সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আর নেই

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আর নেই। রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হওয়ার পর হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল তার। পরে করোনামুক্ত হলেও ৭১ বছর বয়সী রাষ্ট্রের এই প্রধান আইন কর্মকর্তা আর অসুস্থতার সঙ্গে লড়াইয়ে পেরে ওঠেননি। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে সিএমএইচের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমসহ বিশিষ্টজনরা শোক প্রকাশ করেছেন। মাহবুবে আলম স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। এ ছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া প্রমুখ।

আজ সকাল ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সকাল আটটায় রাজধানীর মিন্টু রোডের সরকারি বাসায় তাঁর লাশ নেয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টের সামনে জানাজার পর বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।   

পারিবারিক সূত্র জানায়, ৪ সেপ্টেম্বর জ্বর নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি হন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সেখানে নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে হার্ট অ্যাটাক হলে তাকে দ্রুত আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর তার পরিবার জানিয়েছিল, করোনামুক্ত হওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু করোনাভাইরাস ও হৃদরোগের ধাক্কা নিতে পারেননি প্রবীণ এই আইনজীবী। এ সময় তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলা, সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম ও ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলা, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মো. কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মামলা, পিলখানা হত্যাকা- মামলার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলা রাষ্ট্রপক্ষে পরিচালনা করেছেন মাহবুবে আলম।

১৯৭৫ সাল থেকে হাই কোর্টে আইন পেশায় যুক্ত মাহবুবে আলম। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতির পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে নিযুক্ত হন তিনি। ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল পদে পাঁচ বছর পূর্ণ হয় তার। এরপর আরেক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে তাকে এই পদে বহাল রাখা হয়। আমৃত্যু তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত দীর্ঘ মেয়াদে আর কোনো অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালনের রেকর্ড নেই।

১৯৪৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মৌছামান্দ্রা গ্রামে জন্ম মাহবুবে আলমের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রিও নেন তিনি। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে অ্যাডভোকেট হিসেবে নিবন্ধিত হন মাহবুবে আলম। পরে ১৯৭৫ সাল থেকে হাই কোর্টে এবং ১৯৮০ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্র্যাকটিস করেন। দিল্লির ইনস্টিটিউট অব কনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড পার্লামেন্টারি স্টাডিজ থেকে সংবিধান ও সংসদীয় আইন বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন। অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি এবং বিশ্ব গণতান্ত্রিক আইনজীবী পরিষদের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর