সোমবার, ৩১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

এনআইডি অন্য দফতরে গেলে জটিলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এনআইডি অন্য দফতরে গেলে জটিলতা

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা সরকারের অন্য দফতরের হাতে গেলে জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেছেন, এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা উচিত। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এনআইডি এক দফতরে থাকলে আর ভোটার তালিকা ইসির হাতে থাকলে কোনো জটিলতা হবে কি না এমন এক প্রশ্নে সিইসি বলেন, অসুবিধা হবে। কারণ ইসি ভোটার তালিকা তৈরি করে। ভোটারের বয়সটা নির্ধারণ করে। বহুদিন থেকেই এটি ইসি করে আসছে। এখন ইসি ভোটার তালিকা করবে আর এনআইডি থাকবে অন্যদের হাতে। এতে ওই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ‘সাবঅর্ডিনেশন’ বা ‘সুপারিয়রিটি’ এসে যায়। যেটা সংবিধান গ্রহণ করে না। নির্বাচন কমিশন আলাদা থাকবে। অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ রকম দাফতরিক যোগাযোগ থাকবে না। এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে যাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমার সঙ্গে একটা উৎকণ্ঠা নিয়ে দেখা করেছেন। চিঠির বিষয়টি নিয়ে কমিশন সভায় আমরা আগেই আলোচনা করেছি। আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালককে দায়িত্ব দিয়েছি। পুরো বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করার। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কমিশনের যুক্তিগুলো ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও এ বিষয়ে তাদের যুক্তি তুলে ধরতে বলেছি। কমিশন সচিব সেই প্রতিবেদন কেবিনেট সচিবকে প্রদান করবেন। কেবিনেট ডিভিশনকে চিঠি দিয়ে আমাদের অবস্থানটা জানানো হবে। সিইসি বলেন, সরকারের এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে কমিশন বা কমিশন সচিবালয়ের সচিবের সঙ্গে আগে কখনো আলোচনা করা হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের থেকে কোনো পরামর্শ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে মাত্র। একটি জটিল কাজ। চিঠি দিলেই এটি হয়ে যাবে, তা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে অবকাঠামো ও জনবলসহ অনেক কিছুই জড়িত রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা উচিত। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা তৈরি করার ভিত্তিতেই জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছে। ভোটার তালিকার বাই-প্রডাক্ট হিসেবে এনআইডি হয়েছে। অন্য কোনো বিভাগ বা ডিপার্টমেন্ট এনআইডি করেনি। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন কাজ করেছিল। সেটি করতে গিয়ে বাই-প্রডাক্ট হিসেবে এটি এসেছে। কাজেই জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আমাদের আলাদা কোনো অ্যাফোর্ড দিতে হয়নি। কেবল একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। ডাটাবেজের মাধ্যমেই জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়। কেন সরকার নিতে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, সরকারের যুক্তি কোনো নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে না। জাতীয় পরিচয়পত্রের বিষয়টি অন্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগে থাকে। কোথাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কোথাও আইন মন্ত্রণালয় বা কোথাও স্থায়ী মন্ত্রণালয় থাকে। আবার কোনো কোনো দেশে কোথাও কিছুই থাকে না। তিনি বলেন, বহু দেশেই ভোটার রেজিস্ট্রেশন হয় না। কারণ, তাদের জন্ম থেকেই রেজিস্ট্রেশন হয়ে যায়। তাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার হয়ে যায়। আমাদের দেশে শিশুদের জন্মতারিখ নির্ধারণের অবকাঠামো না থাকায় ভোটার তালিকার প্রয়োজন হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এই ব্যবস্থা। কাজেই অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের তুলনা করলে হবে না।

তিনি জানান, আমাদের যুক্তি হচ্ছে- কমিশনের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে কোনো অসুবিধা নেই। আমাদের মাধ্যমেই সবাই সার্ভিস পাচ্ছে। তারপরও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তাভাবনা কী আছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব বা সরকারের অন্যান্য পর্যায়ে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা হবে।

ভাবনা-চিন্তা করে যেটা ভালো হবে সেটাই সরকার করবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এনআইডি অন্য বিভাগের কাছে গেলে জটিল হবে। সরকার যখন চিঠি দিয়েছে, তখন নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে তারা একই সঙ্গে আলোচনা করবে বলেও মনে করেন সিইসি।

এর আগে সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুজ্জামান তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, এনআইডি ভোটার তালিকার একটি বাই প্রোডাক্ট। এই কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিলে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকার মধ্যে জটিলতা তৈরি হবে। যুক্তিগুলো সরকারের কাছে পৌঁছালে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা হতে পারে। এখন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইসি। এ কাজটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে স্থানান্তর করা যায়, এমন মত দিয়ে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে ইসির পরিবর্তে এনআইডি দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০০৭ সাল থেকে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন কাজের অংশ হিসেবে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে আসছে ইসি। ইসিকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর