ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বন উজাড় ও দখল এবং আত্মসাৎ কেন্দ্রিক দুর্নীতির বিস্তার রোধে কার্যকর প্রচেষ্টা দেখা যায় না সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে। এর অন্যতম একটা কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকেন। বনভূমি দখল হলেও নিষ্ক্রিয় সংশ্লিষ্টরা। বনভূমির রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে। বন অধিদফতর ও বনকেন্দ্রিক অনিয়ম-দুর্নীতি এবং বিভাগীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে শাস্তি প্রদানের নজির স্থাপন করতে হবে।
‘বন অধিদফতর : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, সরকারি বনভূমির সুরক্ষা ও বনে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর প্রথাগত জমির যে অধিকার তা নিশ্চিত করতে বন অধিদফতরের ওপর অর্পিত যে ক্ষমতা এবং সক্ষমতা রয়েছে, দুটোরই তারা কার্যকর ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার করতে পারছে না এবং সেখানে অনেক বিচ্যুতি আমরা লক্ষ্য করেছি। বন উজাড়, বনভূমি বেদখল ও অবৈধভাবে বনভূমি বরাদ্দ কিংবা তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের একাংশের মাধ্যমে যোগসাজশের একধরনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ঘটেছে। যেখানে বাস্তবে রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, বন অধিদফতর কর্তৃক বৈষম্যমূলকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বনকেন্দ্রিক যে দুর্নীতি তার ঘটনায় অধিদফতরের একশ্রেণির কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ও অদক্ষতা টেকসই বন উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিমোট সেন্সিং ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় সর্বোচ্চ ও কার্যকরভাবে বনব্যবস্থাপনার উন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অধিদফতরের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে। এর ফলে বন ও বনজ সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বন অধিদফতরের কার্যক্রম বিশেষভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। বন আইনের বিধিমালার অনুপস্থিতি খুবই অবাক করার মতো একটি বিষয় এবং ৯৩ বছরের পুরনো আইন বিদ্যমান থাকায় সংস্থাটির সদিচ্ছার সম্পূর্ণ ঘাটতি হিসেবেই বিবেচনা করছি, যা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। আইনটির খসড়া হয়েছে বলে আমরা জানি কিন্তু বিশেষ কোনো অগ্রগতি হয়নি।
আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বন অধিদফতরকে একটি সক্ষম ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপদানের লক্ষ্যে ১৫ দফা সুপারিশ দেয় টিআইবি। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. রেজাউল করিম ও জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন ইউনিটের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. নেওয়াজুল মওলা। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম।