শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা হচ্ছে। প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে গাছ কাটা। রেস্টুরেন্ট স্থাপন ও নতুন করে হাঁটার রাস্তা বানাতে বিপুলসংখ্যক গাছ কাটা শুরু হয়েছে। উদ্যানের বড় অংশজুড়ে শুরু হয়েছে স্থাপনা নির্মাণকাজও। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে চলছে প্রতিবাদ। উদ্যানে রেস্টুরেন্ট স্থাপনে গাছ কাটা বন্ধ করতে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী। তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গাছ কাটার বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ‘আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে, পশ্চিম-দক্ষিণ প্রান্তের একাধিক জায়গায় গাছ কেটে পাশেই ফেলে রাখা হয়েছে। কিছু গাছ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গতকালও শ্রমিকদের গাছ কাটতে দেখা গেছে। এ ছাড়া উদ্যানের বহু গাছ লাল চিহ্ন দিয়ে কাটার জন্য নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। কয়েক মাস আগেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাটা হয়েছে মাঝারি আকৃতির প্রায় অর্ধশত গাছ। গাছ কাটার প্রতিবাদে গতকাল গৌরব-৭১ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে এই ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার আহ্‌বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য উদ্যানের ভিতর গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। সাতটি রেস্টুরেন্ট করার লক্ষ্যে স্থাপনার কাজ শুরু হয়েছে। বিষয়টিতে আমরা উদ্বিগ্ন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শন শেষে তারা বলেছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেস্তোরাঁ বানানোর উদ্দেশে সারি সারি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গতকাল বিক্ষোভ করেছে ‘পরিবেশ বীক্ষণ’ নামের একটি সংগঠন। বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কবি নজরুল কলেজের সাবেক সভাপতি দীপক শীলের সভাপতিত্বে ও বর্তমান সভাপতি শামীম হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তৃতা করেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ। তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উন্নয়নের নামে গাছ গাটা বন্ধ করতে হবে। বিক্ষোভে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি সুমাইয়া সেতু, ঢাকা কলেজের সভাপতি জুবায়ের প্রধান প্রমুখ। এ ছাড়া চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড়। পরিবেশ অধিকারকর্মী মোকাররম হোসেন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে অরাজকতা বন্ধ হোক। কারা উদ্যানের ভিতর হোটেল বানানোর অনুমতি দিল? তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

রাজধানী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটার প্রতিবাদে গতকাল গৌরব-৭১ নামে একটি সংগঠন শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে সমাবেশ করে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, শুধুই একটি গাছ নয়। এটি একটি অক্সিজেন তৈরির প্ল্যান্ট। সে অক্সিজেন তৈরি করছে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড টেনে নিচ্ছে। অর্থাৎ বিনামূল্যে বিষ টেনে নিয়ে অক্সিজেন দিচ্ছে। অথচ, সেই গাছ আমরা কেটে ফেলছি কারও ইট আবার কারও টাইলসের মার্কেটিং করার জন্য।

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কেটে রেস্টুরেন্ট তৈরি বন্ধ করতে ৪৮ ঘণ্টার সময় দিয়ে আইনি নোটিস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শামিম আখতার ও চিফ আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশ-এর মীর মনজুর রহমানকে ই-মেইলে এ নোটিস পাঠানো হয়। নোটিসে উল্লেখ করা হয়- এই তিন কর্মকর্তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কেটে রেস্টুরেন্ট তৈরির কাজ বন্ধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে। এদিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আধুনিক নগর উপযোগী সবুজের আবহে গড়ে তুলতে, দেশি-বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছু গাছ কাটা হলেও ১ হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর