রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
খুলছে গার্মেন্ট

দলে দলে ঢাকার পথে কর্মীরা, অনেকে আসছেন হেঁটে

সাঈদুর রহমান রিমন

দলে দলে ঢাকার পথে কর্মীরা, অনেকে আসছেন হেঁটে

ট্রাকে রাজধানী ঢাকার পথে মানুষ। গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা থেকে গতকাল তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত প্রথম দফা বন্ধের পর ঢাকা ও আশপাশের গার্মেন্ট কারখানাগুলো আজ থেকে চালু হচ্ছে। তবে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়তি ছুটির কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম ঝুঁকি নিয়ে ঢাকামুখী হয়েছেন গার্মেন্টকর্মীরা। দূরপাল্লার সব যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ থাকায় গার্মেন্টকর্মী হাজার হাজার নারী-পুরুষ সীমাহীন দুর্ভোগ সঙ্গী করে পায়ে হেঁটেই ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। আজ থেকে গার্মেন্ট খোলার ঘোষণায় এসব

শ্রমজীবী মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে কর্মস্থলের পথে রওনা দিতে বাধ্য হয়েছেন। শ্রমিকরা জানান, আগেই ঢাকায় যেতে গার্মেন্ট থেকে বলা হয়েছে। সে কারণে করোনার ঝুঁকিতে সীমাহীন আতঙ্ক নিয়েও রওনা হয়েছেন তারা। কর্মস্থলে হাজির হতে না পারলে চাকরি চলে যাবে, বকেয়া বেতন-ভাতাও দেওয়া হবে না। চাকরি না থাকলে, বেতন না পেলে অনাহারেই মারা যেতে হবে। এ কারণে ঝুঁকির মধ্যেও ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে তাদের। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি হাটবাজার, দোকানপাট, বাস, ট্রেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ করাসহ সব ধরনের জনভিড় কঠোরভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই গার্মেন্ট নগরীখ্যাত ঢাকার মিরপুর, গাজীপুর, টঙ্গী, সাভার ও আশুলিয়ার অনেক এলাকায় আজ থেকে কাজে যোগ দেবেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা।

পথে পথে দুর্ভোগ : উত্তরবঙ্গসহ দূরবর্তী জেলাসমূহের বাসিন্দারা শুক্রবার দুপুরেই নিজ নিজ বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নামেন। রাস্তায় বাস-মিনিবাস, ট্রেন না থাকায় ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে মাইলের পর মাইল পায়ে হাঁটাসহ দুর্ভোগ-ভোগান্তির শেষ ছিল না তাদের। বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকেও অনেক নারী-পুরুষকে টানা ১০-১২ ঘণ্টার পথ হেঁটে তবেই ঢাকা কিংবা গাজীপুরে পৌঁছতে হয়েছে। মহাসড়কে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছিল না। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় নিম্নআয়ের এসব মানুষ চরম বিপাকে পড়েন। শ্রমিকদের ছোট ছোট গ্রুপ নানা চেষ্টায় দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়ায় গাড়ি ঠিক করে রওনা দিতেই পথে পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। যাত্রীদের নামিয়ে গাড়িচালককে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে, গাড়ি আটক করে নেওয়া হয়েছে থানায়। ফলে অগ্রিম ভাড়া গুনে দিয়েও আবার পায়ে হাঁটতে হয়েছে শ্রমিকদের। এর পরও রাস্তায় কোথাও ভিড় হলেই ছুটে এসেছে পুলিশ।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলো থেকেও অভিন্নভাবেই শ্রমজীবী মানুষজনের ঢাকামুখী জনস্রোত ছিল বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো। দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী এবং উত্তরা ও দক্ষিণখানের গার্মেন্ট-অধ্যুষিত এলাকার পথে পথে হাজির হতে থাকেন শ্রমিকরা। মহাখালী এবং তেজগাঁও এলাকাতেও রাস্তায় রাস্তায় ছিল জনস্রোত। বস্তি ও নিম্নআয়ের মানুষের বসবাসের এলাকাগুলো পুরোটাই গতকাল থেকে জমজমাট। শ্রমিকরা নিজেদের সুরক্ষা নিয়েই বেশি শঙ্কিত। পোশাক কারখানায় কর্মরত এক শ্রমিক বলেন, একটি টি-শার্ট তৈরি করতে কমপক্ষে ৩০ জন শ্রমিকের হাতের ছোঁয়া লাগে। একজন ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এই ৩০ জনই আক্রান্ত হবেন। এরপর আশপাশের লোকেরাও আক্রান্ত হবেন এতে। এ কারণে পোশাক কারখানায় এখন অবশ্যই ছুটি থাকা উচিত। বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সাধারণ ছুটি আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত রাখার পক্ষে। সবকিছু বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের ছুটি দিতে আপত্তি কী!

সর্বশেষ খবর