শনিবার, ৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

বাজেটে সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন নেই : বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি দাবি করেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হয়নি। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাজেটের ওপর দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ বাজেটে বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হয়নি। বিএনপি মনে করে এ বাজেট মহামারীকালে মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে ও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তায় চলমান স্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্রহণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের পেশ করা বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ মো. শামসুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের কাছে এ সরকারের জবাবদিহি নেই। সেজন্যই সাধারণ মানুষ বিশেষ করে যারা দিন আনে দিন খায় তাদের খুশি করার কোনো দরকার নেই। যাদের খুশি করলে দুর্নীতি করতে পারবে ঠিক তাদের খুশি করতেই এ বাজেট দেওয়া হয়েছে। এটি তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট। এ বাজেটে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের অর্থনীতি অনুপস্থিত। বৈষম্যহীন, জনবান্ধব, কল্যাণমুখী ও জবাবদিহিমূলক একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই দেশে ‘জন-আকাক্সক্ষার’ বাজেট প্রণয়ন সম্ভব বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, জনগণকে করোনা মহামারীর সংকট থেকে রক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটে দিকনির্দেশনা নেই। অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটের শিরোনাম করেছেন জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথ। বাজেট নাকি দেওয়া হয়েছে মানুষের জন্য। এটি শুনতে ভালো শোনায়। কিন্তু বাজেটে দিন আনে দিন খায় এমন জীবন-জীবিকা রক্ষার নগদ অর্থের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। এখানে পুরাতন ত্রুটিপূর্ণ ব্যাংকনির্ভর ঋণের কথাই বলা হয়েছে। এ বাজেটে হতদরিদ্র ও শ্রমিকদের প্রত্যাশিত প্রণোদনা উপেক্ষিত হয়েছে। অনেক দেশে প্রণোদনার বরাদ্দ ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু সেখানে সরকারের বরাদ্দ ২ শতাংশের নিচে। এটা লোক দেখানো প্রণোদনা। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সম্প্রসারণের নামে যে সামান্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা নিতান্তই অপ্রতুল। মধ্যবিত্তদের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি যা মধ্যবিত্তকে হতাশ করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বেকার ও শহর থেকে গ্রামে চলে যাওয়া মানুষজন ও প্রবাসীদের সহায়তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব। স্বাস্থ্য খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাত নিয়ে এত কথা বলা হলেও এ খাতে বরাদ্দ জিডিপির সেই ১ শতাংশের মধ্যেই আছে। এটা খুবই দুঃখের কথা। এ বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতে চাহিদা মিটবে না। স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫% বরাদ্দ করতে হবে। করোনা টিকা প্রদানের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। সরকার ২৫ লাখ মানুষকে মাসে টিকা দেওয়ার কথা বলেছে। সেটা কবে থেকে কার্যকর হবে, কীভাবে হবে সে সম্পর্কে বাজেটে কিছু নিশ্চিত করে বলা হয়নি। বাজেটে এসএমই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান এ খাতে। কিন্তু সরকারের প্রণোদনা পেলেন মূলত বড় শিল্পমালিকরা। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য অনেক আগেই মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। গত এপ্রিলে গড়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এবারের বাজেটে তা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবভিত্তিক নয়। সরকারের প্রক্ষেপণ আর বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বাজেটে মাছ চাষ খাতে প্রস্তাবিত কর বাতিল এবং ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের আয়সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধির দাবিও জানান তিনি। করপোরেট করছাড় প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, করপোরোট করহার কমানো হয়েছে, ব্যবসায়িক টার্নওভার করহারও কমেছে। অর্থমন্ত্রী দুই হাত ভরে দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের। তিনি নিজেও ব্যবসায়ী। বাজেটে হতাশ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা। খুশি ব্যবসায়ী মহল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর