বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পৌর ভোটে বিদ্রোহী প্রার্থী রাখতে চায় না আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রাখতে চায় না আওয়ামী লীগ। শুধু বিদ্রোহীই নয়, নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীর বাইরে দলীয় অন্য প্রার্থীর ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের হাইকমান্ডের কঠোর বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির অফিসে দলীয় ফরম বিক্রি করা হচ্ছে। যাদের দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তাদের পক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর ২৫ পৌরসভার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, অতীতে কখনোই বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো যাঁরা নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন তাঁদের বেশির ভাগ দলে পুরস্কৃত হয়েছেন। বিগত সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা নির্বাচনে যেসব বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছিলেন, তাঁদেরকে সাময়িক বহিষ্কার করে পরে আবার ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উৎসাহ পায়। কিন্তু এবার সে সুযোগ দেওয়া হবে না। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রথমত আশা করি পৌর নির্বাচনে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। দ্বিতীয়ত, অতীতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুকম্পায় তাঁদের সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছে। কিন্তু একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বারবার ঘটবে না। এবার যারাই বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলছেন, বিগত ২০১৫ সালের সর্বশেষ পৌর নির্বাচনের নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর আটঘাট বেঁধে ভোটযুদ্ধে নামানো হবে দলের নেতা-কর্মীদের। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করাসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নিজেদের ক্ষমতাকে সুসংহতও রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, ২৫ পৌরসভায় ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে কমপক্ষে দুই শতাধিক প্রার্থী তৎপরতা চালাচ্ছেন। এদের মধ্যে ভোটের আগেই কোনো কোনো স্থানে ভোটযুদ্ধ শুরু হয়েছে। অর্থাৎ দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলের ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে যেখানে একক প্রার্থী করা সম্ভব হয়েছে, সেখানে একক প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও তিনজনের নামও এসেছে। যারা যোগ্যতা থাকার পরও তৃণমূলে ‘ভোট কেনাবেচা’র কারণে দলীয় মনোনয়ন পাননি তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক কেন্দ্র। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ইতিমধ্যে সব জেলার শীর্ষ নেতা এবং এমপিদের বিদ্রোহীদের ব্যাপারে বার্তা দিয়েছেন। কোনো ক্রমেই এবারের পৌরসভা ভোটে বিদ্রোহী প্রার্থী দেখতে চায় না দলের হাইকমান্ড। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যদি কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়, তাঁর জন্য আওয়ামী লীগের দরজা বন্ধ। একই সঙ্গে ইন্ধনদাতা নেতা-এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক সম্পাদকম-লীর সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল তো সরকারি আইনের মতো করে চালানো যায় না। এখানে নানা কিছু বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আগামী ২৮ ডিসেম্বর পঞ্চগড় সদর, ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, রংপুরের বদরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম সদর, রাজশাহীর পুঠিয়া ও কাটাখালী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার চাটমোহর, কুষ্টিয়ার খোকসা, চুয়াডাঙ্গা সদর, খুলনার চালনা, বরগুনার বেতাগী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, বরিশালের উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নেত্রকোনার মদন, মানিকগঞ্জ সদর, ঢাকার ধামরাই, গাজীপুরের শ্রীপুর, সুনামগঞ্জের দিরাই, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ও চট্টগ্রামের সীতাকু- পৌরসভায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর