বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

এখন শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০ দিনের বর্ণাঢ্য আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

এখন শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গতকাল জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডান থেকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বর্ণিল আয়োজনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু করল বাংলাদেশ। গতকাল বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে শিশুদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক রাষ্ট্রীয় ১০ দিনের আয়োজন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার সঙ্গে এই আয়োজনে অতিথি ছিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ এবং ফার্স্ট লেডি ফাজনা আহমেদ। সশরীরে না থাকলেও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ছিলেন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদো সুগা এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সাংবাদিক স্যার মার্ক টালি। অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন শুধু আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে এ দেশকে আমরা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবই, ইনশা আল্লাহ। এটাই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা। স্বাধীনতার অর্ধশতক পরও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি যে সক্রিয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিহত করে দেশকে এগিয়ে নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্য  নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষার মর্যাদা অর্জনের যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, সে ধারাবাহিক সংগ্রামের সাফল্যের ফসলই আমাদের স্বাধীনতা। সেই সংগ্রামের পথ বেয়েই অর্জিত হয় স্বাধীনতা। তিনি বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, তার ওপর শত শত বছরের পরাধীনতার গ্লানি, শোষণ, বঞ্চনা, ক্ষুধা, দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের এ জনপদকে একটা পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার মতো কঠিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে। অসাধ্য সাধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অনেক স্বপ্ন ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। বাংলাদেশকে তিনি উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে  চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেট তাঁকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি এখনো দেশে-বিদেশে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে এ অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শুভ জন্মদিনে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সব অপতৎপরতা প্রতিহত করে প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। ‘মুজিব চিরন্তন’- এই মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সফররত মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পাঠানো চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদো সুগা এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ব্রিটিশ সাংবাদিক স্যার মার্ক টালির ভিডিও বার্তার মাধ্যমে পাঠানো বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। এ সময় অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা।

বিকাল সাড়ে ৪টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর আগেই জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানস্থলে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাড়ে ৪টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও তাঁর পত্নী রাশিদা খানমকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে এলে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত ও অভ্যর্থনা জানান। এর কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ সফররত মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ স্ত্রী ম্যাডাম ফাজনা আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে এলে তাঁদের অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১০০ শিশু-কিশোরী শিল্পীদের উপস্থাপনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে ১০ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তারা তিনটি গান পরিবেশন করে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের পর ‘মুজিব চিরন্তন’- মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে নির্মিত টাইটেল এমিনেশনের ভিডিও চিত্র পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চৌকস অফিসাররা আকাশে অসংখ্য বিমানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘১০০’ লেখা ফুটিয়ে তোলেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সম্মানিত অতিথি মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ, বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা এবং উদযাপন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের হাতে বঙ্গবন্ধুর তর্জনী নিয়ে তৈরি বিশেষ স্মারক উপহার ক্রেস্ট তুলে দেন উদযাপন বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ছাড়াও দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, বুদ্ধিজীবী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সামরিক-বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর মঞ্চটিও সাজানো হয়েছিল ভিন্নভাবে। মূল মঞ্চের চেয়ারেও রাখা হয়েছিল সামাজিক দূরত্ব। পেছনে এলইডি পর্দায় দেখা যায়, হাঁটতে হাঁটতে হাত নাড়ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  তাঁর হাসিমুখের পেছনে যেন নদীর ঢেউয়ের খেলা। মঞ্চের ওপর পাঁচটি সিঁড়ি যেন বাংলাদেশের পাঁচটি দশক পেরোনোর প্রতীকী নিদর্শন! এভাবেই সাজানো ‘মুজিব চিরন্তন’ আয়োজনের মঞ্চের সজ্জা। মঞ্চের ঠিক সামনেই ফুল দিয়ে সাজানো ও লেখা ‘মুজিব ১০০’। অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। মুখে মাস্ক পরে শিশুরা জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু করে তাদের পরিবেশনা এবং একে একে কয়েকটি দেশের গান শোনা যায় তাদের কণ্ঠে। ‘আমি জাতির পিতার স্বপ্নের দেশে জন্ম নিয়েছি’ গানটি দিয়ে শেষ হয় শিল্পকলা একাডেমির শিশুদের এই পরিবেশনা।

১০ দিনের এই আয়োজনে আরও যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং।

বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য স্বপ্ন পূরণ হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষের সুন্দর জীবন চেয়েছিলেন। সহায়-সম্বলহীন, অসহায়, বঞ্চিত ভাগ্যহারা-হতভাগ্যদের সহায় হতে চেয়ে ছিলেন। ইনশা আল্লাহ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উন্নত সমৃদ্ধ এবং মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে। কেউ না খেয়ে থাকবে না, কেউ গৃহহীন থাকবে না। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটবে, বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য স্বপ্ন পূরণ হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি স্মৃতি কমপ্লেক্সে আয়োজিত শিশু-কিশোর সমাবেশে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। জাতির পিতার সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুননেছা ইন্দিরা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য রাখেন। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র স্বপ্নীল বিশ্বাস বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি পরিবেশন করে এবং অপর শিশু ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী আনুসুয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। দেশের সব শিশুদের পক্ষে তৃতীয় শ্রেণির শিশু সাফওয়ান এবং চতুর্থ শ্রেণির রুবাবা জামান বক্তৃতা করে। পরে শিশুদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ঐক্যবদ্ধ থেকে সোনার বাংলা গড়ায় প্রত্যয় : বর্ণিল আয়োজনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে গতকাল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, দোয়া, খাবার ও বস্ত্র বিতরণ, র‌্যালি, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোকচিত্র, মুক্তিযুদ্ধের দেয়াল উদ্বোধন, আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব কর্মসূচিতে বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে তাঁর অবদান ও সংকট অতঃপর শেখ হাসিনার পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের চিত্র উপস্থাপিত হয়। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ায় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

জন্মবার্ষিকীতে সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল এ সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সকাল সাড়ে ১১টায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ দলের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ওবায়দুল কাদের বলেন, সব সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে মোকাবিলা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করাই হবে আজকের শপথ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাতির মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের শক্তিই নিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ নির্মাণের দোরগোড়ায়। এরপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে মূল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। এর আগে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নাকিব আহমেদ চৌধুরী শ্রদ্ধা জানান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে শ্রদ্ধা জানান কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান এমপি, শেখ হেলাল এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এস এম কামাল হোসেন, হাবিবুর রহমান সিরাজ, সায়েম খান, শাহাবুদ্দিন ফরাজি, আবদুল আউয়াল শামীম, শেখ সারহান নাছের তন্ময় এমপিসহ জেলা ও উপজেলার নেতারা।

সকালে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতির পিতার ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এদিন ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরসহ দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শিশু সমাবেশ, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়েছে সেখানে। জাতির পিতার জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় রাত ১২টা ১ মিনিটে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কেক কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের শুভ সূচনা করেন।

রাজধানীর আজিমপুরে এতিমখানায় বিশেষ দোয়া ও এতিমদের মাঝে বস্ত্র, খাবার ও করোনা প্রতিরোধসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ উপকমিটি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ কৃষক লীগের উদ্যোগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কৃষক সমাবেশ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল এবং দরিদ্র কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। উত্তরায় ‘স্বাধীনতার মহানায়ক’ শীর্ষক আলোচনা, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, কেক কাটা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবীব হাসানের সভাপতিত্বে এতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সরওয়ার বাবুর তত্ত্বাবধানে পুরান ঢাকায় পথশিশুদের মাঝে খাদ্য বিতরণ, শিশু নাট্য প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্রে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের দেয়াল উদ্বোধন, আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়াও ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগসহ দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন নানা আয়োজনে দিনটি উদযাপন করে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেখানে র‌্যালি, কেক কাটা ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুল হাই, সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর হোটেল সুন্দরবনে কোরআন খতম, দোয়া মাহফিল, এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ এবং কেক কাটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সায়দাবাদ মহাখালী ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ৩২ নম্বর সংলগ্ন রোডে সমাবেশ ও আলোচনার আয়োজন করে। পরে সেখানে কেক কেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে জাতীয় ও রেড ক্রিসেন্ট পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ভবনে ভবনে আলোকসজ্জা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শিশু কিশোরদের আলোচনা সভা ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিকের উদ্যোগে ওয়ার্ডের মেরাজনগর ও মোহাম্মদবাগ মিলাদ, আনন্দ র‌্যালি, অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ এবং কেক কাটা হয়। ওয়ারীতে আশিকুর রহমান চৌধুরী লাভলুর নেতৃত্বে থানা আওয়ামী লীগ বিশাল আকৃতির কেক কেটে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করেন। ঢাকা উত্তর সিটির ৪২ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আনছার মিন্টুর উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভা, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া এ কে এম রহমতুল্লাহ কলেজ, বেরাইদ গণপাঠাগার, বেরাইদ মুসলিম হাইস্কুল, রওশনআরা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, আলহাজ রাহীমুল্লাহ মোল্লা দাখিল মাদরাসা ও এতিমখানা, বেরাইদ মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদরাসা, শতদল জুনিয়র হাইস্কুল, বেরাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেরাইদ মডেল স্কুল, ফকিরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্যারাডাইজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আলফালাহ আইডিয়াল স্কুল, আবদুল মতিন একাডেমি স্বতন্ত্রভাবে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করে। এদিকে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ১০০ জন কোরআনে হাফেজের মাধ্যমে ১০০ বার কোরআন খতম করা হয়। কোরআন খতম শেষে জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম মসজিদে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এতে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ। এ ছাড়া সকাল ৮টায় তেজগাঁও গির্জায়, সকাল ৯টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করে।

সর্বশেষ খবর