বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ভয়াবহ বিস্ফোরণ পল্লবী থানায়

চার পুলিশসহ আহত ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মিরপুরে পল্লবী থানার অভ্যন্তরে ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে চার পুলিশসহ পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রিয়াজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির হাত কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসকরা। গতকাল ভোর সাড়ে ৬টার দিকে কালশী কবরস্থান এলাকা থেকে সন্দেহভাজন তিন যুবককে থানায় নিয়ে আসার পর তাদের সঙ্গে থাকা একটি ওজন মাপার যন্ত্রে রাখা বোমা (আইইডি) বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ঘটনার পেছনের সহযোগীদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মোহা. শফিকুল ইসলাম। বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তিরা হলেন পল্লবী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইমরানুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক (এসআই) সজীব খান, এসআই রুমি বেভরেজ হায়দায়, শিক্ষানবিশ সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) অঙ্কুর কুমার ও রিয়াজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। রিয়াজুল পরিদর্শক ইমরানুল ইসলামের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচিত। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন শহীদুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন ও রফিকুল ইসলাম। তাদের জিজ্ঞসাবাদের জন্য গতকালই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতার তিন ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের সহযোগী বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে তারা এসব বোমা ও অস্ত্র সংগ্রহ করেছিল। এমন একটি আগাম তথ্যের ভিত্তিতেই ওই অভিযান চালানো হয়। তবে অন্য আরেকটি সূত্র বলছে, গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা বোমাগুলো যে-কেউ তৈরি করতে পারে না। সাধারণত এসব বোমা জঙ্গি সদস্যরা তৈরি করে থাকে। এদিকে ঢামেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ব্লকের আবাসিক সার্জন আলাউদ্দিন বলেন, রুমির বাঁ হাতে স্পিøন্টারের আঘাত রয়েছে। রিয়াজুল ইসলামের হাতে আঘাত আছে। তার শরীরও ঝলসে গেছে। ইমরানুলের পায়ে স্পিøন্টারের ও সজীবের কানে শব্দের আঘাত লেগেছে। এ ছাড়া অঙ্কুশ কুমার চোখে আঘাত পেয়েছেন। তাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। আহত সবাই আশঙ্কামুক্ত। তবে রিয়াজুলের অবস্থা গুরুতর। বিস্ফোরণে তার বাঁ হাতের কবজি ক্ষতবিক্ষত হওয়ায় অস্ত্রোপচারের সময় তা কেটে ফেলা হয়েছে।

পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রাতে পল্লবীর কালশী কবরস্থানে অভিযান চালিয়ে তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি গুলি ও একটি ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্র। থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে গ্রেফতার তিনজন পুলিশকে জানায়, ওই ওজন মাপার যন্ত্রে ‘বোমা রয়েছে’। এরপর বোমা নিষ্ক্রিয়কারী বিশেষজ্ঞ পৌঁছানোর আগেই বিস্ফোরণ ঘটে। গতকাল সকালে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার পর পল্লবী থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কাউকেই থানা এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। র‌্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা থানার আশপাশ ঘিরে রাখেন। থানার দ্বিতীয় তলার যে কক্ষে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেখানকার দুটি জানালার মধ্যে একটি ভেঙে নিচে রাস্তায় পড়ে রয়েছে। অপরটি ওপরে ঝুলে আছে। বোমার বিস্ফোরিত অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। থানার আশপাশ ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড়। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। বেলা ৩টা পর্যন্ত থানার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে বিকালে থানার কার্যক্রম কিছুটা স্বাভাবিক হলেও প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়। গণমাধ্যমকর্মীদেরও থানার ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় দুপুরে পল্লবী থানার সামনে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এই অপরাধীদের ধরতে পল্লবী থানা পুলিশ ও মিরপুরের ডিসির নেতৃত্বে একটা টিম কাজ করছিল কয়েক দিন ধরে। যারা মিরপুরভিত্তিক অপরাধ করে থাকে, গ্রেফতার ব্যক্তিরা তাদেরই সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা একটি অপরাধ করার জন্য এসেছিল, সে অপরাধ হতে পারে কাউকে খুন করা, কোনো সম্পত্তি-সংক্রান্ত অথবা ডাকাতি করা। আমরা বিষয়টা তদন্ত করে দেখছি। এ অঞ্চলে নানা ধরনের ক্রাইম হয়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে কালশী কবরস্থান এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ সমবেত হয়ে অপরাধের পরিকল্পনা করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। সেখানে আরও কয়েকজন ছিল, যারা পালিয়ে যায়। গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে দুটি আগ্নেযাস্ত্র, গুলি ও একটি ডিভাইস উদ্ধার করা হয়, যা ডিজিটাল ওয়েট মেশিনের মতো।’

এটি কোনো জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট হামলার পরিকল্পনার অংশ কি না- জানতে চাইলে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, যাদের আমরা গ্রেফতার করেছি তারা কোনো জঙ্গি গ্রুপের সদস্য নয়। তারা কোনো না কোনো ক্রিমিনাল গ্রুপের সদস্য। তাদের সঙ্গে ওয়েট মেশিনসদৃশ বস্তু যা ছিল, সেটির ভিতরই চারটি বিস্ফোরক ছিল। এর মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়েছে। বাকিগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।’ কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপকমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, ‘বোমাগুলো আইইডির আদলে তৈরি। তিনটি বোমা আমরা নিষ্ক্রিয় করেছি। তবে এর আগেই একটি বিস্ফোরিত হয়েছিল। সন্ত্রাসীরা এসব কেন, কোন উদ্দেশ্যে তৈরি করেছিল তা জানার চেষ্টা চলছে।’ ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, গ্রেফতার তিনজন ‘ভাড়াটে খুনি’ বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, তারা পল্লবীর স্থানীয় একজন রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করবে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর স্পষ্ট হবে।

আইএসের দায় স্বীকার : এদিকে পল্লবী থানায় হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন আইএস। রিটা কার্টজ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে এক টুইট বার্তায় হামলার দায় স্বীকারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের আগস্টের পর আইএস এই প্রথম ঢাকায় কোনো হামলার দায় স্বীকার করল। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর সঙ্গে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর