বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগে চাঙ্গা শেয়ারবাজার

রুহুল আমিন রাসেল ও আলী রিয়াজ

অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগে চাঙ্গা শেয়ারবাজার

অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগে চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের শেয়ারবাজার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার তথ্য দিয়েছে। শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগের সঙ্গে নতুন ব্যবস্থাপনায় নানা পদক্ষেপে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সরব হয়ে উঠেছেন। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বড় পুঁজিও বাজারে বিনিয়োগ হচ্ছে। এতে বাজারের লেনদেন প্রতিদিনই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই ইতিবাচক প্রভাবে বাজারে আস্থা ফেরায় সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক নতুন বিনিয়োগকারী ফিরে এসেছেন। তাদের বিনিয়োগে আস্থা ধরে রাখতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও প্রবীণ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনেকের কাছে নগদ টাকা আছে। যে অর্থ এত দিন অপ্রদর্শিত ছিল। এরই একটা অংশ হয়তো এখন বিনিয়োগ হচ্ছে শেয়ারবাজারে। এটা অনেক ভালো দিক।’

জানা গেছে, দীর্ঘদিনের মন্দার সঙ্গে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হলে চরম সংকটের মুখে পড়ে পুঁজিবাজার। বাজারের অস্থিরতা ঠেকাতে লেনদেন বন্ধ থাকে ৬৬ দিন। পরে সীমিত আকারে জুনে লেনদেন শুরু হয়। তবে লেনদেনের হার নেমে আসে মাত্র ৫০ কোটি টাকার নিচে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এ নিয়মে নির্দিষ্ট পরিমাণ দর নির্ধারণ করে দিয়ে চালু হয় লেনদেন। ফলে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। করোনার সংকটে যেখানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ৪ হাজার পয়েন্টে নেমে এসেছিল, গত দুই মাসে সে সূচক বেড়েছে ৯১৮ পয়েন্ট। শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে এ সময় ডিএসইর মোট বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। চাঙ্গা মেজাজে ফিরে আসায় পুঁজিবাজারে বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ। এক মাসের ব্যবধানে (১ থেকে ১৫ জুলাই) তুলনায় গত মাসের প্রথমার্ধে (১ থেকে ১৫ আগস্ট) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন বেড়েছে ৯১ শতাংশ। আর ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় এ বৃদ্ধির হার ৮৯ শতাংশ। চলতি মাসের প্রথমার্ধে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৪৫৫ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার লেনদেন করেছেন, যার পরিমাণ জুলাইয়ের প্রথমার্ধে ছিল ২৩৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অধিক পরিমাণে রাজস্ব আয় ও বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল রাখতে শেয়ারবাজারসহ কিছু খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের আইনি সুবিধা দেয় সরকার। এরপর বিএসইসি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার পর পুুঁজিবাজারে নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ পদক্ষেপে আস্থা ফিরে আসে। ফলে বাজারে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগও বাড়তে থাকে।

এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে সাড়া পাওয়া গেছে। কারণ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগে সব প্রতিষ্ঠানকেই দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানই এ আইনের আলোকে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।’ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, ‘শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ভালো সাড়া পড়েছে। একটা জোয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। বাজার দিন দিন চাঙ্গা ও গতিশীল হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ছে। বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থের মালিকদের সরকার প্রণোদনা দেওয়ায় বিনিয়োগ বাড়ছে। সামনে আরও অনেক বেশি বাড়বে। কারণ বিনিয়োগকারীরা এখন ভালো মনে করছেন শেয়ারবাজার। সত্যিকার অর্থে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ এখন কার্যকর।’

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য যে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে, তা বিনিয়োগকারীরা গ্রহণ করেছেন। স্বচ্ছতা আনার জন্য এটা দরকার ছিল। বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ সুবিধা ভালো হয়েছে। এখন প্রত্যাশিত বিনিয়োগ হলেই ভালো। তবে করোনায় ৬৬ দিন শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কিছু পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের কাছে ভালো মনে হয়েছে। ফলে আস্থা বাড়ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর