বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নৌবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের দেশপ্রেম ও কর্তব্য নিষ্ঠার সঙ্গে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। সততা, সঠিক নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তিনি নবীন কর্মকর্তাদের সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেন।
গতকাল চট্টগ্রামের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে নৌবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সমাপনী গ্রীষ্মকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে সালাম গ্রহণ শেষে এ নির্দেশনা দেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, নৌবাহিনীর মিডশিপম্যান ২০২২-বি ব্যাচ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০২৫-এ ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষে ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুযায়ী গ্রীষ্মকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ হয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২০২২-বি ব্যাচের ৪৪ জন মিডশিপম্যান এবং ২০২৫-এ ব্যাচের আটজন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ মোট ৫২ জন নবীন কর্মকর্তা কমিশন লাভ করেন। এর মধ্যে আটজন নারী এবং চারজন বিদেশি কর্মকর্তা রয়েছেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আরও বলেন, একবিংশ শতাব্দীর প্রগতিশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সমুদ্র সম্পদের সুরক্ষা, সমুদ্রে অপরাধ দমন ও সুশাসন বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক সহায়তায় দেশে-বিদেশে নৌবাহিনীর অংশগ্রহণ এবং ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় নৌবাহিনীর কর্মকা কে সাধুবাদ জানান। এ সময় তিনি পেশা হিসেবে দেশ সেবার এ মহান দায়িত্বকে বেছে নেওয়ায় নবীন কর্মকর্তা ও তাদের অভিভাবকদেরও আন্তরিক অভিনন্দন জানান। ভাষণের শুরুতে তিনি মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নৌ কমান্ডোদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
আইএসপিআর জানিয়েছে, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে কৃতী প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে পদক তুলে দেন। নবীন কর্মকর্তাদের মধ্যে মিডশিপম্যান মেহেদী হাসান মৃধা (এক্স), বিএন সেরা চৌকশ মিডশিপম্যান হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। মিডশিপম্যান মো. মেহেরাব হক তনি (এক্স), বিএন প্রশিক্ষণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘নৌ প্রধান স্বর্ণপদক’ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার অ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট রাজীব দত্ত (শিক্ষা), বিএন কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। এ ছাড়াও মিডশিপম্যান আবোহোরিরা ইলবাডাওয়ি আহমেদ আবদেলনাইম (এক্স) সাদ (সুদান আর্মি) সেরা চৌকশ বিদেশি মিডশিপম্যান হিসেবে এবারই প্রথমবারের মতো ‘বিএনএ আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। পরে সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান ব্রত নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাগণ, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।