগ্রহ করে। এর বেশির ভাগই ছিল ওই শিক্ষার্থীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে উত্তরার দিকে যেতে ১০০ গজ দূরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। সেখানে ফুটপাথের সৌন্দর্যবর্ধনের ফুল গাছের ঝোপে ওই ছাত্রীকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বিমানবন্দরের ওই সড়কটি ব্যস্ততম হলেও সন্ধ্যা নামলেই ওই ফুটপাথে পথচারীদের তেমন যাতায়াত থাকে না। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ চক্রবর্তী জানান, ‘জায়গাটি কিছুটা বিচ্ছিন্ন। এখানের ঝোপে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এ সড়কে গাড়ি চলাচল করে বেশি। ভিকটিম আমাদের কাছে একজনের কথা বলেছেন। আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি। ভিকটিমের শরীরে জখম রয়েছে। নিজেকে রক্ষা করতে তিনি চেষ্টা করেছিলেন।’ তাঁরা প্রযুক্তির সহায়তায় আলামত ও সোর্স নিয়োগ করে তদন্ত শুরু করেছেন। ভিকটিমের ভাষ্য অনুযায়ী, ধর্ষক একজন। ঘটনাস্থলে ওই ছাত্রীর ব্যবহৃত হাতঘড়ি, চাবির রিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাগজপত্র, জুতা, ফাইল সেখানে পড়ে ছিল। এ ছাড়া তাঁর ব্যবহৃত ইনহেলার ও ওষুধ পাওয়া যায়। এমনকি ঘটনাস্থলে জুতা ও কালো একটি জিন্স প্যান্ট পড়ে ছিল। ছয়টি ফেনসিডিলের বোতলও সেখানে পড়ে ছিল, যেগুলো সাম্প্রতিক ও পুরনো বলে মনে করছেন আলামত সংগ্রহকারী সিআইডির কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, ঘটনাস্থলে ধস্তাধস্তির চিহ্ন রয়েছে। তাঁদের ক্রাইম সিন ভিকটিমের বই, পরিধেয় কাপড় ও কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে। আলামত দেখে মনে হয়েছে, বিমানবন্দর সড়কে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কাছে গলফ ক্লাব সীমানার শেষ প্রান্তে ঝোপের মধ্যে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়। এর আগে ওই ছাত্রী ধর্ষণের জায়গা নির্দিষ্ট করে জানাতে না পারায় সকাল থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আশপাশের এলাকায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওসিসিসূত্রে জানা গেছে, ছাত্রীকে ধর্ষণের সময় মারধর করা হয়েছে। দুপুর আড়াইটার দিকে ওই ছাত্রীর শারীরিক অবস্থা জানতে ওসিসিতে প্রবেশ করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন ও ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ। বেলা ৩টার দিকে ওসিসি থেকে বেরিয়ে এ কে এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ওই শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সালমা রউফকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। পরে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, মেয়েটির গলা, হাত, গালসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন আছে। কিছু আঘাত হয়েছে ধর্ষণকারীর দ্বারা আর কিছু হয়েছে ঘটনাস্থলের কারণে। তাঁর গলা চেপে ধরা হয়েছিল- ধর্ষকের হাতের এমন চিহ্নও পাওয়া গেছে।

 আবার তাঁর কোমরে লাথি মারা হয়েছিল- এমন আলামতও পাওয়া গেছে। শারীরিকভাবে ওই তরুণী শঙ্কামুক্ত। যেহেতু তাঁর শরীরে বড় ধরনের কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই, ফলে দু-এক দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর