সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

দেশের ইমেজ নষ্ট করলে জামিন বিবেচনা করব না

-------- প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ইমেজ নষ্ট করলে জামিন বিবেচনা করব না

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, দেশের ইমেজ সবার আগে। কারও লেখায় দেশের ইমেজ নষ্ট করলে আর জামিন বিবেচনা করব না। তিনি বলেন, ‘লিখুন, কিন্তু এ রকমভাবে কিছু করবেন না, যা একজন শিক্ষিত মানুষের জন্য শোভা পায় না।’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় এক আসামির জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা  আবেদনের শুনানিতে গতকাল প্রধান বিচারপতি এসব মন্তব্য করেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ভার্চুয়াল আপিল বিভাগ আবেদনের শুনানি গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে কটাক্ষ ও নেতিবাচক বিভিন্ন পোস্ট এবং ছবি বিকৃত করে ফেসবুকে পোস্ট ও শেয়ার করার অভিযোগে গোলাম সারোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলাটি হয় সিলেট থানায় গত বছর মার্চে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এ মামলায় গত বছর অক্টোবরে হাই কোর্ট রুল দিয়ে সারোয়ারকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ১৮ অক্টোবর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি শুনানির জন্য আসে। আদালতে আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ শুনানি করেন। শুনানিতে সারোয়ারের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এক বছর ধরে কারাগারে আছেন সারোয়ার। এই মামলায় এখন পর্যন্ত অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। তার হৃদযন্ত্রে চারটি স্টেন্ট পরানো আছে, স্বাস্থ্যগত কারণে জামিন চাওয়া হয়েছে। আদালত বলে, এত স্টেন্ট থাকার পরও আপনি এসব করেন? তখন আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১৪ মার্চ থেকে কারাগারে আছেন। প্রায় এক বছর ধরে বিনা বিচারে কারাগারে আছেন। অভিযোগপত্র হয়নি এখনো। হাই কোর্ট মূলত মেডিকেল গ্রাউন্ডে জামিন দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ভবিষ্যতে এগুলো করলে আর ছুটবেন (জামিন) না, যতই কথা বলুক। এসব বাড়াবাড়ি করে দেশের ইমেজ যদি নষ্ট করেন, দেশের ইমেজ হলো সবার আগে। আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১৮ অক্টোবর চেম্বার আদালত থেকে স্থগিতাদেশ (জামিন স্থগিত) দেওয়া হয়। তারপর পাঁচ মাস হয়ে গেছে। আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনি সতর্ক করবেন। আবার যদি আসে তারপর আর বেল (জামিন) হবে না। দেশের ইমেজ আপনারা নষ্ট করে দেবেন। আমেরিকায় তো মানুষ ‘স্যাটায়ার’ করে। কিন্তু আমাদের এখানকার মতো কুৎসিতভাবে লেখে না। যেসব ভাষা লেখে, একজন শিক্ষিত মানুষ কীভাবে এসব ভাষা ব্যবহার করতে পারে! তাহলে শিক্ষার দাম কী হলো?’’

এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, ‘শব্দ চয়নগুলো খুবই কুৎসিত।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এক দিন একজনেরটি পড়েছি।’ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এগুলো পড়া যায় না। শব্দ চয়ন এমন যে সবার সামনে বলাও মুশকিল হয়।’ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘লিখুন, কিন্তু এ রকমভাবে কিছু করবেন না, যেটি একজন শিক্ষিত মানুষের জন্য শোভা পায় না।’ শুনানি নিয়ে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে আদেশ দেয়।

আদেশের পর আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সিলেটে র‌্যাবের করা ওই মামলায় সারোয়ারকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। ফলে সারোয়ারের কারামুক্তিতে আইনগত বাধা নেই।

সর্বশেষ খবর