শুক্রবার, ২ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
শোক প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী

দুর্দিনে আওয়ামী লীগের পাশে ছিলেন জয়নুল হক সিকদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্দিনে আওয়ামী লীগের পাশে ছিলেন জয়নুল হক সিকদার

চরম দুর্দিনে আওয়ামী লীগের পাশে ছিলেন সিকদার গ্রুপ ও ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা

জয়নুল হক সিকদার।

গতকাল জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের উদ্বোধনী বৈঠকে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সিকদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য পারভীন হক সিকদারের পিতা জয়নুল হক সিকদার শুধু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের যত ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করা দরকার তিনি করেছেন। তিনি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে অসহায় মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে অনেক জনহিতকর কাজ করে গেছেন। এ ছাড়া চরম দুর্দিনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছেন শিল্পপতি জয়নুল হক সিকদার। এমন মানুষগুলোর চলে যাওয়া সত্যিই আমাদের জন্য খুবই বেদনার, দুঃখজনক। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বেলা ১১টায় অধিবেশন শুরু হলে বর্তমান সংসদের সদস্য সদ্য প্রয়াত মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীসহ অন্যদের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এর ওপর আলোচনা শেষে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। প্রয়াতদের রুহের মাগফেরাত ও শান্তি কামনায় ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন শেষে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া। উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ছাড়াও অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, নুরুল ইসলাম নাহিদ, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, নেসার আহমেদ, এনামুল হক, জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা, পীর ফজলুর রহমান ও বিএনপির হারুনুর রশীদ। মরহুম মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনার দুঃসময়ে আমরা অনেক সংসদ সদস্যকে হারিয়েছি, এটাই সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক। মাহমুদ উস সামাদ একজন ভালো ও দক্ষ সংগঠক ছিলেন। শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের মহাসচিব হিসেবে সারা দেশে তিনি শিশুদের সচেতনতা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত করার কাজ করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে সিলেটের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার যখন গঠিত হয়, তখন থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন মরহুম এইচ টি ইমাম। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এইচ টি ইমাম একজন সফল আমলা হলেও রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। তাঁর মতো গুণী লোকের মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। শোক প্রস্তাবে থাকা সদ্য প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে নিয়ে বিএনপি নেতা হারুনুর রশীদের কিছু মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বারবার দলবদলের অভ্যাস ছিল। একটু সরকার ঘেঁষাই ছিলেন। তারপরও বলব, তিনি একটা ট্যালেন্টেড মানুষ ছিলেন। কিন্তু তিনি দেশপ্রেম নিয়ে তাঁর মেধাকে কাজে লাগালে হয়তো দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতেন, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী হাসনা মওদুদকে নিজে ফোন করে কথা বলা এবং শোক বার্তা প্রদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কখনো ছাত্রলীগ করেননি। তিনি সবসময় একটু সরকার ঘেঁষাই ছিলেন। তিনি পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের মেয়ের জামাই ছিলেন বলে তাঁর প্রতি সবার সহানুভূতি ছিল। কিন্তু তাঁর কিছু কিছু কাজ একটু ভিন্ন ধরনের ছিল। বাংলাদেশের কিছু গোপন তথ্য পাচারের কারণে তাঁকে একবার গ্রেফতারও করা হয়। কবি জসীমউদ্দীন সাহেব নিজে এসেছিলেন আমাদের বাসায়। এসে বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করলে তখন তাঁকে (মওদুদ) মুক্তি দেওয়া হয়। মওদুদ আহমদের বিভিন্ন সময় দল পরিবর্তনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব সময় তিনি দলবদল করতে পছন্দ করতেন। যখন আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ, সেই সময়ে উনি ১৯৬৯ সালে আমাদের সঙ্গে মিশে গেলেন। ’৭৫-এর পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দিলেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি ছিলেন। জেনারেল এরশাদ সাহেব তাঁকে ক্ষমা করে দিয়ে মন্ত্রিপরিষদে আইনমন্ত্রী করল। এরশাদের পতনের পর আবার তিনি বিএনপিতে যোগদান  করলেন। রাজনীতিতে বারবার দলবদল তাঁর অভ্যাস ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সদ্য প্রয়াত জনকণ্ঠ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে চরম নির্যাতনের শিকার হয়েও দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ কখনো নীতির প্রশ্নে আপস করেননি, বরং অন্যায়ের প্রতিবাদ করে গেছেন।

যাঁদের নামে শোক প্রস্তাব গৃহীত : বর্তমান সংসদের সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম), সিকদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য পারভীন হক সিকদারের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল হক সিকদার, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আমান উল্লাহ, সাবেক গণপরিষদ ও সংসদ সদস্য তোয়াবুর রহমান, সাবেক এমপি আবদুল মজিদ ম-ল, সাবেক এমপি মুনসুর আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জনকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ, ভাষাসৈনিক আলী তাহের মজুমদার, কলামিস্ট, গবেষক, সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, প্রজন্ম ’৭১-এর সাবেক সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর বিশিষ্ট ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আবদুল হাই, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহর সহধর্মিণী ও তেজগাঁও কলেজের সাবেক অধ্যাপক মাহমুদা বেগম, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের প্রবীণ অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, বিশিষ্ট অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলু, মার্কিন মিশনারি ও নটর ডেম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফাদার জে এস পিশোতো প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর