জাতীয় সংসদ বহাল না থাকায় গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (এসআরও) জারি করে নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পাস করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাড়তি কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার যে সুযোগ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেওয়া হয়েছিল-নানা মহল থেকে এর সমালোচনা ও বিরোধিতার পরিপ্রেক্ষিতে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাবিত বিধানটি বাতিল করে বাজেট পাস করা হয়েছে। টানা ১৬ বছর পর এবার একেবারেই ভিন্ন আবহের মাধ্যমে বাজেট পাস করা হলো। ২ জুন প্রস্তাবিত এই বাজেটের বেশ কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে বাজেট পাস করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ বাজেট পাস করা হয়।
পরে অর্থ বিভাগের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে বাজেটের সংশোধনীগুলো তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা। পরে বক্তব্য দেন অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। বাড়তি কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার যে সুযোগ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেওয়া হয়েছিল। এতে নানা মহল থেকে তীব্র সমালোচনা ও বিরোধিতা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করে নতুন অর্থবছরের বাজেটে পাস করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর ফলে কালো টাকা সাদা করার পথ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৯১ হাজার ২৯১ কোটি টাকা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরেছি। আর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।’
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বিশেষ কর প্রদানের মাধ্যমে বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ প্রদর্শনসংক্রান্ত বিধান বিলোপ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পাবলিকলি ট্রেডেবল কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের অন্যূন ১০ শতাংশ শেয়ার প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বা ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ওই আয়ের ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সব প্রকার আয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে ওই করহার ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য সব পাবলিকলি ট্রেডেবল কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সব রকম আয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে ওই করহার ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
আয়করে আরও যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের করহার ১৫ শতাংশের স্থলে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। সম্পত্তি হস্তান্তর হতে কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর কর্তনের হার ৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশের স্থলে যথাক্রমে ৫ শতাংশ, ৩ শতাংশ ও ২ শতাংশ করা হয়েছে।
মূল্য সংযোজন করের যেসব পরিবর্তন এসেছে : রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর ৭ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঝুট হতে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তুলার উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তা কর্তৃক পরিচালিত বিউটি পারলারের স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। বলপয়েন্টের আমদানি পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। হার্টের রিং ও চোখের লেন্স আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
কাস্টমস শুল্কে যেসব পরিবর্তন এসেছে : সব ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানিতে ট্যারিফ মূল্যের পরিবর্তে ইনভয়েস মূল্যের ভিত্তিতে শুল্কায়ন ব্যবস্থা চালুর উদ্দেশ্যে বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ক্রুড পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ককে কমিয়ে ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নির্ধারিত ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ককে কমিয়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সৌরশক্তি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিকে আরও সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে সোলার ইনভেন্টরের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জারি করা হাসপাতাল কর্তৃক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও উপকরণ রেয়াতি সুবিধায় আমদানিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে আরও ১০টি আইটেমযুক্ত করা হয়েছে। ফলে জনগণের জন্য চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য করা যাবে। দেশে মানসম্পন্ন টায়ার উৎপাদনের জন্য টায়ার তৈরির অন্যতম কাঁচামাল টেকনিক্যালি স্পেসিফাইড ন্যাচারাল রাবারের (টিএসআর) আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।